সাহস ও স্বপ্ন ছুটে ক্রিং ক্রিং ক্রিং

প্রতিমা রিকমন। দশম শ্রেণিতে পড়ে। তার বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকার চা-বাগান পালকিছড়ায়। মনু নদীর পাড় ধরে প্রতিদিন প্রায় চার কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে যায় সে, আবার হেঁটেই ফিরে আসে।
দ্য ডেইলি স্টারকে প্রতিমা জানায়, সে বাবা-মায়ের কাছে সাইকেল চেয়েছিল কয়েকবার। কিন্তু, ১২০ টাকা মজুরির চা-শ্রমিক বাবা বাদল রিকমন ও ফুলকুমারী রিকমনে সাধ্য নেই মেয়েকে সাইকেল কিনে দেওয়ার। এ কারণে করোনার পর স্কুল খুললে কিভাবে সে স্কুলে যাবে তা নিয়েই ছিল বড় দুশ্চিন্তা।
কিন্তু, বিদ্যালয় খোলার আগেই গত সোমবার সরকারের কাছ থেকে একটি সাইকেল পাওয়ায় ভীষণ খুশি প্রতিমা।
প্রতিমা বলে, ‘প্রতিদিন সকালে মা-বাবার জন্য রান্না করতে হয়। তাই স্কুলে যেতে প্রতিদিনই দেরি হতো। স্কুল থেকে ফিরতে সন্ধ্যা হয়ে যেত। ক্লান্ত হয়ে পড়তাম। বেশিরভাগ সময় না খেয়েই ঘুমিয়ে যেতাম।’
‘এখন আমি আমার পাশের বাড়ির এক বোনকে নিয়ে সহজে বিদ্যালয়ে চলে যেতে পারবো। খুব ভালো লাগছে। আমার মা-বাবাও খুশি। এখন আমিও ক্রিং ক্রিং বেল বাজিয়ে দ্রুত স্কুলে পৌঁছে যাব,’ যোগ করে সে।
একই রকম কথা বলেছে শ্রাবণী খাড়িয়া, গঙ্গামনি ওরাং ও আরতি মাহালিসহ অনেকে।
তাদের মতো ৩০ ছাত্রী এখন সাইকেল নিয়ে বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করবে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থায়নে তারা এই সাইকেল পেয়েছে।
কুলাউড়া উপজেলা চত্বরে মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরীর উপস্থাপনায় ছাত্রীদের হাতে ওই সাইকেলগুলো তুলে দেন প্রধান অতিথি সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান।
অনুষ্ঠানে বিভাগীয় কমিশনার মো. মশিউর রহমান বলেন, ‘মেয়েদের সাহসী হতে হবে। তাদের স্বপ্ন দেখতে হবে। শিক্ষিত হতে হবে। তাহলে যেকোনো বাধা অতিক্রম করা সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘নারীদের শিক্ষাগ্রহণ করে নিজেদের যোগ্য হিসেবে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে, যাতে চাকরি ছাড়াও যেকোনো ক্ষেত্রে তারা যোগ্যতা বলে স্থান করে নিতে পারে। প্রধানমন্ত্রী নারীদের এগিয়ে নেওয়ার জন্যে যুগান্তকারী উদ্যোগ গ্রহণ করছেন। দুর্গম এলাকার মেয়েরা যাতে সহজে স্কুলে যেতে পারে, তাই তিনি শিক্ষার্থীদের বাইসাইকেল দিয়েছেন।’
কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেছেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতে সবার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছি, যেন কেউ বঞ্চিত না হন। কেউ যেন পিছিয়ে না পড়েন সে বিষয়ে আমরা সজাগ দৃষ্টি রাখছি।’
চাতলাপুর চা-বাগানের অভিরাম বেক ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘উপজেলা প্রশাসনের বিশেষ উদ্যোগের ফলে আমরা এই সুযোগগুলো পেলাম।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমান, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুবুর রহমান রুমন প্রমুখ।
Comments