বিষাক্ত মদপানে ঢাকা ও বগুড়ায় ১২ জনের মৃত্যু
বিষাক্ত মদপানে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই জন শিক্ষার্থী এবং একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার তিন কর্মীসহ ঢাকা ও বগুড়ায় অন্তত ১২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, গত শুক্রবার একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থার প্রায় ৪১ কর্মী গাজীপুরের একটি রিসোর্টে অফিস ট্যুরে গিয়েছিলেন। মদপানে কয়েক জন সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়েন। ঢাকায় ফেরার পরে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুই জন এবং সোমবার একজনের মৃত্যু হয়েছে।
পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ওই সংস্থার এক কর্মী দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রায় ১০ জন এখনো ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। দুই জনকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
সূত্র আরও জানায়, অফিস ট্যুরের জন্য রাজধানীর গুলশান এলাকা থেকে মদ কেনা হয়েছিল।
কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) আবু আজিজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমাদের কাছে একটি ফোন আসে— একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা অফিস ট্যুরে গিয়ে মদপানে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারাও গেছেন। ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
পুলিশ দাবি করেছে, মোহাম্মপুরের এক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ভেজাল মদপানে মারা গেছেন। গত রোববার তার বাবা একই বিশ্বদ্যালয়ের পাঁচ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে একটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছিলেন। শনিবার মোহাম্মদপুরের সিটি হাসপাতালে মামলায় অভিযুক্ত পাঁচ জনের মধ্যে এক যুবকের মৃত্যু হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার হারুন-উর-রশিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি, ভুক্তভোগী এবং অভিযুক্ত যুবক দুজনেরই মদপানে মৃত্যু হয়েছে। আমাদের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।’
বগুড়ায় বিষাক্ত মদপানে অন্তত সাত জনের মৃত্যু হয়েছে। আরও পাঁচ জন বর্তমানে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ুন কবির দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘বিষাক্ত মদপানে শহরের তিন মাথা এলাকার বাসিন্দা সুমন রবিদাশ (৩৮) ও তার বাবা প্রেমনাথ রবিদাশ (৫০) এবং কাটনারপাড়া ও ফুলবাড়ি এলাকার দুই দিনমজুরের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন— সাজু মিয়া (৫৫) ও পলাশ (৩৫)।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকাল সন্ধ্যায় সুমন, সাজু ও পলাশের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। তাতে নিশ্চিত হওয়া গেছে, মদপানে বিষক্রিয়ায় তাদের মৃত্যু হয়েছে। আলমগীর হোসেন (৫৫), রমজার আলী (৬০) ও মোজাহার আলী (৭০) নামে আরও তিন জনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি আমরা। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তারাও মদপান করেছিলেন।’
সুমনের ভাই সুজন রবিদাশ বলেন, তাদের বাড়িতে একটি বিয়ের অনুষ্ঠান চলছিল। অনুষ্ঠানে আসা কয়েক জন রেকটিফায়েড স্পিরিট কিনে পান করে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এর আগে ১ জানুয়ারি মদের বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে অন্তত ১৬ জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। পরের দুই দিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোট পাঁচ জনের মৃত্যু হয়। ৪ জানুয়ারি রাজশাহী মহানগর পুলিশ ভেজাল মদ তৈরির চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে।
গত বছরের ২৭ আগস্ট রাজশাহীর একটি বেসরকারি হাসাপতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় এক রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যু হয়। চিকিৎসকরা জানান, মদের বিষক্রিয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ওই কর্মীর মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপতালের উপপরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বিষাক্ত মদপানে অসুস্থ পাঁচ জন বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।’
রাজধানীর ভাটারা এলাকা থেকে ভেজাল মদ তৈরির চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখার সদস্যরা। এ সময় মাদক তৈরির কারখানা থেকে প্লাস্টিক বোতল, কয়েক ড্রাম স্পিরিট, মিনারেল ওয়াটারের বোতল এবং সুগার সিরাপ জব্দ করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তথ্য মতে, মাদক কারবারিরা রাজধানীর মিটফোর্ড এলাকা থেকে ১০ হাজার টাকায় এক গ্যালন স্পিরিট কিনতেন। তারপর মিনারেল ওয়াটারের সঙ্গে স্পিরিট, চিনি, রঙ মিশিয়ে বিদেশি মদের পুরনো বোতলে ভরে সেগুলো বিক্রি করা হতো।
ডিবি গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মসিউর রহমান বলেন, ‘গত কয়েক দিনে ঢাকায় বিষাক্ত মদপানে অন্তত ছয় জনের মৃত্যু হয়েছে। যারা এই মদ সরবরাহ করেছিল প্রথমে আমরা তাদের শনাক্ত করি। এরপর ভেজাল মদ তৈরির চক্রের সন্ধান পাওয়া যায়। শেষে আমরা কারখানার সন্ধান বের করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘ভাটারা এলাকা থেকে ভেজাল মদ তৈরির চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কারখানাটির মালিক মো. নাসির। গ্রেপ্তার মো. জাহাঙ্গীর মূলত বিদেশি মদের পুরনো বোতল সরবরাহ করতেন। পরবর্তীতে তিনি ওই কারখানায় চিফ কেমিস্ট হিসেবে কাজ শুরু করেন। তাকেও আমরা গ্রেপ্তার করেছি। দুই জন মূলহোতাসহ মোট ছয় জনের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সজ্ঞানে ভেজাল ক্ষতিকর পণ্য বিক্রির অপরাধে তাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হবে।’
Comments