বাংলাদেশের ৫০ বছর দ্য ডেইলি স্টারের ৩০ বছর উদযাপন

​লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে কাজ করে সমাজকে আলোকিত করা ব্যক্তিরা খুব কম ক্ষেত্রেই স্বীকৃতি পান। তেমনি একজন যশোরের ইজাহার আলী। তিনি গত ৬২ বছর ধরে পাঠকদের দোরগোড়ায় সংবাদপত্র বিতরণের কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি ভোর ৪টার আগে উঠে নিরলসভাবে কাজ করেন রাত ৯টা পর্যন্ত।

লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে কাজ করে সমাজকে আলোকিত করা ব্যক্তিরা খুব কম ক্ষেত্রেই স্বীকৃতি পান। তেমনি একজন যশোরের ইজাহার আলী। তিনি গত ৬২ বছর ধরে পাঠকদের দোরগোড়ায় সংবাদপত্র বিতরণের কাজ করছেন। প্রতিদিন তিনি ভোর ৪টার আগে উঠে নিরলসভাবে কাজ করেন রাত ৯টা পর্যন্ত।

৭৪ বছর বয়সী ইজাহার ডাকাতিয়া গ্রামের লোকদের সঙ্গে গ্রামে মাধ্যমিক স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্কুলের শিক্ষকদের বেতন দিয়ে আসছেন। স্কুলটি এখন এমপিওভুক্ত হয়েছে।

ফসলের খেতে পানির সংকট নিরসনে গঠন করেছেন সমবায় সমিতি। ১২টি দরিদ্র পরিবারের ঘর তৈরিতে সহায়তা করেছেন এবং নিজস্ব অর্থায়নে একটি মাদ্রাসা ও মসজিদও প্রতিষ্ঠা করেছেন।

অন্যদিকে, আবদুল আজিজ ২০২০ সালে অবসর নেওয়ার আগে ৪৩ বছর নিরলসভাবে ওয়েব ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেছেন। ১৯৮২ সালে খবরের কাগজের ছাপাখানায় কাজ করার সময় ডান হাতের একটি আঙুল হারিয়েছেন। কিন্তু, কখনও কাজ বন্ধ করেননি। আজিজ যুক্তরাজ্যে প্রশিক্ষণ নেওয়া একমাত্র প্রেস কর্মচারী। সহকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ‘ওস্তাদ’ নামে।

‘অবসর নেওয়ার পরেও আমি ঘুমের মধ্যে মেশিন চালানোর স্বপ্ন দেখি,’ আজিজ বলেন, ‘প্রিন্টিং প্রেস আমার জীবনের অংশ হয়ে গেছে।’

দ্য ডেইলি স্টার ৩০তম বার্ষিকীতে আজ তাদের অবদানকে স্বীকৃতি দিয়েছে। মানুষকে শিক্ষিত ও আলোকিত করার জন্য তাদের সংগ্রামের অনুপ্রেরণার প্রতীক হিসেবে  একটি করে ক্রেস্ট ও এক লাখ করে টাকা দিয়ে সম্মানিত করা হয়েছে।

ইজাহার আলী ও আব্দুল আজিজ

দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক লতিফুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মধ্য দিয়ে এবং ঔপনিবেশিক আমল থেকে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাস নিয়ে একটি তথ্যচিত্র দেখানোর মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত ছিলেন ভারতীয় রাজনীতিবিদ, লেখক, প্রাক্তন কূটনীতিবিদ এবং ২০০৯ সাল থেকে লোকসভার সদস্য শশী থারুর।

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনামের সঙ্গে আলাপকালে থারুর দক্ষিণ এশিয়ায় গণমাধ্যমের স্বাধীনতার বিষয়ে কথা বলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের উপস্থিতি এবং নজরদারি দিয়ে গণমাধ্যম কীভাবে পরিবর্তিত হচ্ছে তা তুলে ধরেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটি এতটা হতাশাজনক নয়। এমনকি পাকিস্তানের সামরিক শাসনের মধ্যে চ্যালেঞ্জ ছিল। বাংলাদেশে ডেইলি স্টার ও প্রথম আলো চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও এগিয়েছে। ভারতের গণমাধ্যমের অনেকগুলোই বিক্রি হয়ে গেলেও, এখনও ছোটখাটো কিছু ওয়েবসাইট ভিন্নমত তুলে ধরছে।’

‘এখনও অনেক সাংবাদিক আছেন যারা তাদের লক্ষ্য ও সমাজের প্রতি তাদের কর্তব্যে বিশ্বাসী,’ বলেন তিনি।

তিনি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ায় গণতন্ত্র সঠিক পথে যাচ্ছে না এবং জাতীয়তাবাদী মনোভাব বাড়ছে।

দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক ও প্রকাশক মাহফুজ আনাম তার বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর উদযাপন করতে চলেছে সেই বছরই ডেইলি স্টারের ৩০ বছর পূর্তি উদযাপন করাটা সৌভাগ্যের ব্যাপার।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে সামরিক শাসন থেকে বেরিয়ে গণতন্ত্র অর্জন করেছে। এ পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ও আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যা কিছু অর্জন করেছে তার প্রতিটি অর্জন দ্য ডেইলি স্টার উদযাপন করছে।’

বাংলাদেশে মুক্ত গণমাধ্যমের প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, একটি সমাজের সমস্যাগুলো কোথায় এবং তা থেকে উত্তরণের পথ দেখায় মুক্ত গণমাধ্যম। জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও জনগণের স্বপ্নের কথা তুলে ধরে মুক্ত গণমাধ্যম।

মুক্ত গণমাধ্যমের সঙ্গে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ সমৃদ্ধি জড়িয়ে রয়েছে উল্লেখ করে ডেইলি স্টার সম্পাদক বলেন, ‘দেশের উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে দুর্নীতি বিস্তার, অব্যবস্থাপনা ও সম্পদের অপচয়ের ঝুঁকিও বাড়ে। একমাত্র মুক্ত গণমাধ্যমই বাংলাদেশের জনগণ ও জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সরকারের কাজে লাগতে পারে, অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানের পক্ষে যা সম্ভব নয়।’

এসময় তিনি স্বাধীন গণমাধ্যমকে সন্দেহের চোখে না দেখার অনুরোধ জানিয়ে সরকারকে গণমাধ্যমের সঙ্গে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, শুধু স্বাধীন সাংবাদিকতাই পারে সত্য তথ্য দিতে। এই সময়ে এসে সরকারের যেমন সম্পদ, বিনিয়োগ আর সুশাসন দরকার ঠিক তেমনি এখন দরকার সত্য জানার।

মাহফুজ আনাম বলেন, সম্পদের সীমাবদ্ধতার পরও কোভিড-১৯ মোকাবিলায় সফল হয়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সেইসব অল্প কিছু দেশের মধ্যে অন্যতম যারা বিনা খরচে টিকাদান শুরু করেছে।

দ্য ডেইলি স্টারের ৩০ বছরের এই যাত্রায় যারা পাশে ছিলেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে জনগণের অধিকার রক্ষা ও সত্য তুলে ধরে পাঠকদের সেবায় নিয়োজিত থাকার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করেন মাহফুজ আনাম। তিনি দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক প্রয়াত লতিফুর রহমানের স্মৃতি স্মরণ করেন যিনি এদেশে স্বাধীন সাংবাদিকতার বিকাশে নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন।

আরও পড়ুন: 

দ্য ডেইলি স্টার সেলিব্রেটস গ্লোরিয়াস ফিফটি ইয়ার্স অব ইনডিপেনডেন্স কারেজিয়াস থার্টি ইয়ার্স অব জার্নালিজম

Comments

The Daily Star  | English
BNP office in Nayapaltan

Column by Mahfuz Anam: Has BNP served its supporters well?

The BNP failed to reap anything effective from the huge public support that it was able to garner late last year.

8h ago