নুমান-ইয়াসিরের ভেলকিতে পাকিস্তানের কাছে ধরাশায়ী দ. আফ্রিকা
আগের দিন বিকালে যেখানে শেষ করেছিলেন নুমান আলী আর ইয়াসির শাহ, চতুর্থ দিন সকালে দুজন শুরু করেন ঠিক সেখানে থেকেই। তাদের ঘূর্ণি জাদুর মায়া কাটাতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটসম্যানরা। টপাটপ উইকেট হারিয়ে কুইন্টন ডি ককরা গুটিয়ে যান আড়াইশর নিচে। প্রথম ইনিংসে বড় লিড মেলায় জয়ের জন্য পাকিস্তান পায় ৮৮ রানের ছোট লক্ষ্য। তা পেরিয়ে বিজয়ীর হাসি হাসতে বিপাকে পড়েনি দলটি।
শুক্রবার করাচিতে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৭ উইকেটের বড় ব্যবধানে জিতেছে স্বাগতিকরা। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে বাবর আজমের দল। দুদলের মধ্যকার ২৭ টেস্টে পাকিস্তানের এটি মাত্র পঞ্চম জয়। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম সাদা পোশাকের সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর স্বাদ নিল তারা।
দ্বিতীয় ইনিংসে প্রোটিয়াদের ২৪৫ রানে বেঁধে ফেলতে ৩৫ রানে ৫ উইকেট নেন অভিষিক্ত নুমান। ৩৪ বছর ১১৪ দিন বয়সী এই বাঁহাতি স্পিনার গড়েন দারুণ এক কীর্তিও। গত ৭২ বছরে টেস্ট অভিষেকে তার চেয়ে বেশি বয়সী আর কেউ নিতে পারেননি ৫ উইকেট। ১৯৪৯ সালে নিউজিল্যান্ডের ফেন ক্রেসওয়েল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৪ বছর ১৪৬ দিন বয়সে নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। নুমানের দ্যুতি ছড়ানোর দিনে কম যাননি লেগ স্পিনার ইয়াসিরও। ৪ উইকেট নিতে তিনি খরচ করেন ৭৯ রান।
তৃতীয় দিনের ৪ উইকেটে ১৮৭ রান নিয়ে খেলতে নেমেছিল সফরকারীরা। এদিন আর মাত্র ২৫.৩ ওভার ব্যাটিং করতে পারে দলটি। হাতে থাকা বাকি ৬ উইকেট খুইয়ে তারা যোগ করে মোটে ৫৮ রান। তার সিংহভাগই আসে টেম্বা বাভুমার ব্যাট থেকে। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে সাজঘরে ফেরার আগে ৯৩ বলে ৪০ রান করেন তিনি।
পাকিস্তানের উইকেট উৎসবের শুরুটা হয় দিনের প্রথম বলেই। নাইটওয়াচম্যান কেশব মহারাজ পেসার হাসান আলির নিচু হয়ে যাওয়া ডেলিভারিতে হয়ে যান বোল্ড। দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ডি কক প্রয়োজনের দাবি মেটাতে ব্যর্থ হয়ে শিকার হন ইয়াসিরের। এরপর টানা ৪ উইকেট নিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করেন নুমান। প্রথমে জর্জ লিন্ডে ধরা পড়েন স্লিপে। এরপর কাগিসো রাবাদা হন বোল্ড। শেষে বাভুমাকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলার আগে আইনরিখ নরকিয়াকেও পরাস্ত করেন প্রথম ইনিংসে ২ উইকেট পাওয়া নুমান।
সহজ সমীকরণ মেলাতে মধ্যাহ্ন বিরতি পর্যন্ত দেখেশুনে এগোন ইমরান বাট ও আবিদ আলী। কিন্তু পেসার নরকিয়ার করা দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই গড়বড় করে ফেলেন দুজনে। বাইরের বল স্টাম্পে টেনে বিদায় নেন আবিদ। বাজে শটে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ইমরান।
তাতে খেলায় কিছুটা উত্তেজনা তৈরি হলেও তা মিইয়ে যেতে সময় লাগেনি। তৃতীয় উইকেটে ৮৫ বলে ৬৩ রানের জুটি গড়েন আজহার আলী ও অধিনায়ক বাবর। কিন্তু জয় থেকে মাত্র ২ রান দূরে থাকতে মহারাজের স্পিনের শিকার হন বাবর। তার ব্যাট থেকে আসে ৩৯ বলে ৩০ রান। আজহার অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে ৩১ রানে। মহারাজকে কাট করে চার মেরে খেলা শেষ করেন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ফাওয়াদ আলম।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা প্রথম ইনিংস: ২২০
পাকিস্তান প্রথম ইনিংস: ৩৭৮
দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংস: (আগের দিন ১৮৭/৪) ১০০.৩ ওভারে ২৪৫ (মহারাজ ২, ডি কক ২, বাভুমা ৪০, লিন্ডে ১১, রাবাদা ১, নরকিয়া ০, এনগিডি ৩*; শাহিন ০/৬১, হাসান ১/৬১, নুমান ৫/৩৫, ইয়াসির ৪/৭৯, আশরাফ ০/৮)
পাকিস্তান দ্বিতীয় ইনিংস: ২২.৫ ওভারে ৯০/৩ (ইমরান ১২, আবিদ ১০, আজহার ৩১*, বাবর ৩০, ফাওয়াদ ৪*; রাবাদা ০/২১, নরকিয়া ২/২৪, মহারাজ ১/১২, এনগিডি ০/১৭, লিন্ডে ০/১৩)
ফল: পাকিস্তান ৭ উইকেটে জয়ী।
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে পাকিস্তান ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে।
Comments