উইন্ডিজকে হোয়াইটওয়াশ করল বাংলাদেশ

বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বরাবরই ভালো কিছুর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এ চার তারকা জ্বলে ওঠেন খুব কম সময়ই। উইন্ডিজের বিপক্ষে এদিন চার তারকাই জ্বলে উঠেছেন। চারজনই তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তাতে উইন্ডিজকে বড় লক্ষ্যই ছুঁড়ে দেয় স্বাগতিকরা। এরপর বোলারদের সৌজন্যে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে টাইগাররা।
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

বর্তমান বাংলাদেশ জাতীয় দলের সবচেয়ে সিনিয়র খেলোয়াড় তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। বরাবরই ভালো কিছুর জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে বাংলাদেশ। তবে একই সঙ্গে এ চার তারকা জ্বলে ওঠেন খুব কম সময়ই।  উইন্ডিজের বিপক্ষে এদিন চার তারকাই জ্বলে উঠেছেন। চারজনই তুলে নিয়েছেন হাফসেঞ্চুরি। তাতে উইন্ডিজকে বড় লক্ষ্যই ছুঁড়ে দেয় স্বাগতিকরা। এরপর বোলারদের সৌজন্যে বড় জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে দলটি।

সোমবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে উইন্ডিজকে ১২০ রানের ব্যবধানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা এ মাঠে রানের ব্যবধানে টাইগারদের সবচেয়ে বড় জয়। প্রথমে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ২০ ওভারে ২৯৭ রান করে বাংলাদেশ। জবাবে ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ রানে গুটিয়ে যায় দলটি। ফলে হোয়াইটওয়াশই হয় ক্যারিবিয়ানরা। ২০০৯ সালের পর দ্বিতীয়বারের মতো টাইগারদের কাছে ধবলধোলাই হলো দলটি। সেবার অবশ্য নিজেদের মাটিতে হয়েছিল তারা। এ নিয়ে মোট ১৩ বার এ কীর্তি গড়তে পারলো বাংলাদেশ।

এদিন বাংলাদেশের এ চার সিনিয়র তারকার তিন জন তামিম, মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ করেছেন ৬৪ রান করে। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য অপরাজিত থেকেছেন। আর সাকিবের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান। এর আগে ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে এ চার তারকা একসঙ্গে ফিফটি করেছিলেন। সেবার ৫ রানের জন্য সেঞ্চুরি মিস করেন তামিম। মাহমুদউল্লাহ ৬২, মুশফিক ৬০ ও সাকিব ৫২ রান করেছিলেন। এদিন উইন্ডিজের বিপক্ষে আবারও জ্বলে ওঠে এ তারকার ব্যাট।

চলতি সফরে নিজেদের সেরা দলটি আনতে পারেনি উইন্ডিজ। করোনাভাইরাসের কারণে তারকা খেলোয়াড়রা স্বেচ্ছায় বিশ্রাম নিয়েছেন। দ্বিতীয় সারির দল বাংলাদেশে এসে শুরু থেকেই সংগ্রাম করেছে। মিরপুরে আগের দুই ম্যাচেই দেড়শ করতে পারেনি তারা। সেই দলটির সামনে এদিন ছিল ২৯৮ রানের বিশাল চ্যালেঞ্জ। আর সে চ্যালেঞ্জে শুরু থেকেই চাপে ছিল দলটি।

শুরুতে দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে ক্যারিবিয়ানদের বড় চাপে ফেলে দেন মোস্তাফিজুর রহমান। দলীয় ৭ রানেই দারুণ এক ডেলিভারিতে কিজর্ন ওটলিকে উইকেটরক্ষক মুশফিকের তালুবন্দি করেন এ পেসার। এরপর আরেক ওপেনার সুনিল আমব্রিসকেও ফেলেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। এরপর ক্যারিবিয়ান শিবিরে আঘাত হানেন আগের ম্যাচের নায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। কাইল মেয়ার্সকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন তিনি। ফলে ৪৭ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলে সফরকারীরা।

তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক জেসন মোহাম্মদকে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন এনক্রুমাহ বনার। রানের গতি সচল না থাকলেও ১১ ওভার ব্যাট করেন এ দুই ব্যাটসম্যান। ২২ রানের এ জুটি ভাঙেন সাইফউদ্দিন। এরপর বনারকেও তুলে নেন তিনি। উইন্ডিজ তখন একশ রানও ছুঁতে পারেনি। এরপর রভমান পাওয়েল এক প্রান্তে চেষ্টা চালিয়ে যান। ৪৭ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। কিন্তু সৌম্যর বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়লে কার্যত শেষ হয়ে যায় তাদের আশা। এরপর রেমন রিফার, আলজেরি জোসেফদের ব্যাট কেবল হারের ব্যবধানই কমিয়েছে।

