ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন

‘কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না’

সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হবে কিনা, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা এমন আশঙ্কা নিয়ে চতুর্থ ধাপে আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
ঠাকুরগাঁওয়ে এক সভায় বক্তব্য রাখছেন কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগম। ছবি: ভিডিও ফুটেজ থেকে নেওয়া

সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন হবে কিনা, ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারবেন কিনা এমন আশঙ্কা নিয়ে চতুর্থ ধাপে আগামীকাল ১৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।

ভোটারদের মাঝে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছে কেন্দ্রীয় মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের বক্তব্যে। গত বুধবার ও বৃহস্পতিবার পৌরসভার ১, ২ ও ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচনী পথসভায় প্রকাশ্যে হুমকি প্রদান করেন তারা।

গতকাল শুক্রবার এসব বক্তব্যের ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা যায় বিভিন্ন মহলে।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে মাহমুদা বেগম বলতে শোনা যায়, ‘যাদের মনে ধানের শীষের পীড়িত আছে, আত্মীয়তা আছে তারা কী করবেন? ভোট কেন্দ্রে যাবেন না, তাদের যাওয়ার প্রয়োজন নেই। ১৩ তারিখে ঠাকুরগাঁও ছেড়ে চলে যাবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যারা নৌকায় ভোট দিতে না চান, তারা ঠাকুরগাঁওয়ের পাশে আছে বীরগঞ্জ, ঠাকুরগাঁওয়ের পাশে আছে পঞ্চগড়, চলে যাবেন সেখানে। কুটুমবাড়ি বেড়াতে যাবেন, আত্মীয়ের বাড়ি বেড়াতে যাবেন। আপনাদের ১৪ তারিখে ঠাকুরগাঁওয়ে দেখতে চাই না। যারা নৌকায় ভোট দেবেন না, তারা ঠাকুরগাঁও থেকে বিদায় নেবেন।’

‘আমরাও বলতে চাই, আমরাও আছি, আমরাও পাহারাদার আছি। আমরাও ঠাকুরগাঁও থেকে যাবো না। নৌকা নিয়েই, তবে আমরা ঢাকা ফিরে যাবো। নৌকা ছাড়া আমরা ঢাকায় যাচ্ছি না। আপনাদের বলতে চাই, এসেছি যখন, যাওয়ার জন্য নয়,’ যোগ করেন তিনি।

নেতা–কর্মীদের উদ্দেশ্যে মহিলা আওয়ামী লীগের এই নেত্রী আরও বলেন, ‘একদম পরিষ্কার ভাষায় বলতে চাই, খাই-দাই আমি জব্বারের, গান সালামেরটা গাইব না।’

‘কালকে থেকে রাস্তায় কোনো ধানের শীষের পোস্টার আমরা দেখতে চাই না। ধান বলে কোনো কথা নাই। ধানের শীষ বলে কোনো কথা নাই। আমরা শুধু দেখতে চাই নৌকা আর নৌকা। চারদিকে থাকবে শুধু নৌকার পোস্টার, কোনো ধান থাকবে না। যদি ধান থাকে, তবে ধরে নেব এখানে আওয়ামী লীগ নেই।’

‘যদি আওয়ামী লীগ থাকে, আওয়ামী লীগের একজন সৈনিক বেঁচে থাকে, তাহলে সেখানে ধানের শীষের পোস্টার থাকতে পারে? তাহলে কালকে সকালে কী হবে, একটা ধান থাকবে না এখানে, কোনো ধান নাই, কীসের ধান? ধান বহুত আগে বিদায় হয়ে গেছে দেশ থেকে। আছে শুধু নৌকা, নৌকা আর নৌকা। কাল থেকে নৌকা দেখতে চাই। এর বাইরে কিছু নাই।’

‘কালকে থেকে নো ধানের শীষ, নো ধানের শীষের পোস্টার। আপনারা কী আওয়ামী লীগ করেন, কী শ্রমিক লীগ করেন, কী ছাত্রলীগ করেন, কী যুবলীগ করেন- কালকে যদি ধানের শীষের পোস্টার দেখি, আমি আপনাদের ধিক্কার জানাবো। আমি আপনাদের ঘৃণা করব।’

‘যদি না-ই পারেন, আমারে জানায় দিয়েন। যদি ছুড়ি-মুড়ি না থাকে, কেঁচি-মেঁচি না থাকে তাহলে আমারে জানায় দিয়েন। আমিই যথেষ্ট।’

এই বক্তব্যের বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুমান আরা বেগম বলেন, ‘ধানের শীষের ভোট তলানিতে ঠেকেছে। নিশ্চিত পরাজয় জেনে মাহমুদা আপার বক্তব্য এডিট করে বিএনপির লোকজন ছড়িয়ে দিতে পারে। ভোটারের ওপর আমাদের আস্থা আছে। আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা কোথাও এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন না।’

ধানের শীষের প্রার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘মহিলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদা বেগমসহ আওয়ামী লীগের অনেক নেতা প্রকাশ্যে এমন বক্তব্য দেওয়ার পর ধানের শীষের কর্মীদের নৌকার কর্মীরা নানাভাবে হুমকি দিচ্ছেন। এলাকায় প্রবেশেও বাধা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ ভোটাররাও শঙ্কিত। ভোটারদের হুমকি দেওয়ার ভিডিওর সিডিসহ রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েও কোনো ফল হচ্ছে না।’

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী অফিস পোড়ানো থেকে বিভিন্ন সাজানো মামলায় যুবদলের জেলা সভাপতি চৌধুরী মাহাবুল্লাহ মো. আবু নূরসহ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নেতা-কর্মীকে আটক করা হয়েছে এবং আরও অনেক নেতা-কর্মীর বাড়িতে পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে বলেও দাবি করেন তিনি।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল হালিম বলেন, ‘এ ধরণের বক্তব্য নির্বাচনের সম্পূর্ণ পরিপন্থী ও শিষ্টাচার বিরোধী।’

এ বিষয়ে রিটার্নিং অফিসার ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জিলহাজ উদ্দিন বলেন, ‘পথসভায় ভোটারদের এলাকা ছাড়ার হুমকির বিষয়টি জানা নেই। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘ভোটাররা যাতে নির্বিঘ্নে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারেন সেজন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নেওয়া হবে।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

1h ago