জিততে হলে দুই রেকর্ড ভাঙ্গতে হবে বাংলাদেশকে

ছবি: ফিরোজ আহমেদ

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্রুত গুটিয়ে দেওয়ার চ্যালেঞ্জ ছিল বাংলাদেশের। চতুর্থ দিন নেমে সেই কাজটা দারুণভাবে করলেন বোলাররা। পেসার আবু জায়েদ রাহি শুরুতেই হানলেন জোড়া আঘাত। টার্ন-বাউন্সে প্রতিপক্ষকে খাবি খাইয়ে উইকেট নিলেন তাইজুল ইসলাম। দ্বিতীয় ইনিংসে হুড়মুড়িয়ে পড়ল ক্যারিবিয়ানরা। তবু উইকেটের পরিস্থিতি বিচারে রান তাড়ায় বাংলাদেশের সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ।

রোববার লাঞ্চের পর পরই গুটিয়ে ১১৭ রানে শেষ হয় উইন্ডিজের দ্বিতীয় ইনিংসে। প্রথম ইনিংসে নেওয়া ১১৩ রানের সঙ্গে ২৩০ রানের লিড তাদের। সিরিজে সমতা ফেরাতে বাংলাদেশকে তাই করতে হবে ২৩১ রান।

এই রান তাড়া করে জিততে হলে বাংলাদেশকে ভাঙ্গতে হবে দুটি রেকর্ড। নিজেদের টেস্ট ইতিহাসে এতরান তাড়া করে জেতার নজির নেই বাংলাদেশের। এর আগে দেশের মাঠে ২০১৪ সালে  জিম্বাবুয়ের ১০১ রান তাড়া করে জিততে গিয়েই ৭ উইকেট পড়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ের। দেশের বাইরে ওয়েস্ট ইন্ডিজের  বিপক্ষে ২০০৯ সালে ২১৭ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। 

মিরপুরের মাঠেও কোন দল এরচেয়ে বেশি রান তাড়া করে জেতেনি। ২০১০ সালে বাংলাদেশের দেওয়া ২০৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে জিতেছিল ইংল্যান্ড।  

লাঞ্চের পর নেমে আর ৪.৫ ওভার টিকেছে সফরকারীদের ইনিংস। ২১১ রানের লিড নিয়ে লাঞ্চে যাওয়া উইন্ডিজের সামনে লিডটা অনায়াসে আড়াইশ ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু মিনিট বিশেকেই হয়ে যায় সব তছনছ। তাতে মূল ভূমিকা তাইজুলের।

মাত্র ৩৬ রানে এই বাঁহাতি স্পিনার তুলেছেন ৪ উইকেট। প্রথম ইনিংসে নিষ্প্রভ থাকা নাঈম হাসানের ঝুলিতে গেছে ৩ উইকেট। সকালে প্রথম দুই উইকেট নেন আবু জায়েদ।

প্রথম ইনিংসের সেরা জশুয়া দা সিলভা আর এনক্রুমা বোনার ছিলেন বলে বেশ স্বস্তিতে ছিল উইন্ডিজ। তাদের স্বস্তি উবে যায় তড়িঘড়ি।  তাইজুলের দারুণ টার্ন করে বল ঠেকাতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দেন জশুয়া।

প্রথম ইনিংসের আরেক হিরো আলজেরি জোফেস এসেই মারার তরিকা নিয়েছিলেন। নাঈম হাসানকে এক ছক্কায় উড়িয়েওছিলেন। কিন্তু তার আগ্রাসী অ্যাপ্রোচ এবার থেমেছে দ্রুতই। তাইজুলের বলে চালাতে গিয়ে শর্ট কাভারে দেন ক্যাচ।

নাঈমকে রিভার্স সুইপ মারতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তিনি। পুরো ইনিংসে খেলেছেন ১২০ বল। তাতে সর্বোচ্চ ৩৮ রান তার। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে রাহকিম কর্নওয়ালের ক্যাচ ডিপ মিড উইকেটে দারুণ দক্ষতায় হাতে জমান মুশফিকুর রহিম।

সকালে নেমে জুতসই একটা শুরু পায় বাংলাদেশ।  নাইটওয়াচম্যান জোমেল ওয়ারিকন আগের দিনের বিকেলের কঠিন কিছু সময় টিকে গিয়েছিলেন। এই কাটা সরানোর দরকার ছিল বাংলাদেশের। সেই কাজ করে দেন জায়েদ। সকালের প্রথম ওভার বাদ দিলে তিনি ছিলেন দারুণ। তার ভেতরে ঢোকা বল সামলানোর সামর্থ্য ছিল না ওয়ারিকনের। পরিষ্কার এলবিডব্লিউ।

এরপর আগের ম্যাচের হিরো কাইল মেয়ার্সকে বারবার বিপদে ফেলতে থাকেন জায়েদ। উইকেটের পেছনে ক্যাচও দিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাংলাদেশ রিভিউ না নেওয়ায় সেই যাত্রা পার পেয়ে যান।

কিন্তু তাকে এবার  বাংলাদেশের চিন্তার কারণ হতে দেননি জায়েদ। ওভার দ্য উইকেট বল করতে এসে ভেতরে ঢুকিয়েছিলেন। মেয়ার্স রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউ থেকে বাঁচতে পারেননি।

জার্মেইন ব্ল্যাকউড চট্টগ্রামে প্রথম ইনিংসে রান পেয়েছিলেন। এরপর হতাশ করেছেন সফরকারীদের। তবে ব্যাটিংয়ের ধরণে বরাবরই তিনি বিপদজনক। দ্রুত রান তুলে চাপ বাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষে। এবার শুরুটাও হয়েছিল তেমন। জায়েদের বলে দারুণ এক ছয় মেরে দেন তেমন আভাস।

তার ভয় তাড়িয়ে দেন তাইজুল ইসলাম আর লিটন দাস। তাইজুলের টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়া বলে পরাস্ত হন ব্ল্যাকউড। বাড়তি লাফানো বল ব্যাটে না লাগায় বিপদ ছিল না। কিন্তু কিপার লিটন দারুণ ক্ষিপ্রতায় তা ধরে স্টাম্পিং করে আনেন মহা মূল্যবান উইকেট।

এরপর দারুণ গুরুত্বপূর্ণ এক জুটি পেয়ে যায় উইন্ডিজ। বোনার-জশুয়া মিলে সপ্তম উইকেটে এনে ফেলেছেন ২৫ রান, ম্যাচের প্রেক্ষিতে যা বেশ জুতসই। সেটা আরও বড় হয়নি বাংলাদেশের বোলারদের মুন্সিয়ানায়।

আগের দিন ৩ উইকেটে ৪০ রান নিয়ে শেষ করে উইন্ডিজ চতুর্থ দিনে বাকি ৭ উইকেটে যোগ করতে পারে আর কেবল ৭৭ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম ইনিংস: ৪০৯

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ২৯৬

ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় ইনিংস: ৫২.৫ ওভারে ১১৭ (ব্র্যাথওয়েট ৬, ক্যাম্পবেল ১৮, মোসলি ৭, বনার ৩৮, ওয়ারিকান ২, মেয়ার্স ৬, ব্ল্যাকউড ৮, জশুয়া ২০, আলজেরি ৯, কর্নওয়াল ১, গ্যাব্রিয়েল ১* ; তাইজুল ২/৩৬, নাঈম ৩/৩৪, মিরাজ ১/১৫, জায়েদ ২/৩২ )।

Comments

The Daily Star  | English

Liberation war a founding pillar of the state: Nahid Islam

Clarifies NCP's stance opposing religious extremism, secularist ideologies

28m ago