খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়

শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও শিক্ষক অপসারণে নোটিশের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় (খুবি) প্রশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করা শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আবারও ‘চূড়ান্ত নোটিশ’ দেওয়ায় এবং দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করার ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক। একইসঙ্গে দুই শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অত্যাচার বন্ধ করে তাদের স্বপদে বহাল রাখার আহ্বান জানিয়েছে সংগঠনটি। 

আজ বৃহস্পতিবার দেওয়া বিবৃতিটিতে বলা হয়েছে, গত ১৮ জানুয়ারি খুবি কর্তৃপক্ষ তিন শিক্ষককে ‘চূড়ান্ত নোটিশ’ পাঠিয়েছেন। গত বছরের জানুয়ারিতে শিক্ষার্থীরা আবাসিক সংকট সমাধানসহ কিছু বিষয়ে দাবি-দাওয়া জানাচ্ছিলেন। সেগুলোতে এই শিক্ষকেরা সমর্থন জানানোয় তারা কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়েন। এর ধারাবাহিকতায় শিক্ষকদের কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়, যার প্রতিবাদ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক জানিয়েছিল। এবারের নোটিশটি আরও গুরুতর। সেখানে বলা হয়েছে, তাদের চাকরি থেকে অপসারণ কেন করা হবে না, সে বিষয়ে উত্তর দিতে। নোটিশের উত্তর দেওয়ার জন্য শিক্ষকদের যথেষ্ট সময়ও দেওয়া হয়নি। 

সেখানে বলা হয়, গত কয়েক মাসে সংঘটিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, খুবি কর্তৃপক্ষ এই তিন জন শিক্ষককে প্রতিহিংসাপরায়ণভাবে শিক্ষকতা পেশা থেকে সরানোর চেষ্টা করছেন। শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের (আবাসন-সংকট সমাধানসহ অন্যান্য দাবি-দাওয়া) প্রতি সংহতি প্রকাশ যেকোনো শিক্ষকের সাধারণ কর্তব্যবোধের পরিচায়ক; আর ওই শিক্ষকরা সেটাই করেছিলেন। সাধারণ শিক্ষকসুলভ আচরণকে কর্তৃপক্ষ যে বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে, তার থেকেই আমরা বুঝতে পারি কর্তৃপক্ষের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে। শিক্ষার্থীরা তাদের মৌলিক অধিকারের প্রশ্নে দাবি-দাওয়া পেশ করতে পারেন এবং কর্তৃপক্ষ সাধ্যানুযায়ী সেগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করবেন। কর্তৃপক্ষের অপারাগতার জায়গাগুলোতে দফায় দফায় আনুষ্ঠানিক পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ব্যবস্থা করাও প্রশাসনিক কর্তব্যের মধ্যে পড়ে। সংলাপ বরাবরই প্রশাসকদের সক্ষমতা ও সদিচ্ছার ওপর নির্ভর করে। 

৬৬ জন শিক্ষকের সই করা বিবৃতিটিতে আরও বলা হয়, খুবি কর্তৃপক্ষের চিঠির ভাষা মনোযোগ দিয়ে পাঠ করলে এটা বুঝতে সমস্যা হওয়ার কথা নয় যে, তারা সেখানে অগণতান্ত্রিক, অস্বচ্ছ ও সম্পূর্ণ স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থা কায়েম রাখার পক্ষে। চিঠিতে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক আন্দোলনের প্রতি সংহতি প্রকাশ করাকে ‘অস্বাভাবিক’, ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’, বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ‘অবমাননাকর’, ‘ঔদ্ধত্যপূর্ণ’— হিসেবে চিহ্নিত করে শিক্ষকদের সাধারণ শিক্ষকসুলভ আচরণকে কর্তৃপক্ষ যে বারংবার প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইছে, তার থেকেই আমরা বুঝতে পারি কর্তৃপক্ষের স্বার্থ ও উদ্দেশ্য নিবর্তনমূলক। আমাদের দুর্ভাগ্য যে, বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বসূরি শিক্ষকরা সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য অখণ্ড স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করে যেতে পারেননি। এটাও পরম পরিতাপের যে, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বসূরি শিক্ষক-প্রশাসকেরা স্বায়ত্তশাসনের নজির থাকা সত্ত্বেও ‘সরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য বিধি-বিধান’ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনে সন্তোষ খুঁজে পেয়েছিলেন। আর এটা চরম পরিহাসের যে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি ‘রাজনীতিমুক্ত’ তকমা নিয়ে গর্ব বোধ করে আর লাগাতার কর্তৃত্বশালী ‘রাজনৈতিক’ ক্ষমতা চর্চা করে থাকে। আমরা সুনিশ্চিত যে, তিন জন শিক্ষক ও দুই জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ অসৎ-উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিস্বার্থ থেকে প্রেষিত, হার-জিতের গোঁয়ার্তুমি থেকে উত্থিত এবং ক্যাম্পাসের ‘রাজনৈতিক’ দাবা খেলার ফলাফল। 

সবশেষে বিবৃতিদাতারা বলেন, আমরা, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সদস্যরা খুবি কর্তৃপক্ষের এই হিংস্র ও স্বার্থান্বেষী তৎপরতার তীব্র নিন্দা জানাই। কর্তৃপক্ষের কাছে আহ্বান জানাই যেন তারা দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতিকর ও অপ্রশাসকসুলভ এই হঠকারিতার রাস্তা ত্যাগ করেন। অনতিবিলম্বে দুই জন শিক্ষার্থীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার এবং তিন জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক অত্যাচার বন্ধ করে তাদের স্বপদে বহাল রাখার দাবি জানাই। 

বিবৃতিটিতে সই করেছেন— জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মানস চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান, জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস ও অধ্যাপক আইনুন নাহার, জাবির অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, জাবির নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা ও অধ্যাপক মাহমুদুল সুমন, ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সামিনা লুৎফা, ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীম উদ্দিন খান, ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন, সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমান, অধ্যাপক ফাহমিদুল হক, সহকারী অধ্যাপক কাজলী শেহরীন ইসলাম, অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জাকিয়া সুলতানা মুক্তা, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক জায়েদা শারমিন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আ-আল মামুন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজির সহযোগী অধ্যাপক নুরুজ্জামান, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শেহরীন আতাউর খান ও সহকারী অধ্যাপক সৌম্য সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আসিফ মোহাম্মদ শাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

No price too high for mass deportations

US President-elect Donald Trump has doubled down on his campaign promise of the mass deportation of illegal immigrants, saying the cost of doing so will not be a deterrent.

4h ago