দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষে একজন গুলিবিদ্ধসহ আহত ৫
নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী পৌরসভা নির্বাচনে ভোট চলাকালে দুই মেয়র প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, সংঘর্ষ, ককটেল বিস্ফোরণ ও গুলি বিনিময়ের ঘটনা ঘটেছে। এতে মোহন নামের এক যুবক গুলিবিদ্ধসহ অন্তত পাঁচ জন আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া, ভোটারদের জোরপূর্বক নির্দিষ্ট প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করার অভিযোগে দুই এজেন্টকে আটক করেছে পুলিশ।
কাউন্সিলর প্রার্থীদের দু’পক্ষের লোকজনের ধাওয়া-পালটা ধাওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে একটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত সোনাইমুড়ী পৌরসভার ছয় নম্বর ভাটরা কেন্দ্রে ও আট নম্বর কাঁঠালিয়া মোহাম্মদিয়া ইসলামিয়া আরাবিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র এবং এক নম্বর কৌশল্যারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসব ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ সোনাইমুড়ী উপজেলার বাহারকুট গ্রামের আবদুল হকের ছেলে মোহনসহ (১৮) অপর দুই আহতের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- উলুপাড়া গ্রামের স্বপন মিয়ার ছেলে মনির হোসেন (২২) ও আমিরাবাদ গ্রামের আবুল হাসেমের ছেলে সালাউদ্দিন (২৯)।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহতরা জানান, তারা সবাই আওয়ামী লীগ প্রার্থীর নৌকা প্রতীকের সমর্থক। সকালে ভোট শুরু হওয়ার পর তারা পৌরসভার বাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশে একটি বাড়িতে বসে ছিলেন। সাড়ে ১০টার দিকে স্বতন্ত্রপ্রার্থী যুবলীগ নেতা খোরশেদ আলমের (মোবাইল প্রতীক) একদল সমর্থক তাদের ওপর অতর্কিতে হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি চালায় ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে মোহনের পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে গুলি লাগে। এসময় দৌঁড়ে পালাতে গেলে মনির ও সালাউদ্দিনসহ আরও চার জনকে কুপিয়ে এবং পিটিয়ে জখম করে হামলাকারীরা।
আহত মনির হোসেন বলেন, ‘কোনো প্রকার উস্কানি ছাড়াই মোবাইল প্রতীকের লোকজন আমাদের ওপর হামলা চালিয়েছে। মোহন, সালাউদ্দিনসহ আমরা তিন জন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি আছি। মোহনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।’
বাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দায়িত্বে থাকা এসআই রুবেল মিয়া জানান, সকাল থেকে কেন্দ্রে সুষ্ঠুভাবে ভোট চলছে। সকালে কেন্দ্রের বাইরে দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে বলে শুনেছি।
পৌরসভার কৌশল্যারবাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বেলা ১১টার দিকে ভোট দিতে আসা কয়েকজনকে জোরপূর্বক সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর চশমা প্রতীকে ভোট দিতে বলে দুজন এজেন্ট। পরে ভোটারদের অভিযোগের ভিত্তিতে ওই দুই এজেন্টকে আটক করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন দায়িত্বে থাকা পুলিশের এসআই ফারুক হোসেন।
কাঁঠালিয়া কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের দু’পক্ষের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ বেলা ১টায় স্থগিত করা হয়।
কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ পরিদর্শক দুলাল মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালী সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও পৌর নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, ‘পৌরসভার আট নম্বর কেন্দ্রে কাউন্সিলর প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত রাখা হয়েছে।’
নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন বলেন, ‘একটি কেন্দ্রের বাইরে কয়েকজন উশৃঙ্খল ব্যক্তি গোলযোগ করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু পুলিশি তৎপরতার কারণে তা ব্যর্থ হয়। সর্বোপরি চাটখিল ও সোনাইমুড়ী পৌরসভার ভোট অত্যন্ত সুন্দর ও সুশৃঙ্খল পরিবেশের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
অপরদিকে, লক্ষ্মীপুরের রামগতি পৌরসভার ভোট প্রথমবারের মতো ইভিএমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। নির্বাচনে এজেন্টদের জোর করে কেন্দ্র থেকে বের করে দেওয়া এবং বুথের মধ্যে ভোটারদের হুমকি প্রদর্শন করে নৌকা প্রতীকে ভোট দিতে বাধ্য করাসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ এনে ধানের শীষের প্রার্থী শাহেদ আলি পটু, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবি আবদুল্লাহ ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর হোসেন বেলা ১১টার দিকে ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।
রামগতি পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মুহাম্মদ নাজিম উদ্দিন তিন প্রার্থীর ভোট বর্জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
Comments