মিরাজময় দিনে উইকেটের আচরণ নিয়ে কৌতূহল
দিনের সবচেয়ে বড় আলোটা অবশ্যই মেহেদী হাসান মিরাজের গায়ে পড়ছে। আটে নেমে এমন একটা সেঞ্চুরি করলে সেটা হওয়া স্বাভাবিকও। তার কারণেই তো সাড়ে তিনশো করতে না পারার শঙ্কা ছাপিয়ে চারশো ছাড়িয়ে যায় বাংলাদেশ। তবে দিনশেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজও খুব বেশি উইকেট হারাল না। আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, বাংলাদেশের চার স্পিনারের কেউই এখনো উইকেট পাননি। এমনকি প্রত্যাশিত টার্নও পাননি। একমাত্র পেসার মোস্তাফিজুর রহমানই দলকে দিয়েছেন স্বস্তি।
বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনশেষে বাংলাদেশের ৪৩০ রানের জবাবে উইন্ডিজ তুলেছে ২ উইকেটে ৭৫ রান। বেশ স্বস্তির সঙ্গে খেলে অধিনায়ক ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট অপরাজিত আছেন ৪৯ রানে। তার সঙ্গে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে অভিষিক্ত এনক্রুমাহ বোনারের রান ১৭।
চা-বিরতির পর ব্যাট করতে নেমে মোস্তাফিজের তোপে পড়ে ক্যারিবিয়ানরা। প্রথম বলে চার দিয়ে শুরু হলেও পরে বাঁহাতি পেসার প্রায় নাচিয়ে ছেড়েছেন তাদের। ৭ ওভারের লম্বা স্পেলে কাটারে অতিষ্ঠ করে তোলেন। ফলে বেশ কয়েকবার রিভিউয়ের ইশারা দেওয়ার দরকার হয়েছে আম্পায়ারদের।
আরও পড়ুন- ছক্কার উদযাপন করে মিলল না এক রানও!
মোস্তাফিজের প্রথম শিকার জন ক্যাম্পবেল। তার কাটারে পরাস্ত হন বাঁহাতি ওপেনার। এলবিডব্লিউয়ের আবেদনে আম্পায়ার আউট দিলে রিভিউ নিয়েছিলেন তিনি। তবে বাঁচতে না পারলেও রিভিউ রক্ষা পায় আম্পায়ার্স কলের কারণে।
পরের বলেই অভিষিক্ত শেইন মোসলিকে পরাস্ত করে উল্লাসে মেতেছিলেন টেস্টে ফেরা মোস্তাফিজ। কিন্তু রিভিউ নিয়ে সে যাত্রায় বেঁচে যায় ক্যারিবিয়ানরা।
তবে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারেননি এই বাঁহাতিও। দশম ওভারের পঞ্চম বলে আবার আবেদন। আম্পায়ার সাড়া দিলেও রিভিউ নিয়েছিল বাংলাদেশ। মোসলির ব্যাটে বল লাগায় নষ্ট হয় সে রিভিউ। কাটার দিয়ে হচ্ছে না দেখে পরের বলেই ইয়র্কার মেরে দেন বাংলাদেশের একাদশের একমাত্র পেসার। এবার আর রক্ষা হয়নি। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি মোসলি।
দিনের শেষ ওভারসহ মোস্তাফিজ বল করেছেন মোট ৮ ওভার। ২৯ ওভারের মধ্যে এর আগে-পরে স্পিনাররা বল ঘুরিয়েছেন বাকিটা। উইকেট বের করতে পারেননি। এমনকি উইকেট বের করার পরিস্থিতিও সেভাবে তৈরি হয়নি। একটা সময় আরও একজন পেসারের অভাব কিছুটা টের পাওয়া যাচ্ছিল। বিশেষ করে, দুই দিকে বল স্যুয়িং করাতে পারা আবু জায়েদ রাহী এই উইকেটে কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারতেন কিনা, সেই প্রশ্ন উঠেছে।
২০১৮ সালে এই মাঠে দ্বিতীয় দিনেই ম্যাচ অনেকটা পকেটে পুরেছিল বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার পর উইন্ডিজের প্রথম ইনিংসও শেষ হয়ে গিয়েছিল। শেষ বিকেলে নেমে আবার নিজেরাও উইকেট হারিয়েছিল। তৃতীয় দিনে ম্যাচ শেষ হওয়ার আভাস ছিল স্পষ্ট। হয়েছিলও তাই। এবার সেরকম কিছুর ইঙ্গিত দেখা গেল না এখনও।
