রিশাদের ঘূর্ণি ও খালেদের তোপের পরও ব্র্যাথওয়েটের লড়াই
বাংলাদেশ দলে লেগস্পিনারের জন্য হাহাকার অনেক দিন থেকেই। কিন্তু সে অর্থে প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেননি কেউই। তবে এদিন ক্যারিবিয়ানদের বিপক্ষে অসাধারণ বোলিং করেছেন এ লেগি। একাই তুলে নিয়েছেন পাঁচটি উইকেট। দারুণ বোলিং করেছেন পেসার সৈয়দ খালেদ আহমেদও। লম্বা ইনজুরির কারণে ছন্দ হারানো এ পেসার পেলেন ফর্মের ছোঁয়া। তবে তারপরও লড়াইটা ভালোই করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এক প্রান্তে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। প্রায় শেষ পর্যন্ত ব্যাট করে প্রথম ইনিংসে লড়াইয়ের পুঁজি এনে দেন সফরকারীদের।
শুক্রবার চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৫৭ রান করে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর নিজেদের প্রথম ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে ৮ ওভারে বিনা উইকেটে ২৪ রান তুলেছে বিসিবি একাদশ। ১৫ রানে ব্যাট করে অপরাজিত আছেন সাইফ হাসান। আরেক ওপেনার সাদমান ইসলাম উইকেটে আছেন ৩ রান নিয়ে। ফলে প্রথম দিনে ২৩৩ রানে গিয়ে আছে সফরকারীরা।
এদিন টস জিতেছিল ক্যারিবিয়ানরা। মরা ঘাসের উইকেটেও ব্যাটিং বেছে নেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। অথচ বরাবরই বাংলাদেশের উইকেট হয় স্পিন সহায়ক। মূলত প্রতিপক্ষকে মানিয়ে নেওয়ার সুযোগ দিতে চায়নি বাংলাদেশ। যে কারণে বিসিবির একাদশে ছিল না কোনো বাঁহাতি স্পিনার। এমনকি ঘরোয়া ক্রিকেটের পারফর্মার স্পিনারদেরও ডাকা হয়নি। রিশাদ একাই ধসিয়ে দিয়েছেন ক্যারিবিয়ানদের।
দুই ওপেনারের ব্যাটে দিনের শুরুটা অবশ্য দারুণ হয় উইন্ডিজের। তবে খালেদ ও আরেক পেসার মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধ কিছুটা ভুগিয়েছিলেন তাদের। বেশ কিছু এলবিডাব্লিউর জোরালো আবেদনও হয়। দুইবার ব্যাটের কানাও ছুঁয়েছিল। তবে সৌভাগ্য তাদের, উইকেটরক্ষকের হাত পর্যন্ত যায়নি। পরে বদলি বোলার আসার পর রানের গতি বাড়াতে কিছুটা হাত খুলে ব্যাট করার চেষ্টা করেন জন ক্যাম্পবেল। দারুণ কিছু শটও খেলে সাফল্যও পান।
এ ঝুঁকিই কাল হয় ক্যাম্পবেলের। দলীয় ৬৭ রানে লংঅনের উপর দিয়ে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে ধরা পড়েন তিনি। মিডঅনে দাঁড়ানো তৌহিদ হৃদয়ের তালুবন্দি হন। তবে সাজঘরে ফেরার আগে ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন। ৭৩ বলের ইনিংসটি ৭টি চার ও ১টি ছক্কায় সাজান এ ওপেনার। তবে আরেক প্রান্ত ঠিকই আগলে রাখেন অধিনায়ক। জুটি বাঁধেন শাইনি মোসলেকে নিয়ে। ৪৩ রানের জুটি গড়ে ভালো কিছু ইঙ্গিতই দিচ্ছিলেন।
অসাধারণ এক ডেলিভারিতে শাইনিকে (১৫) বিদায় করে এ জুটি ভাঙেন রিশাদ। তার ফ্লিপার ঠিকভাবে খেলতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান এ ক্যারিবিয়ান। বল প্যাডে লেগে স্টাম্প ভাঙে। ক্যারিবিয়ানদের বিপদ শুরু হয় তখন থেকেই। এরপর স্কোরবোর্ডে আর ৫৫ রান যোগ করতে ৫টি উইকেট হারায় তারা।
দলীয় ১১৩ ফিরে যান এনক্রুমাহ বনার। খালেদের বাড়তি বাউন্সের বলটি জায়গায় দাঁড়িয়ে খোঁচা মারতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন তিনি। ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ লুফে নেন উইকেটরক্ষক নুরুল হাসান সোহান। সাম্প্রতিক সময়ে দারুণ ছন্দে থাকা ব্যাটসম্যান জার্মেইন ব্লাকউডও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। যদিও উইকেটে নেমেই স্বভাবসুলভ আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেছিলেন। আউট হয়েছেন রিশাদের বাজে একটি বলে। তার শর্ট বলে পুল করতে চেয়েছিলেন এ ক্যারিবিয়ান। কিন্তু ব্যাটে বল ঠিকভাবে সংযোগ ঘটলে বল উঠে যায় আকাশে। সহজ ক্যাচ তালুবন্দি করতে কোনো ভুল করেননি ইয়াসির আলি।
ব্লাকউডের উইকেটের ধাক্কার রেশ না কাটতেই আউট হয়ে যান কেভাম হজ। খালেদের লাফিয়ে ওঠা বলে তৃতীয় স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তিনি। এরপর উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান জশুয়া ডি সিলভাকে নিয়ে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট। ৩৪ রানের একটি ছোট জুটিও করেছিলেন তারা। তবে ব্যক্তিগত ২০ রানে সাইফ হাসানের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লংঅনে ধরা পড়েন রিশাদের হাতে।
সপ্তম উইকেটে কাইল মেয়ার্সকে নিয়ে আরও একবার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন ব্র্যাথওয়েট। ৫৩ রানের জুটি গড়েন তারা। তাতে অবশ্য মেয়ার্সের অবদানই ছিল বেশি। ৪০ রান আসে তার ব্যাট থেকে। এরপর রিশাদের বলে মারতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হয়ে যান তিনি। এরপর আলজেরি জোসেফ নেমেও ঝড়ো গতিতে ব্যাট চালাতে থাকেন। ২৮ বলে ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় ২৫ রান তুলে বিদায় নেন রিশাদের বলে। শেষে শ্যানন গ্যাব্রিয়েলের উইকেট তুলে নিজের পাঁচ উইকেট পূরণ করেন রিশাদ।
তবে এর আগে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে সাজঘরে ফেরান খালেদ। তার কিছুটা নিচু হওয়া বলে ড্রাইভ করতে গিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। বল আঘাত হানে প্যাডে। ৮৫ রানে শেষ হয় তার লড়াই। ১৮৭ বলে ১০টি চারের সাহায্যে নিজের ইনিংসটি সাজান অধিনায়ক।
বিসিবি একাদশের পক্ষে এদিন দারুণ বোলিং করে একাই ৫টি উইকেট নিয়েছেন রিশাদ। এরজন্য ৭৫ রান খরচ করতে হয়েছে তাকে। দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং করেন খালেদও। ৪৬ রানের বিনিময়ে নেন ৩টি মূল্যবান উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: (প্রথম দিন শেষে)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৫৭ (ব্র্যাথওয়েট ৮৫, ক্যাম্পবেল ৪৪, মোসলে ১৫, বনার ২, ব্ল্যাকউড ৯, হজ ০, ডি সিল্ভা ২০, মেয়ার্স ৪০, জোসেফ ২৫, রোচ ৫*, গ্যাব্রিয়েল ৪; খালেদ ৩/৪৬, মুগ্ধ ০/৩৬, শাহিন ০/৩৯, দিপু ১/২৯, রিশাদ ৫/৭৫, সাইফ ১/২৬)।
বিসিবি একাদশ: ৮ ওভারে ২৪/০ (সাইফ ১৫*, সাদমান ৩*; রোচ ০/১৭, গ্যাব্রিয়েল ০/২১, কর্নওয়েল ০/৫)।
Comments