হাসপাতালে প্রবেশে কড়াকড়ি: ১ বছরেও কার্যকর হয়নি মন্ত্রণালয়ের নিদের্শনা

ছবি: সংগৃহীত

মানসম্মত চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে জেলা সদর ও উপজেলার সরকারি হাসপাতালের অভ্যন্তরে প্রবেশে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আট দফা নিদের্শনা এক বছরেও কার্যকর হয়নি। খুলনা বিভাগের জেলা সদরের চারটি সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, করোনা মহামারির কালেও দর্শনার্থী প্রবেশে শৃঙ্খলা আসেনি।

কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট ও কার্যক্রমটি বাস্তবায়নে মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ না আসায় এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেওয়া যায়নি।

গত বছরের ১২ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আবু রায়হান মিঞার সই করা ‘সরকারি হাসপাতালের দর্শনার্থী ব্যবস্থাপনা’ শিরোনামের চিঠিতে বলা হয়, দেশের সব সরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে মানসম্মত চিকিৎসা সেবা প্রদান সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। মানসম্মত ও নিরাপদ চিকিৎসা প্রদান করতে হলে রোগীর সঙ্গে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। কেননা তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক অভিজ্ঞতা এবং জীবাণু সংক্রমণ রোধে করণীয় বিষয়ে সম্যক জ্ঞানের অভাবে অধিকাংশ সময় কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ বা পরিস্থিতির অবনতি হয়।’

এ ছাড়া, ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত দর্শনার্থী হওয়ায় হাসপাতালে নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা, ইউটিলিটি সার্ভিস, রোগীর গোপনীয়তা এবং চিকিৎসাসেবীদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হয় বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে আট দফা নির্দেশনা দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তাতে বলা হয়, প্রত্যেক হাসপাতালে দর্শনার্থী পাস চালু করতে হবে এবং প্রতিটি পাসের জন্য নিরাপত্তা জামানত চালু করা যেতে পারে; রোগীর অসুস্থতা বিবেচনায় একজন রোগীকে সহায়তার জন্য তার সঙ্গে সর্বোচ্চ দুজন দর্শনার্থীকে পাস দেওয়া যেতে পারে; দর্শনার্থীরা হাসপাতাল ছাড়ার আগে পাস জমা দিয়ে নিরাপত্তা জামানত ফেরত নিতে পারবেন।

হাসপাতালের সব চিকিৎসক, নার্সসহ কর্মচারীদের বৈধ পরিচয়পত্র দৃশ্যমানভাবে ঝুলিয়ে রাখার বিষয়েও নির্দেশনা দেওয়া হয় চিঠিতে। আরও বলা হয়, হাসপাতালে আসা দর্শনার্থীদের জন্য পাস ইস্যু করার সময় নাম, ঠিকানা, মোবাইল ফোন নম্বর, পরিদর্শনের কারণ ইত্যাদি তথ্য সম্বলিত রেজিস্ট্রার সংরক্ষণ করা যেতে পারে। দর্শনার্থী বিষয়ক নিয়মাবলী রোগী ও রোগীর সহায়তাকারীদের অবহিত করতে হবে। এসব নিয়মাবলী সহজে দৃষ্টিগোচর হয় এমন স্থানে রাখতে হবে।

গবেষণা, জরিপ অন্য কোনো তথ্য বা সংবাদ সংগ্রহের জন্য তথ্য সংগ্রহকারী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। সংগৃহীত তথ্য বা সংবাদের বস্তুনিষ্ঠতা বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন। বিনা অনুমতিতে হাসপাতালের ভেতরে রোগী বা স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের কোনো স্থিরচিত্র বা ভিডিওচিত্র ধারণ করা যাবে না। সংগৃহীত তথ্য প্রকাশের আগেই বস্তুনিষ্ঠতা বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।

নির্দেশনাটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল ও ক্লিনিকের পরিচালক, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাদের পাঠানো হয়।

খুলনা বিভাগের জেলা সদরের চারটি সরকারি হাসপাতাল— কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল এবং ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, এসব হাসপাতালে দর্শনার্থী প্রবেশে বিধি-নিষেধের বাস্তবায়ন হয়নি।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. তাপস কুমার সরকার জানান, নির্দেশনাটি তার হাসপাতালের জন্য খুবই দরকারি ছিল। কিন্তু লোকবলের অভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি।

তিনি বলেন, ‘২৫০ শয্যার এ হাসপাতালে প্রতিদিন পাঁচ শতাধিক রোগী ভর্তি থাকে। এ ছাড়া, প্রতিদিন বহির্বিভাগে রোগী আসে দেড় থেকে দুই হাজার। গড়ে প্রতিদিন দর্শনার্থীর সংখ্যা থাকে তিন হাজারের বেশি। এই বিপুল দর্শনার্থী নিয়ন্ত্রণে কমপক্ষে ২০ থেকে ২৫ জন নতুন কর্মী প্রয়োজন।’

‘নির্দেশনা বাস্তবায়নে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে মাসিক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভার সিদ্ধান্ত নিয়ে আট জন আনসার সদস্য মোতায়েন এবং এ জন্য বেতন-ভাতাদি বাবদ মাসিক দেড় লাখ টাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চাওয়া হয়। কিন্তু এখনো এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি’— বলেন ডা. তাপস কুমার।

কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, সেখানে রোগীদের সঙ্গে দর্শনার্থীদের ভিড় রয়েছে তা নয়— হকার, ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি, অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসায়ী, ভবঘুরে এবং ভিক্ষুকসহ অনেকের রয়েছে অবাদ যাতায়াত।

মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. মোখলেসুর রহমান জানান, লোকবল চেয়ে গত বছরের জুন মাসে মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। এখনো সে সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সাজিদ হাসান বলেন, ৫০ শয্যার জনবল ও কাঠামো দিয়ে প্রায় ১৭ বছর ধরে চলছে ২০০ শয্যার এ হাসপাতালটি। তারা নিজেদের মতো করে চালিয়ে নিচ্ছেন। অতিরিক্ত কোনো কাজই তাদের পক্ষে বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।

Comments

The Daily Star  | English

BNP at 47: Caught between prospects and perils

The BNP has survived Sheikh Hasina’s 15-year rule, during which over a million cases were filed against its leaders and activists for trying to launch street agitations demanding elections under a non-partisan government. Thousands were jailed, including Chairperson Khaleda Zia and other top leaders.

12h ago