শীর্ষ খবর

পাখির বন্ধু পুলিশ!

এবার পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করছেন চুয়াডাঙ্গার ট্রাফিক পুলিশের সেই সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তিনি পাখিদের খাবার দিয়ে ‘পাখির বন্ধু’ খ্যাতি পেয়েছেন। এবার তিনি সেই পাখিদের জন্য বাসা বানিয়ে দিচ্ছেন।
Chuadanga.jpg
পাখির জন্যে বাসা বানাচ্ছেন চুয়াডাঙ্গার ট্রাফিক পুলিশ সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। ছবি: স্টার

এবার পাখির অভয়াশ্রম তৈরি করছেন চুয়াডাঙ্গার ট্রাফিক পুলিশের সেই সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস। ইতোমধ্যে তিনি পাখিদের খাবার দিয়ে ‘পাখির বন্ধু’ খ্যাতি পেয়েছেন। এবার তিনি সেই পাখিদের জন্য বাসা বানিয়ে দিচ্ছেন।

মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাস জেলার পাঁচটি উপজেলায় ৩৯টি স্থাপনায় পাখিদের অবাধ বিচরণে পাঁচ হাজার মাটির কলস ও বাঁশের তৈরি বাসা বানিয়ে দেওয়ার কাজ করছেন। এসব বাসায় ২০-২৫ হাজার পাখি বাস করতে পারবে বলে মনে করছেন তিনি।

তিনি টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘পুলিশ লাইন্স, পুলিশ সুপারের বাসভবন, পুলিশ পার্কসহ শহরে পাখিদের আনাগোনার স্থানগুলোতে পাখিদের অভয়াশ্রম তৈরিতে ব্যস্ত আছি।’

পাখিদের সঙ্গে মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসের সখ্যতা গড়ে ওঠে গত মার্চে করোনার সময়। করোনার কারণে শহরের খাবারের দোকানগুলো বন্ধ হয়ে গেলে বিপাকে পড়ে সেখানকার শত শত পাখি।

তিনি বিষয়টি লক্ষ্য করলেন যে, এসব পাখিরা প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন হোটেল, কনফেকশনারির আশেপাশে ভিড় করে থাকতো। সকালেই রাস্তজুড়ে থাকতো পাখিদের কিচিরমিচির।

সেসময় তিনি শহীদ হাসান চত্বরে পাখিদের মাঝে-মধ্যে খাবার দিতে শুরু করেন। কিছুদিনের মধ্যেই পাখিরা তার বন্ধু হয়ে উঠে। সকালে তাকে দেখলেই দল বেঁধে ছুটে আসতে থাকে পাখিরা।

জানিয়েছেন, তিনি বিভিন্ন সময় কাজের ফাঁকে পাখিদের চাল, শস্যদানা, চানাচুর, বিস্কুট খেতে দিতে থাকেন। এরপর একে একে শহরের আরও কয়েকটি এলাকায় তিনি খাবার দিতে শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি হয়ে ওঠেন প্রায় হাজার দুয়েক পাখির বন্ধু।

পাখিদের আহারের সময় তার সঙ্গী হয় মৃত্যুঞ্জয়ের প্রথম শ্রেণিতে পড়া কন্যা শ্রেয়া বিশ্বাস। স্কুল বন্ধ থাকায় সে বাবার সঙ্গে পাখিদের খাবারের কাজে অংশ নিচ্ছে।

পাখিপ্রেমী মৃত্যুঞ্জয় বিশ্বাসমাগুরা সদর উপজেলার চেঙ্গারডাঙ্গা গ্রামের প্রবিত বিশ্বাসের ছেলে। চার ভাই ও দুই বোনের মধ্যে তিনি মেজো। ২০১১ সালের ৩ জুলাই তিনি পুলিশে যোগ দেন। সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশের পর তিনি ২০১৭ সালের ১৯ জানুয়ারি চুয়াডাঙ্গা ট্রাফিক পুলিশে বদলি হন।

তিনি বলেছেন, ‘পাখির প্রতি ভালোবাসা হঠাৎ নয়। ছোটবেলায় পাখি পুষতাম।’

তার মতে, তিনি যেসব পাখিদের জন্যে বাসা বানাচ্ছেন এর একটি অংশ খুব শিগগির ডিম দেবে। তাই তিনি তাদের বাসা বানাতে শুরু করেছেন।

‘পাখিদের এই বাসা তিনি শহরের বিভিন্ন গাছের ডালে নিজেই বেঁধে দিচ্ছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেছেন, এ কাজে একটি স্লোগান বেছে নিয়েছি। তা হলো— পুলিশের বিচরণ যেখানে, পাখিদের অভয়ারণ্য সেখানে।’

চুয়াডাঙ্গার পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘পুলিশের কাজ শুধু মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা— এমন সীমাবদ্ধ ভাবনা অতিক্রম করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।’

পাখিদের প্রতি তার ভালোবাসার এই উদ্যোগ অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে বলেও মন্তব্য করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।

পুলিশ কর্মকর্তা মৃত্যুঞ্জয়ের এমন উদ্যোগ জীববৈচিত্র্য ও প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন পরিবেশ রক্ষা আন্দোলন চুয়াডাঙ্গা শাখার সভাপতি পরিবেশবিদ অধ্যাপক সিদ্দিকুর রহমান।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় পাখিদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। বর্তমান বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে পাখিদের আবাসস্থল ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। পাখিরা মারাত্মক খাদ্য সংকটের মধ্যেও পড়তে শুরু করেছে।’

তার মতে, ট্রাফিক সার্জেন্ট মৃত্যুঞ্জয় যুগোপযোগী ও প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।

Comments

The Daily Star  | English
Sakib Jamal. Photo: Crain's New York Business. Image: Tech & Startup

Bangladeshi Sakib Jamal on Forbes 30 under 30 list

Bangladeshi born Sakib Jamal has been named in Forbes' prestigious 30 Under 30 list for 2024. This annual list by Forbes is a compilation of the most influential and promising individuals under the age of 30, drawn from various sectors such as business, technology, arts, and more. This recognition follows his earlier inclusion in Crain's New York Business 20 under 20 list earlier this year.

6h ago