দ্বিতীয় দিনের শেষ সেশনেও উইকেট থেকে টার্ন পেলেন না স্পিনাররা। আচমকা লাফালাফিরও দেখা নেই। খুব একটা টার্ন নেই বুঝে উইন্ডিজ অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট বার কয়েক ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলে ফেললেন আগ্রাসী শট।
সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপে ভরসা করার মতো আছেন ব্র্যাথওয়েট আর জার্মেইন ব্ল্যাকউড। এটাই ভরসা বাংলাদেশের। না হলে উইকেটের আচরণ বলছে, চাইলে এখনো লম্বা ইনিংস খেলতে পারেন ব্যাটসম্যানরা। আর সেটা হলে ম্যাচ জমে যাওয়ারও সুযোগ থেকে যায়।
উইকেটের আচরণ তাই বাড়াচ্ছেন কৌতূহল। তৃতীয় দিনেও পরিস্থিতি একইরকম থাকলে নিজেদের কাজটা কিছুটা কঠিন হতে পারে বাংলাদেশের জন্য।
এখানেই বড় কৃতিত্বের দাবি রাখেন মিরাজ। আট নম্বরে নেমে তার ওই সেঞ্চুরি না হলে যে সাড়ে তিনশোর আগেই থেমে যেতে পারত বাংলাদেশ। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়েই তখন থাকত দোলাচল। টপ আর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের ভুলের খেসারত আর বাজে আউটে ইনিংস লম্বা করতে না পারার ক্ষত হয়ে যেত আরও প্রবল।
মিরাজ দলকে তো নিরাপদে রাখলেনই, সমোলাচনার তীর থেকে বোধহয় বাঁচিয়ে দিলেন সম্ভাবনাময় কয়েকটি ইনিংসের ‘অপমৃত্যু’ ডেকে আনা বাকিদের।
দিনের তৃতীয় ওভারে লিটন দাসের বিদায়ে নেমেছিলেন মিরাজ। আউট হয়েছেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে। শেষ তিন উইকেট নিয়ে যোগ করেছেন আরও ১১৫ রান। উইন্ডিজ পেসার শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে নিয়ে ছিল ভয়। তাকে প্রথমেই দারুণভাবে সামলে বার্তা দিয়েছিলেন মিরাজ। এরপর স্পিনারদের খেলেছেন দাপট দেখিয়ে। নির্ভেজাল ক্রিকেটীয় শটে বের করেছেন রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বোলার পরিচয়ের আড়ালে পড়ে থাকা তার ব্যাটিং সামর্থ্য তুলে এনেছেন সবার সামনে।
মিরাজ খেলেন ১৬৮ বলে ১০৩ রানের মনোমুগ্ধকর ইনিংস। যা তার টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিও বটে। তার অমন খেলা দেখে ক্যারিবিয়ানরা বাড়তি কোনো অনুপ্রেরণা না নিলেই স্বস্তি বাংলাদেশের।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
(দ্বিতীয় দিন শেষে)
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫০.২ ওভারে ৪৩০ (সাদমান ৫৯, তামিম ৯, শান্ত ২৫, মুমিনুল ২৬, মুশফিক ৩৮, সাকিব ৬৮, লিটন ৩৮, মিরাজ ১০৩, তাইজুল ১৮, নাঈম ২৪, মোস্তাফিজ ৩*; রোচ ১/৬০, গ্যাব্রিয়েল ০/৬৯, কর্নওয়াল ২/১১৪, মেয়ার্স ০/১৬, ওয়ারিকান ৪/১৩৩, ব্র্যাথওয়েট ০/১৩, বোনার ১/১৬)।
উইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ২৯ ওভারে ৭৫/২ (ব্র্যাথওয়েট ৪৯*, ক্যাম্পবেল ৩, মোসলে ২, বোনার ১৭*; মোস্তাফিজ ২/১৮, সাকিব ০/১৬, মিরাজ ০/২৪, তাইজুল ০/৯ , নাঈম ০/৭)।
Comments