শ্রীপুরে মহাসড়কের পাশে ময়লার স্তূপ

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় গত পাঁচ বছরে বেশি সময় ধরে বর্জ্য ফেলে আসছে শ্রীপুর পৌরসভা। এতে প্রতিনিয়ত পথচারী, যানবাহনের যাত্রী ও আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন।
এতে গড়গড়িয়া খালে পানির প্রবাহও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বিষাক্ত পানি বর্ষাকালে খালে জলাবদ্ধতা ও শুষ্ক মৌসুমে আটকে গিয়ে দুর্গন্ধ আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। এবারের নির্বাচনসহ মোট চার বার শ্রীপুর পৌর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তারপরও ময়লা ফেলার সমস্যা সমাধান এখনো হচ্ছে না।
গত রোববার গড়গড়িয়া খালের পাশে গিয়ে দেখা গেছে, মহাসড়কের ফুটপাত দখল করে আবর্জনার স্তূপ। স্বপন ও ইসমাইল নামে দুই জন ভ্যানগাড়ি নিয়ে এসে সহযোগীদের মাধ্যমে বর্জ্য ফেলছে। তারা জানান, প্রতিদিন পৌরসভার মাধখলা এলাকার বিভিন্ন বাসা-বাড়ি থেকে কমপক্ষে ১৫টি ভ্যানে বর্জ্য এনে সেখানে অপসারণ করে থাকেন। এ ছাড়া, দোকানপাট ও কারখানার বর্জ্যগুলোও নিজ নিজ তত্ত্বাবধানে সেখানে ফেলা হয়।
গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি বাজারের কাঁচামাল বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান, বর্জ্যের দুর্গন্ধে বাজারেও বসে থাকা যায় না। ক্রেতা-বিক্রেতা সকলেরই নাভিশ্বাস অবস্থা। বর্জ্য ফেলার স্থান থেকে আধা কিলোমিটার এলাকাজুড়ে মানুষকে নাকে-মুখে রুমাল চেপে থাকতে হয়।
শ্রীপুর নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আহ্বায়ক মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘সঠিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ও মহাসড়কের পাশে বর্জ্য ফেলে পরিবেশ দূষণ না করা পৌরবাসীর অনেকদিনের দাবি। পৌরসভার বয়স দেড় যুগের বেশি। এ সময়ে দাঁড়িয়ে আমাদের জনসেবামূলক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পরিবেশ দূষণের শিকার হতে হয়। এর চেয়ে বড় লজ্জা নেই।’

স্থানীয় বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘পৌর কর্তৃপক্ষ নিজেই ময়লা ফেলতে নিষেধ করে, আবার নিজেই সেখানে ময়লা ফেলছে। আর যেখানে ময়লা ফেলা হচ্ছে, সে স্থানটি পৌরসভার প্রবেশদ্বার। এর আশপাশে কয়েকটি শিশু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। এ ঘটনায় শুধু মানবাধিকার নয়, শিশু অধিকারও লঙ্ঘিত হচ্ছে। খালের পানির প্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। মহাসড়কের পাশে ও খালের পানিতে ময়লা ফেলার প্রতিবাদে বছরে কয়েকবার স্থানীয় মানুষ ও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে মানববন্ধন করা হয়। কিন্তু, কোনো সুফল মিলছে না।’
ঢাকা-ফুলবাড়ীয়া সড়কের আলম এশিয়া পরিবহনের চালক মজিবুর রহমান বলেন, ‘ঢাকা থেকে ফেরার পথে দেখা যায় সড়কের ওপর অনেক সময় ময়লা পড়ে থাকে। গড়গড়িয়া এলাকায় সড়কের ফুটপাত ময়লার দখলে থাকে। দুর্গন্ধে বাসযাত্রীদেরও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়।’
স্থানীয় বাসিন্দা রীনা পারভীন জানান, রাত-দিন বিরামহীন ময়লার দুর্গন্ধ লেগেই থাকে। সুগন্ধি স্প্রে করেও কাজ হয় না। শিক্ষার্থী তাসমিয়া জাহান জানান, পৌরসভার ময়লার দুর্গন্ধ প্রতিনিয়ত পরিবেশকে বিষিয়ে তুলছে।
এ বিষয়ে গাজীপুরের সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফ উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘পৌরসভা বিনা অনুমতিতে মহাসড়কের পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলছে। এতে আমরা ভীষণ বেকায়দায় পড়েছি। সড়কের একটা অংশে ময়লা ফেলায় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমরা পৌর কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জেলা উন্নয়ন সমন্বয় সভায় বিষয়টি একাধিকবার উত্থাপন করা হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান হবে বলেও পৌর কর্তৃপক্ষ একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে।’
গাজীপুর পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আব্দুস ছালাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বেশ কয়েকবার পৌর প্রশাসনকে ময়লা না ফেলার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, তারা কর্ণপাত করেনি। অবশেষে পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্টকে তাদের উদাসীনতার বিষয়ে জানিয়ে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি শ্রীপুর পৌরসভা নির্বাচন। ওই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে এনফোর্সমেন্টে হাজির হয়ে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। কিন্তু, তারা হাজির হননি। নির্বাচনের পর আবার তাদেরকে এনফোর্সমেন্টে হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ পাঠানো হবে।’
শ্রীপুর পৌরসভার সচিব মো. দলিল সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘ময়লা ফেলার জন্য পৌরসভার কোনো জায়গা নেই। অনেক খোঁজাখুঁজি করে অবশেষে ১১০ শতক জায়গা ব্যবস্থা করা হয়েছে। আগামী ১৬ জানুয়ারি পৌরসভা নির্বাচনের পর ওই জায়গায় ময়লা ফেলার জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে। তা ছাড়া, পরিবেশ অধিদপ্তরের এনফোর্সমেন্টের দপ্তরে পৌরসভার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়েছে।’
Comments