এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া সম্ভব ছিল না: নাফীস

অবসরের ঘোষণা দিয়ে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জানালেন, কোনো খেদ নেই তার, ভালোবাসায় মোড়ানো ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি তৃপ্ত।
Shahriar Nafees
ছবি: ফিরোজ আহমেদ

শাহরিয়ার নাফীসের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের শুরুটা যত আলো ঝলমলে, শেষটা ঠিক উল্টো। ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে তাকে মনে করা হতো বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের সব সময়ের সেরাদের একজন। এমনকি দলের ভবিষ্যৎ অধিনায়কের তালিকাতেও ছিলেন তিনি। সেসব অনেক কিছুই পরে পূর্ণতা পায়নি। তবে আনুষ্ঠানিক অবসরের ঘোষণা দিয়ে এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান জানালেন, কোনো খেদ নেই তার, ভালোবাসায় মোড়ানো ক্যারিয়ার নিয়ে তিনি তৃপ্ত।

শনিবার সতীর্থ আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে অবসরের ঘোষণার সঙ্গে বিদায়ী সংবর্ধনা নিয়েছেন তিনি।দুজনের চোখেমুখে খেলা করে গেছে আবেগ। নাফীসের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক ২০০৫ সালে। ঘরোয়া ক্রিকেট শুরু করেছিলেন তার এক বছর আগে। সবমিলিয়ে ১৬ বছরের দীর্ঘ পথচলা।

মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানের পর নাফীস জানালেন, বাস্তবতার ভাবনাই তার কাছে বড়, ‘আমি আর খেলব না সেটার জন্য কষ্ট লাগছে, ব্যাপারটা তা না। একটা অদ্ভুত অনুভূতি। একটা জিনিস বলব, আমি যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, অনেক ভেবেচিন্তে নিয়েছি।’

‘যখন মনে করেছি, ক্রিকেটে খেলোয়াড় হিসেবে আর কিছু কন্ট্রিবিউট করতে পারব না, তখন ভেবেছি ক্রিকেটের সঙ্গেই থাকব। মনে হয়েছে, এটাই আদর্শ সময়। ক্রিকেটার হিসেবে যা দিতে পারতাম, অন্য ভূমিকায় ক্রিকেটকে বেশি দিতে পারব। কাজেই কষ্ট হয়নি।’

এই শেষের সঙ্গেই আছে আরেকটা শুরু। এদিন থেকেই বিসিবির ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে যোগ দিচ্ছেন নাফীস। সংগঠক হিসেবে কাজ করার ক্যারিয়ার শুরু হচ্ছে তার।

টেস্ট অভিষেকের এক বছরের মাথায় ২০০৬ সালে বিপুল আলোচনায় আসেন নাফীস। তখনকার পরাক্রমশালী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে করে ফেলেন সেঞ্চুরি। দারুণ স্কিলে শেন ওয়ার্ন, স্টুয়ার্ট ম্যাগগিলদের মতো স্পিনারদের করেন তুলোধুনো। পরে পরিণত ক্রিকেট বোধে দেশের আগামীর বড় একজন ভাবা হচ্ছিল তাকে।

২০০৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচের অধিনায়ক ছিলেন নাফীস। অথচ বদলে যাওয়া বাস্তবতায় সেটিই হয়ে আছে তার একমাত্র টি-টোয়েন্টি। ৭৫ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে অবশ্য আলো ছড়িয়েছেন তিনি। ৪ সেঞ্চুরিতে সেখানে ২ হাজার ২২১ রান তার। ২০০৭ বিশ্বকাপে অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের ডেপুটিও ছিলেন। পরবর্তী অধিনায়ক হওয়ার দৌড়েও ছিলেন সবার আগে। এমন সম্ভাবনার পরও ইন্ডিয়ান ক্রিকেট লিগে (আইসিএল) খেলতে গিয়ে হন নিষিদ্ধ। পরে ফিরে এসে জাতীয় দলেও খেলেন। কিন্তু বাংলাদেশের ক্রিকেটে নাফীসের আগের সেই প্রভাব আর থাকেনি।

ঘরোয়া ক্রিকেটে এরপর টানা রান করেও নির্বাচকদের মন গলাতে পারেননি বাঁহাতি এই ওপেনার। বারবার উপেক্ষিত থাকার পর এক সময় হাল ছেড়ে দেওয়ার কথাও শোনা যায় তার কাছে। তবে অবসরের বেলায় এসে কোনো হতাশা বা আক্ষেপ রাখলেন না। বরং জানালেন, এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা নাকি পাওয়াই সম্ভব ছিল না, ‘আমার কোনো অতৃপ্তি নেই। আরও বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেললে হয়তো পরিসংখ্যান অনেক ভালো হতে পারত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তিটা বিচার করি না। খেলে বাংলাদেশের মানুষের, গণমাধ্যমের ভালোবাসা পেয়েছি। আমার মনে হয়, এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা কোনো খেলোয়াড়ের পাওয়া সম্ভব না।’

মাঠ থেকে বিদায় নিতে পারেননি। সেটা বাংলাদেশের অনেক ক্রিকেটারই পাননি। তাই আনুষ্ঠানিক বিদায় নিতে পারাকেই অনেক বড় সৌভাগ্য মনে হচ্ছে নাফীসের, ‘আমাদের অনেক সাবেক ক্রিকেটার এরকম বিদায় পাননি। সেদিক থেকে সৌভাগ্যবান। যদি কোভিড না থাকত, তাহলে হয়তো খেলে বিদায় নিতে পারতাম। তারপরও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও কোয়াব (ক্রিকেটার্স অ্যাসসিয়েশন) যতটুকু করেছে তাতে ভীষণ খুশি।’

বিদায় বেলায় নিজের পরিবারের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন প্রাক্তন হয়ে যাওয়া নাফীস, ‘আমার বয়স যখন ১০, তখন থেকে আমার বাবা-মা আমাকে খেলার জন্য সমর্থন যুগিয়েছেন। এরপর সবচেয়ে বড় অবদান আমার স্ত্রীর। আমি অনেক কম বয়েসে বিয়ে করি। জীবনে অনেক ওঠানামা ছিল। সে আমার পাশে ছিল সবসময়।’

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago