পূজারার ব্যাটিং দর্শনের অনুসারী বোনার
চট্টগ্রাম টেস্টে কাইল মায়ার্সকে ঠেকাতে পারেনি বাংলাদেশ। অভিষেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে বাংলাদেশকে হারানোয় সব আলো স্বাভাবিকভাবেই তার উপর পড়বে। কিন্তু মায়ার্সের চেষ্টা পূর্ণতা পেত না যদি এনক্রুমা বোনার না থাকতেন। মায়ার্সকে যেমন ঠেকানো যাচ্ছিল না, বোনারকে তেমনি টলাতে পারছিলেন বাংলাদেশের বোলাররা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ক্রিজে থেকে দলের বড় জয়ের ভিত যে তার হাতেই গড়া। অভিষেকেই নিজের চোয়ালবদ্ধ দৃঢ়তার পরিচয় দেওয়া বোনার জানালেন, ব্যাটিং ধরন আর দর্শনে তিনি ভারতের চেতশ্বর পূজারার অনুসারী।
দলের বিপদে দাঁড়িয়ে যাওয়া। এক প্রান্ত আগলা রাখায় পূজারার জুড়ি নেই। কদিন আগে অস্ট্রেলিয়ায় আরেকবার পাওয়া গেছে এই প্রমাণ। বাংলাদেশকে হারাতে উইন্ডিজের জন্য যেন পূজারার ভূমিকাই নিয়েছিলেন বোনার। চট্টগ্রামে সাড়ে ৫ ঘণ্টা অর্থাৎ ৩২৫ মিনিট ক্রিজে ছিলেন এই ডানহাতি । গুরুত্বপূর্ণ চার নম্বরে নেমে ৮৬ রান করতে খেলেছেন ২৪৫ বল। চতুর্থ উইকেটে মায়ার্সের সঙ্গে গড়েন ২১৬ রানের জুটি।
চতুর্থ দিন বিকেলে নেমে পঞ্চম দিনের প্রথম দুই সেশন পার করে দেন মায়ার্স-বোনার। তাতেই ম্যাচ মুঠোয় চলে যায় ক্যারিবিয়ানদের। মায়ার্সের নান্দনিক ক্যারিবিয়ান ছন্দের ড্রাইভ, পুলের ঠিক বিপরীত আঁটসাঁট রক্ষণ আর শক্তপোক্ত মানসিকতায় মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন বোনারও। একের পর এক বল নিয়েছেন মাঝব্যাটে। তাকে প্রলুব্ধ করেও ফল পায়নি বাংলাদেশের বোলাররা। কোন রকম ঝুঁকি নিয়ে দলের বিপদ বাড়াননি ৩২ পেরিয়ে প্রথম টেস্টের স্বাদ পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।
মঙ্গলবার ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে হঠাৎ সবার আলোয় আসা এই জ্যামাইকান পূজারার প্রসঙ্গ তুলতেই সায় দিলেন, ‘আসলেই আমি তা করি (পূজারাকে অনুসরণ)। তার ব্যাটিং দেখতে আমি পছন্দ করি। আমার মনে হয় সে শক্ত মানসিকতার, যেটা আমি তার কাছ থেকে নিতে চাই। কোন কিছুই তাকে ঝামেলায় ফেলে না। আমি তাকে আদর্শ মানি।’
জেতার সম্ভাবনা বাড়ায় সেদিন চা-বিরতির পর ম্যাচ ভিন্ন অ্যাপ্রোচে নেমেছিলেন। আগ্রাসী হতে গিয়ে হাতছাড়া হয়েছে সেঞ্চুরি। মায়ার্সের মতো অভিষেকে তিনিও পেতে পারতেন সেঞ্চুরির স্বাদ। তবে দল জেতাতেই ওসব নিয়ে আক্ষেপ নেই তার, ‘ব্যক্তিগত মাইলফলক অবশ্যই ভাল। কিন্তু আমরা জানি কীভাবে দলের জন্য করতে হয়। অভিষেকে সেঞ্চুরি করতে পারলে ভাল লাগত। কিন্তু এটাই আমার মূল চাওয়া ছিল না। দল জেতাতেই আমি খুশি।’
মহামারির সময়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে যে দুই টেস্ট সিরিজ খেলেছে দুটোতেই স্কোয়াডে ছিলেন বোনার। কিন্তু দলের নিয়মিত তারকারা থাকায় জায়গা হয়নি তার। সেখানে খেলতে না পারলেও বাংলাদেশ সিরিজের প্রস্তুতির জন্য নাকি তা বেশ কাজে লেগেছে, ‘ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডে সুযোগ না পাওয়া হতাশার ছিল কিছুটা। কিন্তু দলের অংশ হয়ে থাকায় আমার সব কিছুতে পূর্ণ সহায়তা ছিল। ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডের অভিজ্ঞতা উপভোগ করেছি। এটা বাংলাদেশ সিরিজের জন্য মানসিকভাবে এবং শারীরিকভাবে প্রস্তুত হতে আমার কাজে লেগেছে।’
প্রথম টেস্ট জিতে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে উইন্ডিজ। সিরিজ নিশ্চিত করতে মিরপুরে দ্বিতীয় টেস্টে অন্তত ড্র করতে হবে তাদের। জিতলে বাংলাদেশকে করতে পারবে হোয়াইটওয়াশ। বোনার জানালেন যে চ্যালেঞ্জের জন্য তারা এসেছিলেন তা মাথায় নিয়েই খেলতে নামবেন আবার, ‘আমি ক্রিকেট খেলা জিততে ভালোবাসি। পরাজয় ঘৃণা করি। সেই ছোটবেলা থেকেই। আমি জ্যামাইকার হয়ে খেলেছি, টানা পাঁচবছর জিতেছি। যেটা ছিল দারুণ অনুভূতি। ক্যারিবিয়ানের বাইরে এসে জেতা, সেরা কিছু করতে চেষ্টা করেছি। আমরা অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী হয়ে সব কিছু প্রাপ্য মনে করছি না। নিজেদের কন্ডিশনে বাংলাদেশ খুব ভাল দল। আমরা জানতাম কাজটা কঠিন, কিন্তু বড় চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত ছিলাম, এখনো আছি।’
Comments