এলএনজি সরবরাহে স্বল্পতা, তীব্র গ্যাস সংকট

গত দুই মাস থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি।
প্রতীকী ছবি। স্টার ফাইল ফটো

গত দুই মাস থেকে পাইপলাইনে গ্যাস সরবরাহ কম থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছেন রাজধানীবাসী। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিলেও বাস্তবে এর প্রতিফলন দেখা যায়নি।

এখন মনে হচ্ছে নগরবাসীর এই ভোগান্তি আরও দীর্ঘ হবে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (টিজিটিডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী ইকবাল মো. নূরুল্লাহ গত ১৯ জানুয়ারি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন যে, ২২ জানুয়ারির মধ্যে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক করতে তারা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।

কিন্তু, এরপরও গ্যাসের স্বল্পতা রয়েই গেছে। রয়ে গেছে ঢাকাবাসীর ভোগান্তি।

পাইপে কনডেনসেট জমা হওয়ায় শীতে গ্যাস সরবরাহে বিঘ্ন ঘটছে। স্পট মার্কেট থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি কেনায় সরকারের অনাগ্রহের কারণে এবার এ সমস্যা আরও তীব্র হয়েছে। স্পট মার্কেটে গ্যাসের দাম বেড়েছে উল্লেখযোগ্যহারে।

এমন পরিস্থিতিতে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ দিয়েছেন নতুন প্রতিশ্রুতি। তিনি গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেছেন, আশা করা হচ্ছে ‘এ মাসের মধ্যেই’ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে।

তিনি বলেছেন, ‘যেহেতু স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম টন প্রতি ৩০ ডলার বেড়েছে, তাই এলএনজির সরবরাহ কমে গেছে। স্বাভাবিকের চেয়ে এলএনজির দাম দ্বিগুণ হওয়ায় আমরা স্পট মার্কেট থেকে গ্যাস কিনিনি।’

‘গত কয়েকদিনে আমরা এলএনজির সরবরাহ বাড়িয়েছি। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আমরা এ মাসের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ ৬০০ এমএমসিএফডি’তে (মিলিয়ন কিউবিক ফিট অ্যা ডে) উন্নীত করতে পারব’, যোগ করেন তিনি।

জন ভোগান্তি

রাজধানীর আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকার বাসিন্দা পলি বেগম ডেইলি স্টারকে বলেছেন, পরিবারের সদস্যদের জন্যে নাশতা বানাতে গত এক মাস ধরে তিনি ভোর ৫টায় ঘুম থেকে ওঠেন। কারণ প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে গ্যাস সরবরাহ কমতে থাকে।

সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ থাকে না বলে তিনি জানিয়েছেন। তার স্বামী বলেছেন, ‘আমরা বিকেল ৫টায় দুপুরের খাবার খাই।’

পূর্ব রাজাবাজার, জিগাতলা, মোহাম্মপুর, আদাবর, ভাটারা, বাড্ডা, গেন্ডারিয়া, তুরাগ, উত্তর খান, দক্ষিণ খান, মিরপুরের কিছু অংশ, পল্লবী ও পুরান ঢাকার কয়েকটি এলাকার বেশ কয়েকজন অধিবাসী ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন যে তারা গত কয়েক মাস থেকে তীব্র গ্যাস সংকটে রয়েছেন এবং গত মাসে এই সংকট তীব্রতর হয়েছে।

উত্তর খানের মাতারবাড়ির বাসিন্দা হাসান ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘গত এক মাস ধরে আমরা তীব্র গ্যাস সংকটে রয়েছি। সকাল ৭টা থেকে গ্যাসের চাপ কমতে থাকে। সকাল ৯টার মধ্যে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। আবার ২টার দিকে গ্যাস আসে।’

তারা মাঝেমধ্যে কাঠের চুলা ব্যবহার করেন বলেও জানিয়েছেন হাসান।

কর্মকর্তাদের বক্তব্য

রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানি লিমিটেডের (আরপিজিসিএল) এক কর্মকর্তা ডেইলি স্টারকে বলেছেন, দেশে গ্যাসের চাহিদা ৩ হাজার ৭০০ এমএমসিএফডি। কিন্তু, পাওয়া যাচ্ছে ২ হাজার ৮০০ এমএমসিএফডি থেকে ২ হাজার ৯০০ এমএমসিএফডি।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এলএনজি আমদানি কমে যাওয়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

