খুবির ২ শিক্ষার্থী হাসপাতালে, অবস্থার আরও অবনতি
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের (খুবি) অনশনরত দুই শিক্ষার্থীর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়েছে। বর্তমানে তারা খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তাদের সহপাঠী হাজরা আলামিন আজ সোমবার সকালে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তাদের শারীরিক অবস্থা ভালো না। আগের চেয়ে অবনতি হয়েছে। বেশ কয়েকদিন ধরে তীব্র শীতের মধ্যে খোলা জায়গায় অনশন করে আসায় তাদের ঠাণ্ডাজনিত সমস্যা হয়ে থাকতে পারে।’
‘গতকাল নোমানের জ্বর ছিল। সোহানও শারীরিকভাবে ভীষণ দুর্বল। তাদের নিউমোনিয়া আক্রান্তের আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা। তবে ট্রিটমেন্ট চলছে’, বলেন তিনি।
আলামিন আরও বলেন, ‘শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও তারা এখনও অনশন ভঙ্গ করেনি। চিকিৎসাধীন থেকেও তারা অনশন পালন করে যাচ্ছে। শুধু ট্রিটমেন্টের প্রয়োজনে যতটুকু যা করার তাই করছে।’
গতকাল বাংলা ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) মোহাম্মদ মোবারক হোসেন ওরফে নোমান এবং এর আগের দিন ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী ইমামুল হোসেন ওরফে সোহানকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বর্তমানে তাদের পরিবর্তে অনশন কর্মসূচি পালন করছেন বাংলা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী মোজাহিদুল এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন।
গতকাল অনশনরত দুই শিক্ষার্থী আবারও প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছেন। খুবির ছাত্রবিষয়ক পরিচালকের মাধ্যমে এ চিঠি দেওয়া হয়।
চিঠিতে সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনাপূর্বক তাদের বহিষ্কারাদেশ নিঃশর্তভাবে প্রত্যাহারসহ চলমান সময়ে ও ভবিষ্যতে এই আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোনো শিক্ষার্থীকে কোনো প্রকার হয়রানি ও বহিষ্কার করা হবে না, এই মর্মে লিখিত দাপ্তরিক পত্র চেয়েছেন তারা।
খুবির দুজন শিক্ষার্থীর অনশনের খবর জানতে পেরে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক গত ২২ জানুয়ারি সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে অনশনরত শিক্ষার্থীদ্বয়ের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সেসময় তিনি অনশনরত শিক্ষার্থীদের দাবি সম্পর্কে অবহিত হন। পরবর্তীতে আরও পাঁচ জন শিক্ষার্থী সিটি মেয়রের সঙ্গে একান্তে কথা বলতে চাইলে তিনি তাদের কথাও মনোযোগ সহকারে শোনেন।
উভয়পক্ষের কথা শুনে সিটি মেয়র অনশনরত দুই শিক্ষার্থীকে নিয়মানুযায়ী আত্মপক্ষ সমর্থনে দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা চেয়ে কর্তৃপক্ষ বরাবর লিখিতভাবে আবেদন করার পরামর্শ দেন।
সিটি মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষার্থীদ্বয় ‘সিটি মেয়রের’ মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর একটি আবেদন জমা দিলেও আবেদনে তারা দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করেনি বলে গতকাল মেয়রের দপ্তর থেকে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে চিঠিতে বলা হয়েছে, প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও নিয়ম-কানুন প্রতিপালনের স্বার্থে শিক্ষকদের প্রতি নমনীয় হয়ে দুঃখ প্রকাশ বা ক্ষমা প্রার্থনা করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বরাবর পুনরায় আবেদন করতে হবে।
অনশনরত শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মোবারক হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘স্বৈরতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় চলতে পারে না, মরে গেলেও আমরা আমাদের দাবি থেকে পিছপা হব না।’
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার খান গোলাম কুদ্দুস বলেন, ‘আইনানুগ প্রক্রিয়ায় যে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আইনানুগভাবেই তা সমাধান করতে হবে।’
শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত কমিটিকে সহযোগিতা না করাসহ বিভিন্ন অভিযোগে ওই দুই শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা বোর্ড। ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে তারা আমরণ অনশন কর্মসূচি শুরু করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন-ফি কমানো, আবাসন সংকট নিরসনসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে গত বছর ১ ও ২ জানুয়ারি খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেন। অন্যান্য শিক্ষার্থীর সঙ্গে এই দুই শিক্ষার্থীও অংশ নিয়েছিলেন। ওই সময় দুই শিক্ষকের সঙ্গে অসদাচরণ করার অভিযোগ তোলা হয় তাদের বিরুদ্ধে।
তবে ওই দুই শিক্ষার্থীর দাবি, তাদের বিরুদ্ধে তোলা অভিযোগ ভিত্তিহীন ও প্রহসনমূলক।
আরও পড়ুন:
খুবি সিন্ডিকেট সভায় ১ শিক্ষককে বরখাস্ত, ২ শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত
মেয়রের মাধ্যমে খুবি প্রশাসনকে অনশনরত ২ শিক্ষার্থীর চিঠি
শিক্ষার্থী বহিষ্কার ও শিক্ষক অপসারণে নোটিশের প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: ভবন নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগ থেকে উপাচার্যবিরোধী আন্দোলন
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের শাস্তি শিক্ষক অপসারণ
খুবির ৪ শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের বিবৃতি
Comments