মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বারবার নির্বাচিত হওয়া যায়: প্রধানমন্ত্রী
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র, কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বারবার নির্বাচিত হওয়া যায়, অন্য কিছু লাগে না।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, মুজিববর্ষে গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণ প্রকল্পে অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর করে দেওয়ার জন্য তিনি আরও এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমি আজকে এই মুজিববর্ষ উপলক্ষে আরও অতিরিক্ত ৫০ হাজার ঘর নির্মাণ করার জন্য এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছি। আমরা আরও এক লাখ ঘর তৈরি করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্র মতে, আট লাখ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ৭০ হাজার পরিবারকে ঘর-বাড়ি নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আজ আরও এক লাখ পরিবারকে জমিসহ ঘর করে দেওয়ার জন্য এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে।
তার নেওয়া এই ব্যবস্থা সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সার্ভে করে দেখেছি একটা মানুষও যাতে দেশে গৃহহীন না থাকে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ দুপুরে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (সিসিসি) নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
এদিন রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র এবং কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী নিজ নিজ এলাকায় গৃহহীনদের তালিকা প্রণয়নের আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এলাকায় দেখবেন কোনো লোক গৃহহীন আছে কিনা, আপনারা সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ নেবেন, আমরা কিন্তু ঘর করে দেব। একটি মানুষ গৃহহীন থাকবে না, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলবো ইনশাল্লাহ।’
তিনি বলেন, ‘২০২০ সালে মুজিববর্ষ থেকে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ২০২১, ডিসেম্বর পর্যন্ত আমরা সময় নিয়েছি এবং সেই সময়ের মধ্যে আমরা চাই বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষ ঘর পাবে, তাদের ঠিকানা পাবে। বাংলাদেশে শতভাগ বিদ্যুতায়ন হবে।’
যেসব জায়গায় গ্রিড লাইন রয়েছে সেখানে শতভাগ বিদ্যুতায়ন ইতোমধ্যে শেষ হলেও যেসব জায়গা দুর্গম হওয়ায় গ্রিড লাইন নেওয়া সম্ভব নয় সেসব জায়গায় সোলার প্যানেল এবং সাবমেরিন কেবলের সহায়তায় তার সরকার বিদ্যুৎ পৌঁছে দিচ্ছে, বলেন তিনি।
জনপ্রতিনিধিদেরকে কোভিড ভ্যাকসিন প্রদানে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ভ্যাকসিন নিলেও মাস্ক পরে থাকতে হবে, হাত ধুতে হবে এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। নিজের পাশাপাশি অন্যের সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্যই এটা করতে হবে।’
নিয়ম অনুযায়ী মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর শপথ পড়ান প্রধানমন্ত্রী। এরপর কাউন্সিলরদের শপথ পড়ান স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।
গত ২৭ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (সিসিসি) নির্বাচনে নির্বাচিত মেয়র, ৫৫ জন কাউন্সিলর এবং সংরক্ষিত ১৪ আসনের নারী কাউন্সিলরা এদিন শপথ গ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা নবনির্বাচিত মেয়র এবং কমিশনারদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘জনপ্রতিনিধি হিসেবে দেশের মানুষের কল্যাণ করা, তাদের ভাগ্য পরিবর্তনে কাজ করা- এটাই যেন লক্ষ্য হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার সুফল যেন বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পেতে পারে সেদিকে লক্ষ্য রেখেই আপনারা কাজ করবেন, এটাই প্রত্যাশা।’
তিনি আরও বলেন, জনপ্রতিনিধি হিসেবে জনগণের কাছে আপনারা যে ওয়াদা দিয়ে এসেছেন আর আজকে যে শপথ নিলেন সেটা মাথায় রেখেই আপনারা মানুষের জন্য কাজ করবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচন একবারেই শেষ হয়ে যায় না। মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে পারলে বারবার নির্বাচিত হওয়া যায়, অন্য কিছু লাগে না- এটাই আমরা বিশ্বাস করি।’
তিনি আরও বলেন, আপনারা আজকে শপথ নিয়ে নিজ নিজ এলাকার মানুষের কাছে যাবেন এবং সার্বিকভাবে যেসব উন্নয়নের কর্মসূচিগুলো আমরা হাতে নিয়েছি যথাযথভাবে সেগুলো যেন বাস্তবায়িত হয়। এখানে কোনোরকম ঘাটতি যেন দেখা না দেয় এবং যেন দ্রুত হয়- সেটাই আমরা চাই।
প্রধানমন্ত্রী করোনার মধ্যে সাহস করে ভোটকেন্দ্রে আসায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ভোটারদের অভিনন্দন জানান এবং বলেন তার সরকার চট্টগ্রামের উন্নয়নে যেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করছে তার সুফল ইতোমধ্যে মানুষ পেতে শুরু করেছে।
তিনি মেয়র ও কাউন্সিলরদের অভিনন্দন জানিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তারা যেহেতু জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে এসেছেন, তাই জনগণের সেবাতেই নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখবেন।
এই করোনাভাইরাসের সময়ও যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে সেখানে ভোটাররা যারা ভোট দিতে গেছেন এবং যারা নির্বাচন পরিচালনায় সম্পৃক্ত ছিলেন তাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রী ধন্যবাদ জানান।
তিনি বলেন, নিজেরা খালি চোখে দেখলেই বুঝবেন পারবেন ’৯৬ সালের আগে বা ২০০৯ সালের আগে চট্টগ্রাম কেমন ছিলো, আর এখন কেমন। কেবল চট্টগ্রাম নয় সারা বাংলাদেশেই তার সরকার উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছে।
‘দেশের কল্যাণে কাজ করলে করা যায়, সেটা আমরা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি,’ বলেন তিনি।
কোনো দেশের উন্নয়নে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ যে জনসমর্থন সেটা জনগণের কাছ থেকে পাওয়ায় তিনি দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, এখানে জনগণের সমর্থনটা হচ্ছে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, যেটা আমরা পাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকারের পঞ্চবার্ষিকী, ১০ ও ২০ বছর মেয়াদি প্রেক্ষিত এবং ডেল্টা মহাপরিকল্পনা ২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আগামীর বাংলাদেশ হবে উন্নত, সমৃদ্ধ এক দেশ এবং সেই পরিকল্পনাটাই দিয়ে গেলেন।
করোনাকালিন অর্থনীতির স্থবিরতা কাটাতে তার সরকারের দেওয়া ২৩ দফা প্রণোদনার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘অর্থনীতি যেন স্থবির না হয়ে যায় সেজন্য আমি প্রণোদনা দিয়েছি। যেখানে কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ, শিক্ষক থেকে শুরু করে সকলকে দিয়েছি, যতটুক সাধ্যে কুলিয়েছে। কাউকেই আমি বাদ দেইনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের জীবনের স্থবিরতা দূর করতেই তার সরকারের এসব ব্যবস্থা নেওয়া। সেইসঙ্গে প্রণোদনা ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলসহ অন্যান্য খাত থেকেও তিনি করোনাকালিন জনগণকে সহযোগিতা করেছেন।
তিনি আরও জানান, মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় উপাসনালয়, মাদ্রাসায় এমনকি নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকরাও সহযোগিতা পেয়েছেন।
Comments