তাদের মতে, দেশে গ্যাস সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে অন্তত ৫২৫ এমএমসিএফডি আমদানিকৃত এলএনজি প্রয়োজন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পেট্রোবাংলার (বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ করপোরেশন) এক কর্মকর্তা গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘এনএলজির ঘাটতিই মূল সমস্যা... জানুয়ারির মাঝামাঝিতে এটি কমে ২০০ এমএমসিএফডি হয়েছে। গত পাঁচদিন যাবৎ আমরা ৪০০ এমএমসিএফডি পাচ্ছি।’

তিনি জানান, শীতকালে পাইপলাইনে কনডেনসেট জমা হয় এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ গ্যাস না থাকলে তখন সরবরাহ ব্যাহত হয়।

ঢাকা শহরে গ্যাস সরবরাহ করা তিতাস গ্যাসের গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লাখ ৭৪ হাজারের মতো। তিতাসের এমডি নূরুল্লাহ গতকাল ডেইলি স্টারকে বলেন, তাদের যে পরিমাণ গ্যাস রয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

তিতাসের আরেক কর্মকর্তার দাবি, গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) কারিগরি সমস্যার কারণে ঢাকা, গাজীপুর, সাভার, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় গ্যাস সরবরাহে ৮০ থেকে ৯০ এমএমসিএফডি ঘাটতি রয়েছে।

তিনি বলেছেন, ‘১০ থেকে ২৩ জানুয়ারি আমরা তিতাস নেটওয়ার্কে কম সরবরাহ পেয়েছি। কিন্তু, ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আমরা জিটিসিএলের কারিগরি সমস্যার কারণে কম সরবরাহ পাচ্ছি।’

গত বুধবার যেখানে ১ হাজার ৭৪০ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে ১ হাজার ৬০০ এমএমসিএফডি গ্যাস পাওয়া গেছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। এর মধ্যে, ২০০ এমএমসিএফডি গ্যাস বাসা-বাড়িতে ব্যবহৃত হয়।

যোগাযোগ করা হলে জিটিসিএল’র এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মূল সমস্যা হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহে স্বল্পতা।

‘এখানে কারিগরি সমস্যার কিছু নেই। আমরা পেট্রোবাংলার সরবরাহ নেটওয়ার্কে সমন্বয় করি। কখনো কখনো আমরা বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দিয়ে গৃহস্থালি কাজে গ্যাসের সরবরাহ বাড়িয়ে দিই। এর বিপরীতও হয় মাঝে-মধ্যে,’ যোগ করেন তিনি।

আরপিজিসিএল’র জেনারেল ম্যানেজার মো. রফিকুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, গত ২৩ জানুয়ারি থেকে তারা জাতীয় গ্রিডে ৪০০ এমএমসিএফডি এলএনজি সরবরাহ করছেন।

তিনি বলেন, দীর্ঘ মেয়াদি চুক্তি অনুযায়ী কাতার ও ওমান থেকে নিয়মিত বিরতিতে এলএনজি আসে। চাহিদা মেটাতে স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি কেনা হয়। গত কয়েক মাস ধরে এলএনজির স্পট মার্কেট অস্থির রয়েছে।

এই শীতে স্পট মার্কেটে এলএনজির দাম বেড়েছে উল্লেখ করে তিনি জানিয়েছেন, এখন এলএনজির দাম টনপ্রতি ১০ ডলার কমেছে। চলতি মাসের শেষের দিকে এর দাম আরও কমতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।

এলএনজি আমদানির দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রীয় সংস্থা আরপিজিসি গত নভেম্বর ও ডিসেম্বরে স্পট মার্কেট থেকে ১ লাখ ৩৮ হাজার কিউবিক মিটার করে এলএনজি দুটি চালানের অর্ডার বাতিল করে দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago