একই ধরনের প্রকল্পের ভিন্ন গল্প

কৃষি-অকৃষি খাতে উৎপাদন বাড়াতে এবং উৎপাদনের পর সেগুলো সহজে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামাঞ্চলে সেতু নির্মাণে ২০১৭ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। তিন হাজার নয় শ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ছিল সাড়ে চার বছর মেয়াদি।
প্রতীকী ছবি

কৃষি-অকৃষি খাতে উৎপাদন বাড়াতে এবং উৎপাদনের পর সেগুলো সহজে বাজারে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থার উন্নয়নে গ্রামাঞ্চলে সেতু নির্মাণে ২০১৭ সালে একটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। তিন হাজার নয় শ কোটি টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পটি ছিল সাড়ে চার বছর মেয়াদি।

অবাক করার বিষয় হলো, প্রকল্পটির আওতায় নির্মিতব্য ১৩০টি সেতুর মধ্যে ১০০টির ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করেনি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা।

সবগুলো সেতু এ বছরের জুনের মধ্যে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ার কথা থাকলেও এলজিইডি কর্মকর্তা প্রকল্পটির মেয়াদ আরও তিন বছর বাড়ানোর আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে প্রকল্পের ব্যয়ও আরও দুই হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রস্তাব তারা দিয়েছেন।

তবে, এই ধরনের প্রকল্পের ক্ষেত্রেই এমন উদাহরণও আছে, যেটির চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন।

উদাহরণস্বরূপ: ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কের আয়তন বাড়াতে ও রাজধানীর সঙ্গে নিরবচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপনে ২০১৩ সালে একটি প্রকল্প হাতে নেয় সড়ক ও জনপথ বিভাগ (আরএইচডি)। আট হাজার চার শ কোটি টাকা ব্যয়ের এই প্রকল্পটি ছিল সাড়ে আট বছর মেয়াদি।

প্রকল্পটির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আরএইচডির কর্মকর্তারা প্রকল্পটির মেয়াদ তিন মাস বাড়ানোর আবেদন করেছেন। একইসঙ্গে এর ব্যয় বরাদ্দের চেয়ে এক হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা কমানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে।

সঠিকভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই, ব্যবস্থাপনা ও দক্ষভাবে পরিচালনার কারণেই প্রকল্প কর্মকর্তারা এটিতে সফলতা অর্জন করতে পেরেছেন।

তারা বলছিলেন, এটির মাধ্যমেই দেখা যায় যে, প্রকল্পগুলো সঠিক-দক্ষভাবে পরিচালনা করে কীভাবে সময় ও জনগণের অর্থ সাশ্রয় করা যায়।

জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) পরবর্তী সভায় এলজিআরডি ‘গ্রামীণ সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী এবং আরএইচডি ‘কাঞ্চনপুর, মেঘনা, গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ প্রকল্পের প্রথম সংশোধনীর প্রস্তাবনা উত্থাপন করবে।

অর্থ সঞ্চয়

‘কাঞ্চনপুর, মেঘনা, গোমতী দ্বিতীয় সেতু নির্মাণ ও বিদ্যমান সেতু পুনর্বাসন’ প্রকল্পের পরিচালক আবু সালেহ মো. নুরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, যথাযথভাবে সম্ভাব্যতা যাচাই ও দক্ষভাবে বাস্তবায়ন, মূলত এই দুই কারণেই প্রকল্পটির খরচ কমেছে।

তিনি আরও জানান, পরামর্শ ফি বাবদ তাদের ব্যয় মূল বরাদ্দের চেয়ে কম ছিল।

প্রকল্প ব্যয় কমার কারণ হিসেবে নুরুজ্জামান বলছিলেন, ‘পুরনো সেতুগুলো পুনর্নির্মাণের সময় বিভিন্ন জিনিসের জন্য অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন আমাদের হয়নি... ঠিকাদাররা রড ও পাথরের মতো নির্মাণ-সামগ্রী আমদানি করতে চেয়েছিল। কিন্তু, আমরা স্থানীয় নির্মাণ-সামগ্রী দিয়েই কাজ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।’

প্রাথমিকভাবে এই প্রকল্পটিতে আট হাজার ৪৮৬ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছিল। যার মধ্যে ছয় হাজার ৪২৯ দশমিক ২৯ কোটি টাকা দেওয়ার কথা ছিল জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো–অপারেশন এজেন্সির (জাইকা)।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে নথি অনুযায়ী, বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ২২ দশমিক ৮৪ কোটি টাকায় এবং এর মধ্যে জাইকা দেবে পাঁচ হাজার ৭১৩ কোটি টাকা।

দেশের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমের প্রায় ৮৫ থেকে ৯০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে। কিন্তু, সংকীর্ণ সেতুগুলোর কারণে যানজট সৃষ্টি হওয়ায় প্রায়ই ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হয়।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রায় সময় মতোই প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ায় এটি ব্যবসায়ীদের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হবে।

ভিন্ন চিত্র

বাণিজ্যিক ও চাকরির সুযোগ বাড়িয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়নের লক্ষ্যে তিন হাজার ৯২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে গ্রামাঞ্চলে ১৩০টি সেতু নির্মাণের প্রকল্প হাতে নিয়েছে এলজিআরডি। যে প্রকল্পের মাধ্যমে দরিদ্ররা উপকৃত হবে এবং দারিদ্র্য কমবে।

দেশের ৪০টি জেলার ৯৪টি উপজেলায় এই সেতুগুলো নির্মাণ করার কথা ছিল।

সংসদ সদস্যদের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী সেতু নির্মাণের স্থানগুলো নির্ধারণ করা হয়েছিল।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটির কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত ২০ শতাংশেরও কম কাজ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে প্রকল্পটির ব্যয় ৬৪ শতাংশ বাড়িয়ে ছয় হাজার ৪৫৭ দশমিক ১৯ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিচ্ছে এলজিআরডি।

পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আরও জানান, নির্মিতব্য ১০০টি সেতুর ক্ষেত্রেই কোনো ধরনের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। ‘ফলে কর্মকর্তারা যখন নির্মাণস্থলে সেতু নির্মাণ করতে যান, তখন তারা সেতু নির্মাণের উচ্চতা, প্রস্থ এবং যোগাযোগের সড়কগুলোর ক্ষেত্রে বৈষম্য খুঁজে পান’, বলেন মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

একনেক সভার জন্য প্রস্তুত করা নথিতে দেখা গেছে, নতুন তফসিল হার বাস্তবায়ন ও ভূমি অধিগ্রহণে ফি বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রকল্প কর্মকর্তারা আরও বরাদ্দ চাচ্ছেন।

নথিতে আরও বলা হয়েছে, তাদেরকে আরও তিন বছরের জন্য পরামর্শদাতা ও কর্মীদের বেতন দিতে হবে। তাই প্রকল্প ব্যয় আরও বাড়বে।

Comments

The Daily Star  | English

DHL, Daily Star honour five business luminaries for outstanding achievements

The theme of this year's event is "Bangladesh on the rebound".

3h ago