কর্নওয়ালে কুপোকাত বিসিবি একাদশ

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

প্রতিপক্ষ স্পিনে দুর্বল। সাম্প্রতিক ইতিহাসও তাই বলে। বাংলাদেশের মাঠে বরাবরই সংগ্রাম করেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবারও তাই তাদের স্পিনের বধ করার পরিকল্পনা টাইগারদের। কিন্তু এবার উল্টো হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা। বিশেষ করে, দীর্ঘদেহী রাহকিম কর্নওয়াল। প্রস্তুতি ম্যাচে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন বিসিবি একাদশের ইনিংস। তার বোলিং ঘূর্ণিতেই তিন দিনের ম্যাচেই হারতে বসেছে স্বাগতিকরা।

চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে শনিবার নিজের প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট হয়ে গেছে বাংলাদেশ। পরে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে দিনশেষে ৪৮ ওভারে ৫ উইকেটে ১৭৯ রান তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে সফরকারীদের লিড ২৭৬ রান। নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২৫৭ রান করেছিল ক্যারিবিয়ানরা।

তবে সব ছাপিয়ে এদিন আলোচনা কর্নওয়ালের বোলিং নিয়ে। বিশেষ করে, মরা ঘাসের স্লো উইকেটে আকবর আলীকে যেভাবে শার্প টার্নে আউট করেছেন, তা নিঃসন্দেহে টাইগারদের জন্য ভীতিকর সংবাদ। এর আগে সেট ব্যাটসম্যান মোহাম্মাদ নাঈম শেখকে দারুণ এক কুইকারে বোল্ড করেন। আর পুরো ইনিংস জুড়েই আদায় করে নিয়েছেন শার্প টার্ন ও বাড়তি বাউন্স। ইয়াসির আলী রাব্বি, মাহমুদুল হাসান জয় ও সৈয়দ খালেদকেও বোকা বানান এ স্পিনার। তাতে নিঃসন্দেহে বড় বার্তা বাংলাদেশের জন্য। নিজেদের পরিকল্পনা না আবার বুমেরাং হয়ে যায়। বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারেন এ স্পিনার।

কর্নওয়ালের সঙ্গে কম যাননি জোমেল ওয়ারিকানও। তার শিকারও তিনটি। কর্নওয়ালের মতো না হলেও ছোট ছোট টার্ন আদায় করে নিয়েছেন তিনিও। অধিনায়ক নুরুল হাসান সোহান, শাহাদাত হোসেন দিপু ও তৌহিদ হৃদয় ধরা পড়েছেন তার স্পিনেই।

আগের দিন বিনা উইকেটে ২৪ রান করা বিসিবি একাদশের শুরুটাই এদিন ভালো হয়নি। স্কোরবোর্ডে কোনো রান যোগ না করতেই সাজঘরে ফিরে যান কেমার রোচের ভেতরে ঢোকা বলে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে পড়েন সাইফ হাসান। তবে দ্বিতীয় উইকেটে সাদমানের সঙ্গে ৭৪ রানের জুটিতে প্রাথমিক চাপ সামলে নিয়েছিলেন নাঈম। তবে কর্নওয়ালের কুইকারে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ৪৮ বলে ৯ চারের সাহায্যে ৪৫ রান করেন এ বাঁহাতি।

এরপর স্কোর বোর্ডে ২ রান হতে সাদমান ও ইয়াসিরও ফিরে যান। জোসেফের খাটো লেংথের বল পুল করতে গিয়ে এক্সট্রা কভারে ক্যাচ দেন সাদমান। আর কর্নওয়ালের বল ডিফেন্স করতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে ধরা পড়েন হজের হাতে। এরপর অবশ্য দিপুকে নিয়ে প্রতিরোধ লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক সোহান। ৩০ রানের জুটিও গড়েছিলেন। কিন্তু এ জুটি ভাঙতেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে তাদের ব্যাটিং লাইনআপ।