ইনজুরি থেকে ফেরার পর এদিন দারুণ বোলিং করেছেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। ৫১ রানের খরচায় পেয়েছেন ২টি উইকেট। এছাড়া মোস্তাফিজ ও মিরাজ পেয়েছেন ২টি করে উইকেট।

এর আগে সাগরিকায় দিনের শুরুটা অবশ্য সহজ ছিল না বাংলাদেশের জন্যও। ব্যাটিং বান্ধব উইকেটে শুরুতে সংগ্রাম করতে হয় টাইগারদের। দলীয় ৩৮ রানেই দুই উইকেটের পতন। লিটন দাস তো বিদায় নেন খালি হাতে। তিন নম্বরে নামা নাজমুল হোসেন শান্ত ভালো শুরুর ইঙ্গিত দিয়েও পারেননি। তৃতীয় উইকেটে সাকিবকে নিয়ে দলের হাল ধরেন তামিম। যদিও নিজের প্রথম বলেই বিদায় নিতে পারতেন সাকিব। মেয়ার্সের অফ স্টাম্পে রাখা বল লেগে ঘোরাতে গিয়ে বোলারের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু অল্পের জন্য তা ধরতে পারেননি মেয়ার্স।

সে যাত্রায় বাঁচলেও রানের জন্য প্রচুর সংগ্রাম করতে হয় সাকিবকে। ভুগতে হয়েছে তামিমকেও। ১১৬ বলে ৯৩ রানের জুটি গড়েন এ দুই ব্যাটসম্যান। একই দিনে এ জুটি নিজেদের দুই হাজার রানও পূরণ করে। শুরুতে ধুঁকলেও ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে সাবলীল ব্যাটিং শুরু করেছিলেন তামিম। জেসন মোহাম্মদের বলে দারুণ একটি ছক্কা মেরে ভালো কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করেই জোসেফের বলে পুল করতে গিয়ে আকিলের হাতে ধরা পড়ে সাজঘরে ফেরেন এ ওপেনার। ৮০ বলে ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান নিজের ইনিংস। এদিন জহুর আহমেদ স্টেডিয়ামে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ৫০০ রান পূরণ করেন অধিনায়ক।

অধিনায়কের বিদায়ের পর সাকিবের সঙ্গে ইনিংস মেরামতের কাজে নামেন মুশফিক। ৩৮ রানের জুটিও গড়েছিলেন। তবে ফিফটি করার পরেই বোল্ড হয়ে যান সাকিব। রেমন রেফারের স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে লাইন মিস করেন তিনি। নিজের স্বভাববিরুদ্ধ ব্যাটিং করে ৮১ বলের ইনিংসে চার মারেন মাত্র ৩টি। পরে রানের গতি বাড়াতে আগ্রাসী ব্যাট চালাতে থাকেন মুশফিক। মূলত তার ব্যাটেই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে যায়। ৫৫ বলের ইনিংসে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৪ রানে বিদায় নেন এ উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান।

মুশফিকের দেখানো পথে বাকি কাজটি সারেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ দিকে ঝড় তুলে দলের ইনিংস তিনশ ছুঁইছুঁই করার কৃতিত্বও তারও কম নয়। শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে ৪২ বলে ৩টি করে চার ও ছক্কায় করেন হার না মানা ৬৪ রান। ফলে ক্যারিবিয়ানদের বড় লক্ষ্যই ছুঁড়ে দেয় স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৭/৬ (তামিম ৬৪, লিটন ০, শান্ত ২০, সাকিব ৫১, মুশফিক ৬৪, মাহমুদউল্লাহ ৬৪*, সৌম্য ৭, সাইফ ৫*; জোসেফ ২/৪৮, হার্ডিং ০/৮৮, মেয়ার্স ১/৩৪, রিফার ২/৬১, আকিল ০/৪৬, জেসন ০/১৬)।

উইন্ডিজ: ৪৪.২ ওভারে ১৭৭ (ওটলি ১, আমব্রিস ১৩, বনার ৩১, মেয়ার্স ১১, জেসন ১৭, পাওয়েল ৪৭, হ্যামিল্টন ৫, রিফার ২৭, জোসেফ ১১, আকিল ০, হার্ডিং ১*; সাইফ ৩/৫১, মোস্তাফিজ ২/২৪, তাসকিন ১/৩২, মিরাজ ২/১৮, সাকিব ০/১২, মাহমুদউল্লাহ ০/১১, সৌম্য ১/২২, শান্ত ০/৪)।

ফলাফল: বাংলাদেশ ১২০ রানে জয়ী।

সিরিজ: বাংলাদেশ ৩-০ ব্যবধানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মুশফিকুর রহিম (বাংলাদেশ)।

ম্যান অব দ্য সিরিজ: সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago