শীর্ষ খবর

সাগর-রুনি হত্যা: ৯ বছরেও নেই কোনো অগ্রগতি

আরেকটি নিরাশার বছর কাটাল সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহরুন রুনির পরিবার। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ন্যায়বিচার যেন এখনো অনেক দূরেই রয়েছে।
সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারওয়ার ও মেহরুন রুনি। ছবি: সংগৃহীত

আরেকটি নিরাশার বছর কাটাল সাংবাদিক দম্পতি সাগর সারোয়ার ও মেহরুন রুনির পরিবার। নয় বছর পেরিয়ে গেলেও ন্যায়বিচার যেন এখনো অনেক দূরেই রয়েছে।

এখন পর্যন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য তদন্তকারীরা অন্তত ৭৮ বারের মতো সময় চেয়েছেন। কিন্তু, চাঞ্চল্যকর এই হত্যা মামলার কোনো অগ্রগতিই তারা করতে পারেনি।

বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল মাছরাঙ্গার বার্তা সম্পাদক সাগর ও এটিএন বাংলার জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রুনিকে ২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি ভোরে তাদের রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় হত্যা করা হয়। হত্যাকাণ্ডের সময় ফ্ল্যাটটিতে ছিলেন তাদের পাঁচ বছর বয়সী একমাত্র পুত্র মাহির সারোয়ার মেঘ।

সাগরের মা সালেহা মুনির (৬৯) গতকাল টেলিফোনে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, যত সময়ই লাগুক না কেন, তিনি তার পুত্র ও পুত্রবধূ হত্যার বিচার চাইবেন।

‘আমি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ করব, মুজিব বর্ষেই যাতে সাগর-রুনি হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ হয়, তা নিশ্চিত করতে। এটা একটি মাইলফলক হবে’, বলেন তিনি।

গত নয় বছরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার সাত জন কর্মকর্তা মামলাটি তদন্ত করেছেন।

শেরে বাংলা নগর পুলিশ ও পুলিশের গোয়েন্দা শাখার পর ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল মামলাটির তদন্তভার দেওয়া হয় র‌্যাবকে।

অতীতে পুলিশ কর্মকর্তারা দাবি করেছিলেন, তারা মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছেন। তবে, কেবল আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের সময় বাড়ানোর আবেদন ছাড়া তদন্ত কর্মকর্তারা আর কিছুই করেনি।

মামলাটির তদন্তে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৯ সালের নভেম্বরে হাইকোর্টও হতাশা প্রকাশ করেছিলেন।

গত ৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খন্দকার শফিউল আলম মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে ব্যর্থ হন। এ নিয়ে ৭৭ বারের মতো তদন্ত কর্মকর্তারা মামলাটির প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। পরে ঢাকার একটি আদালত র‌্যাবকে মামলাটির অগ্রগতির সম্পর্কে আদালতকে অবগতি করার নির্দেশ দেন। এ নিয়ে ৭৮ বারের মতো মামলাটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার সময় বাড়ানো হয়েছে।

এই হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে সন্দেহভাজন রফিকুল ইসলাম, বকুল মিয়া, মাসুম মিন্টু, কামরুল হাসান ওরফে অরুণ, আবু সাঈদ, ওই বাড়ির দুই নিরাপত্তারক্ষী পলাশ রুদ্র পল ও এনামুল হক এবং নিহত সাংবাদিক দম্পতির ‘বন্ধু’ তানভীর রহমানসহ মোট আট জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরবর্তীতে তানভীর ও পলাশ জামিনে কারাগার থেকে মুক্তি পান।

গতকাল র‌্যাব সদর দপ্তরে সংস্থাটির পরিচালক (লিগ্যাল ও মিডিয়া) লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিক বিল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, তারা মামলাটির তদন্তকাজ শেষ করতে কঠোর প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন পর্যন্ত এই মামলায় ১৬০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়েছে।

ডিএনএ পরীক্ষার জন্য ২৫ জনের নমুনাসহ আরও কিছু প্রমাণাদি যুক্তরাষ্ট্রের একটি ল্যাবে পাঠিয়েছিল র‌্যাব।

‘আমরা ইতোমধ্যে সেখান থেকে প্রতিবেদন পেয়েছি’, বলেন র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা। তবে, প্রতিবেদনের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু বলেননি।

তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির মুখের কাঠামো আঁকা যায়। তদন্ত কর্মকর্তা তা নিয়েই কাজ করছেন।’

সাগর-রুনি যেই ফ্ল্যাটটিতে ভাড়া থাকতেন, যেখানে তাদের হত্যা করা হয়, র‌্যাব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে যাওয়ায় দীর্ঘ ছয় বছর পর গত মঙ্গলবার সেই ফ্ল্যাটটি খোলা হয়েছে। রুনির ভাই নওশের রোমান ও সাগর-রুনির ছেলে মেঘও ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন।

রোমান বলছিলেন, তারা সাধারণত এই বাড়িটির সামনের সড়কটি ব্যবহার করেন না। কারণ, এতে তাদের ভেতর খুব অস্বস্তিকর অনুভূতি তৈরি হয়।

‘কিন্তু, র‌্যাব কর্মকর্তারা ওই বাড়িটি পরিদর্শনে আসবেন বলে আমাকে টেলিফোনে জানিয়েছেন। সে কারণে আমি ও মেঘ এই বাড়িটি আবার দেখার সুযোগটি হাতছাড়া করিনি’, বলেন রোমান।

রোমান আরও বলেন, ‘ছয় বছর পর আমি বাড়িটিতে গেলাম এবং ওই ফ্ল্যাটটির ঘরগুলো ঘুরে দেখলাম। কিছু স্মৃতি আমার সামনে ভাসছিল, আমি প্রার্থনা করলাম... আবেগ যদি শরীরের কোনো অঙ্গ হতো, তাহলে আমরা অনেক আগেই সেটাকে কেটে ফেলতাম।’

ওই বাড়িটি পরিদর্শন শেষে র‌্যাব বলেছে, তারা শিগগিরই এই মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে পারবে বলে আশাবাদী।

Comments

The Daily Star  | English
Sheikh Hasina's Sylhet rally on December 20

Hasina likely to kick off AL campaign with Sylhet rally on Dec 20: Quader

Prime Minister Sheikh Hasina, also the president of the ruling Awami League, will formally kick off the election campaign of the ruling party from a rally in Sylhet likely to be held on December 20.

2h ago