ওয়ারিকানের বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ডিফেন্স করতে গেলে বল স্পিন করে ব্যাটে চুমু স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান দিপু। আর উইকেট ছুঁড়ে আসেন তৌহিদ হৃদয়। ওয়ারিকানের অফস্টাম্পে রাখা বলে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে লাইন মিস করেন হয়ে যান বোল্ড। সেক্ষেত্রে কিছুটা দুর্ভাগা বলা যায় আকবরকে। কর্নওয়ালের শার্প টার্নে বোল্ড হন তিনি। জয়ও আউট হয়েছেন নিজের দোষেই। কর্নওয়ালের বলে প্রথমে ফ্রন্টফুটে খেলতে চেয়েছিলেন। কিন্তু দোমনা হয়ে পরে ব্যাকফুটে খেলতে গেলে ব্যাটের কানায় লেগে শর্ট লেগে দাঁড়ানো কেভাম হজের হাতে ক্যাচ তুলে দেন।

এরপর দল তাকিয়ে ছিল অধিনায়ক সোহানের দিকে। কিন্তু হতাশ করেছেন তিনি। ওয়ারিকানের অফস্টাম্পে রাখা বল লেগে ঘোরাতে গিয়ে আকাশে তুলে দেন। কভারে সহজ ক্যাচ তুলে নিতে কোনো ভুল হয়নি হজের। এরপর সৈয়দ খালেদ আহমেদ পড়েন কর্নওয়ালের এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। ফলে ১৬০ রানে অলআউট হয়ে যায় দলটি।

নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটের জায়গায় ওপেনিংয়ে নামা শাইনি মোসলেকে হারায় ক্যারিবিয়ানরা। দারুণ এক ডেলিভারিতে তাকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলেন খালেদ। কিন্তু এরপর আরেক ওপেনার জন ক্যাম্পবেলকে নিয়ে স্বাগতিকদের ভোগান এনক্রুমাহ বনার। ১২৯ রানের জুটি গড়ে বিশাল লিডের পথে দলকে নিয়ে যান এ দুই ব্যাটসম্যান। এ জুটি ভাঙেন সাইফ। এরপর ১৪ রানের ব্যবধানে আরও দুটি উইকেট হারায় দলটি। ব্লাকউডকে ফেরান সাইফ আর কাইল মেয়ার্সকে জয়।

এরপর বনারের সঙ্গে ৩৩ রানের ছোট একটি জুটি গড়ে মুকিদুল ইসলাম মুগ্ধর শিকার হন হজ। তবে ততক্ষণে স্বাগতিকদের জন্য বেশ লক্ষ্যই দাঁড় করানো গিয়েছে। এক প্রান্ত আগলে ধরে ৮০ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত আছেন বনার। ১৩১ বলের ইনিংসে ১২টি চার মেরেছেন তিনি। ক্যাম্পবেলের ব্যাট থেকে আসে ৬৮ রান। ৯৮ বলে ইনিংসটি ৯টি চার দিয়ে সাজিয়েছেন এ ওপেনার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৫৭

বিসিবি একাদশ প্রথম ইনিংস: ১৬০ (সাইফ ১৫, সাদমান ২২ নাঈম ৪৫, ইয়াসির ১, দিপু ১৩, সোহান ৩০, হৃদয় ৭, আকবর ৫, জয় ৪, রিশাদ ১*, খালেদ ০; রোচ ১/১৩, গ্যাব্রিয়েল ০/৩০, কর্নওয়াল ৫/৪৭, জোসেফ ১/৩১, মায়ার্স ০/৯, ওয়ারিকান ৩/২৫)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ৪৮ ওভারে ১৭৯/৫ (ক্যাম্পবেল ৬৮, মোসলে ০, বনার ৮০*, ব্ল্যাকউড ৪, মেয়ার্স ৮, হজ ১৯, ডি সিলভা ০*; খালেদ ১/১৬, মুগ্ধ ১/৩২, সাইফ ২/৩২, রিশাদ ০/৬১, শাহিন ০/২২, হৃদয় ১/১৬)।

Comments

The Daily Star  | English
Climate debt in Bangladesh from 2009 to 2022

Bangladesh’s climate debt keeps climbing

As global leaders gather in Baku, Azerbaijan to discuss finance at the 29th climate conference, the most vulnerable countries like Bangladesh are demanding new and additional climate finance that does not exacerbate climate debt.

13h ago