দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি: রাষ্ট্রপতি

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি সরকারি কর্মসূচির কারণে দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি।
একাদশ জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনে বক্তব্য দেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ। ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল বিক্রয় এবং নগদ অর্থ বিতরণ ইত্যাদি সরকারি কর্মসূচির কারণে দেশে একটি মানুষও করোনাকালে না খেয়ে থাকেনি।

আজ সোমবার একাদশ জাতীয় সংসদের ২০২১ সালের প্রথম অধিবেশনে ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।

গতবছর জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে যে সকল বিশিষ্ট ব্যক্তিদের জাতি হারিয়েছে তাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি।

ভাষণে তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ‘রূপকল্প ২০২১’ ও ‘রূপকল্প ২০৪১’ গ্রহণ করে। ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা সফলতার সঙ্গে বাস্তবায়নের মাধ্যমে জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন অভীষ্টের লক্ষ্যমাত্রাসমূহ নির্ধারিত সময়ের আগেই অর্জন করে। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের শ্রেণিতে উত্তরণের সকল যোগ্যতা অর্জন করেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল।’

দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখা, করোনা মহামারি মোকাবিলা ও সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনায় সরকারের দক্ষতার বিষয়টি তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘গত এক দশকে গড়ে ৬ দশমিক ৬ শতাংশ ও পর পর তিন বছর ৭ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি অর্জনের পর বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির এ ধারাবাহিক অর্জন বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। নভেল করোনাভাইরাস মহামারিতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি কিছুটা হ্রাস পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ২৪ শতাংশে। তবে একইসময়ে মাথাপিছু জাতীয় আয় ৮ দশমিক ১২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬৪ মার্কিন ডলারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার পাশাপাশি মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রাখা সম্ভব হয়েছে।’

‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ প্রায় এক কোটি মানুষের কর্মসংস্থান, অতিরিক্ত ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য ও সেবা উৎপাদন এবং রপ্তানির মাধ্যমে ২০৪১ সাল নাগাদ দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপনের জন্য কাজ করছে,’ যোগ করেন তিনি।

এ পর্যন্ত স্বেচ্ছাপ্রণোদিত তিন হাজার ৪৭৬ জন রোহিঙ্গাকে ভাসানচরে স্থানান্তর করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য ঢাকায় ৫৩৩টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। মাননীয় মন্ত্রী, মাননীয় বিচারপতি এবং সচিব পদমর্যার কর্মকর্তাদের জন্য ফ্ল্যাট নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়া, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসন সংকট নিরসনে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীতে ৯ হাজার ৭৩৪টি ফ্ল্যাট নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।’

লিখিত বক্তব্যে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বিশ্বে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। কোভিড মহামারি, পর পর পাঁচ দফা বন্যা এবং আম্ফান মোকাবিলায় তড়িৎ সাড়া প্রদান ও মানবিক সহায়তার মাধ্যমে বাংলাদেশ কার্যকরভাবে দুর্যোগ মোকাবিলা করেছে।’

এছাড়াও ধর্মীয় সংস্কৃতির বিকাশ, যুবদের জাতীয় উন্নয়নে সম্পৃক্ত করা, ক্রীড়া উন্নয়নে সরকার দেশব্যাপী ব্যাপক অবকাঠামো নির্মাণ, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নসহ বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড তুলে ধরেন তিনি।

তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যখাতে সরকারের কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘সম্প্রতি সরকারের সবচেয়ে বড় অর্জন হলো সাফল্যের সঙ্গে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ।  করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জরুরিভিত্তিতে দুই হাজার চিকিৎসক ও পাঁচ হাজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগদান করা হয়েছে। কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোতে ১০ হাজার ৫২৫টি সাধারণ বেড, ৬৬৬টি আইসিইউ ও ৭৩টি ডায়ালাইসিস বেড, ৫৫৪টি ভেন্টিলেটর, ১৩ হাজার ৫১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার, ৬৭৮ হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা এবং ৬৩৯টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।’

খুব শিগগির দেশের মানুষকে করোনা ভ্যাকসিন প্রদানের ব্যাপারেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম তুরে ধরে মুজিববর্ষের মেয়াদকাল ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘মুজিববর্ষে গৃহীত সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে “মুজিববর্ষ” পালনের জন্য আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারকে আবারও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সম্পূর্ণ ভাষণটি পড়তে এই লিংকে ক্লিক করুন 

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

6h ago