সাগরপাড়ে সাবেকদের মিলনমেলায় ব্যাটে-বলে উজ্জ্বল রফিক

লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে অংশগ্রহণকারী ছয়টি দলে খেলছেন রফিক, হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট ও খালেদ মাহমুদ সুজনসহ বাংলাদেশের সাবেক তারকারা। মিলনমেলায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের আরও অনেক খেলোয়াড়।
rafique
ছবি: সংগৃহীত

দুই ম্যাচে ব্যাট হাতে ঝড় তুলে ৫১ রান, আঁটসাঁট বোলিংয়ে উইকেট ৩টি। সাগরপাড়ে ঝাউবনে ঘেরা মাঠে উত্তাল জলরাশির মতো যেন আরও একবার গর্জে উঠলেন মোহাম্মদ রফিক! স্বীকৃত কোনো ম্যাচ কিংবা প্রতিযোগিতাতে না হলেও বাংলাদেশের সাবেক এই ক্রিকেটারের নৈপুণ্যে আলোড়িত হলো কক্সবাজারের শেখ কামাল আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম।

বৃহস্পতিবার পর্দা উঠেছে লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির। একেবারে নতুন এই সংস্করণে অংশগ্রহণকারী ছয়টি দলে খেলছেন রফিক, হাবিবুল বাশার সুমন, মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, আকরাম খান, নাঈমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট ও খালেদ মাহমুদ সুজনসহ বাংলাদেশের সাবেক তারকারা। মিলনমেলায় তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের আরও অনেক খেলোয়াড়।

দশ ওভার দশ বলের এমন প্রতিযোগিতা আগে দেখেনি ক্রিকেটবিশ্ব। স্বাভাবিক নিয়মে, ছয় ডেলিভারিতে হয়ে থাকে দশটি ওভার। ব্যতিক্রম কেবল একটি ওভারের ক্ষেত্রে। সেটি হয় দশ বলে এবং করা যায় ইনিংসের যেকোনো সময়ে।

পাইলটের নেতৃত্বাধীন একমি স্ট্রাইকার্সের প্রতিনিধিত্ব করছেন ৫০ বছর বয়সী রফিক। প্রথম দিনে দুটি ম্যাচেই জিতেছে তার দল। অল্প সময়ের ব্যবধানে দুবার মাঠে নেমে অলরাউন্ড পারফরম্যান্স উপহার দেন তিনি। প্রথম ম্যাচে জেমকন টাইটানসের বিপক্ষে ১৩ বলে ২২ রান আসে তার ব্যাট থেকে। ওই ইনিংসে তিনি মারেন ৩ ছক্কা। দ্বিতীয় ম্যাচে ১৭ বলে ২৯ রানের আরেকটি আগ্রাসী ইনিংস তিনি সাজান ৪ চার ও ১ ছক্কায়।

এক দশক আগে সব ধরনের ক্রিকেটকে বিদায় জানানো রফিক প্রথম ম্যাচে সেরা হওয়ার পর স্বভাবসুলভ ঢঙে দিয়েছেন সরল উত্তর, ‘রহস্যের কিছু নাই। এখানের সবার সঙ্গে (আগে) খেলছি। তাই জানি, কার কী দুর্বল পয়েন্ট। আমি কী করি ওরা জানে, ওরা কী করে আমি জানি। সুতরাং প্রতিবছর এখানে যে একটা মিলনমেলা হয়, সেটাই কিন্তু বড় পাওনা।’

টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট শিকার করেছিলেন রফিক। ১৯৯৫ সালে আন্তর্জাতিক মঞ্চে পা রাখার পর তিনি লাল-সবুজদের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন ১৩ বছর। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে ৩৩ টেস্ট, ১২৫ ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলেছিলেন বাংলাদেশের অনেক ম্যাচের কাণ্ডারি এই বাঁহাতি স্পিনার। সবমিলিয়ে তিনি উইকেট শিকার করেছিলেন ২২৬টি। মূল পরিচয় বোলার হলেও ব্যাট হাতে তার বেশ কিছু স্মরণীয় ইনিংসও ছিল।

বর্তমান প্রজন্মের ক্রিকেট ভক্তদের সরাসরি দেখা হয়নি রফিকের জাদুকরী সেসব পারফরম্যান্স। আর পুরনো সমর্থকদের দিন হয়তো চলছিল স্মৃতিচারণ করেই। তবে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টি স্পোর্টস ম্যাচগুলো সরাসরি সম্প্রচার করায় এই দুই দলের চাহিদাই যেন পূরণ হয়েছে! কেবল রফিক কেন, আরও অনেক সাবেক রথী-মহারথীদের খেলতে দেখা যাচ্ছে যে ২২ গজে!

জীবনের ইনিংসে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করেও রফিক জানিয়েছেন মাঠের প্রতি ভালোলাগা-ভালোবাসা কথা, ‘সবচেয়ে বড় কথা হলো, আমি এখনও মাঠে আছি... আমার দর্শক, দেশপ্রেমিক যারা আছেন, ক্রিকেট পছন্দ করেন, তারা সবসময়ই আমাকে পছন্দ করেন। আমি চাই, সবসময় মাঠে থাকতে।’

ছয় দলের প্রতিযোগিতায় রয়েছেন ছয় জন আইকন ক্রিকেটার। একমি স্ট্রাইকার্সের আইকন পাইলট, এক্সপো রেইডার্সের আইকন সুজন, বৈশাখী বেঙ্গলসের আইকন নান্নু, জা’দুবে স্টার্সের আইকন আকরাম, জেমকন টাইটানসের আইকন বাশার ও নারায়ণগঞ্জ ওয়ারিয়র্সের আইকন দুর্জয়। তারা সবাই জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক।

লিজেন্ডস চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি প্রসঙ্গে বিসিবি পরিচালক ইসমাইল হায়দার মল্লিক বলেছেন, ‘সাবেক ছয় অধিনায়ক- আকরাম ভাই, সুজন ভাই, দুর্জয় ভাই, নান্নু ভাই, সুমন ভাই, পাইলট ভাই, রফিক ভাইদের মতো তারকা যারা আছেন, সবাইকে এক প্ল্যাটফর্মে জড়ো করা হলে এটা আসলে ক্রিকেটের প্রচারে উদ্ধুদ্ধ করবে তরুণ প্রজন্মকে। তাদের খেলা তো এখন আর দেখা যায় না।’

তিনি যোগ করেছেন, ‘এখনকার প্রজন্ম তো তাদের খেলা দেখেনি। এমন একটা আসর কিন্তু টিভিতেও প্রচার করা হচ্ছে। বাণিজ্যিকভাবে এটা লাভজনক নয়। কিন্তু উদ্যোগটি খুবই ভালো। বোর্ডের তরফ থেকে থাকতে পেরে আমরাও খুবই আনন্দিত।’

Comments

The Daily Star  | English

One month of interim govt: Yunus navigating thru high hopes

A month ago, as Bangladesh teetered on the brink of chaos after the downfall of Sheikh Hasina, Nobel Laureate Muhammad Yunus returned home to steer the nation through political turbulences.

6h ago