ভুয়া পাসপোর্টে নারী পাচার: জড়িত ওসমানী বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশও

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশে মানবপাচারকারী চক্র এক নারীকে ভুয়া পাসপোর্টে যুক্তরাজ্যে পাচার করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর সেই নারী ধরা পড়েন হিথ্রো বিমানবন্দরে।
স্টার ফাইল ফটো

সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশ সদস্যদের যোগসাজশে মানবপাচারকারী চক্র এক নারীকে ভুয়া পাসপোর্টে যুক্তরাজ্যে পাচার করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশ থেকে যাওয়ার পর সেই নারী ধরা পড়েন হিথ্রো বিমানবন্দরে।

সিআইডি’র তদন্তে ওঠে এসেছে এ তথ্য।

সিআইডি’র ট্রাফিকিং ইন হিউম্যান বিং (টিএইচবি) স্কোয়াড কর্মকর্তারা বলেছেন, যুক্তরাজ্যের নাগরিক মোকাররম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেই নারীকে সেখানে নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখান। তাকে একই প্রলোভন দেখান বাংলাদেশের মো. আফসার মিয়াও।

মামলায় সেই নারী বলেছেন, এরপর তিনি সেই ফাঁদে পা দেন এবং মোকাররমকে তার একটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি দেন।

২০১৯ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মোকাররম একটি ‘ব্রিটিশ পাসপোর্ট’ দিয়ে সে দেশের নাগরিক জাইন দীনকে বাংলাদেশে পাঠান। পাসপোর্টে সেই নারীর ছবি ছিল এবং তার নাম উল্লেখ করা হয়েছিল রুবিনা খাতুন হিসেবে। যদিও এটি তার নাম নয়।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যদিও সেই পাসপোর্ট কারো নয় তবুও সেখানে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের সিল রয়েছে।

পাসপোর্টে কীভাবে সেই সিল পড়ল, তা এখনো রহস্য। তদন্তকারীরা বলছেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা ছাড়া এটি কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

তারা আরও বলছেন, জাইন পাসপোর্টটি সেই নারীকে দিয়েছিলেন ২০১৯ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি। এর তিন দিন পর তারা বিনা বাধায় ইমিগ্রেশন পেরিয়ে যুক্তরাজ্যে যাওয়ার জন্যে উড়োজাহাজে উঠেন।

সিআইডি কর্মকর্তারা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ইমিগ্রেশন পুলিশের সংশ্লিষ্টতা ছাড়া এ কাজও সম্ভব নয়।

জাইন ও সেই নারী হিথ্রোতে পৌঁছার পর সেখানকার ইমিগ্রেশন পুলিশ মুহূর্তেই ধরে ফেলে যে সেই নারীর পাসপোর্ট ভুয়া। তারা তাকে ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেশে ফেরত পাঠায়।

জাইনের হাতে যেহেতু আসল পাসপোর্ট ছিল, তাই ইমিগ্রেশন পুলিশ তাকে আটকায়নি।

২০১৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের বিমানবন্দর থানায় সেই নারীর দায়ের করা মামলায় আরও বলা হয়েছে, দেশে ফেরত আসার পর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ তার পরিবারের কাছে উড়োজাহাজ ভাড়া বাবদ দুই লাখ ৬০ হাজার টাকা দাবি করেন।

সেই নারী মামলায় জাইন, মোকাররম ও সিলেটে জাইনের আত্মীয়ের ভাড়াটিয়া আশরাফকে অভিযুক্ত করেন।

মামলার তদন্তকারী সিআইডি’র এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই সংবাদমাধ্যমটিকে বলেছেন, ‘অপরাধে জড়িত কয়েকজন ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে আমরা ইতোমধ্যে শনাক্ত করেছি। কিন্তু, বিষয়টিকে জোরালো করতে জাইনের স্বীকারোক্তি প্রয়োজন।’

তবে, তিনি জড়িত ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের নাম-পরিচয় জানাতে রাজি হননি।

সূত্র জানিয়েছে, সিআইডি’র টিএইচবি স্কোয়াড ইতোমধ্যে ছয় ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাকে জেরা করেছে।

সিলেট বিমানবন্দর থানার ইমিগ্রেশন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে জানান, নিয়ম অনুযায়ী সেসময়কার কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে বদলি করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সেই ঘটনার কোনোকিছু আমি জানি না। আমি সেসময় এখানকার দায়িত্বে ছিলাম না।’

কীভাবে ভুয়া পাসপোর্ট নিয়ে একজন ব্যক্তি ইমিগ্রেশন পার হন এবং কীভাবে মালিক ছাড়া পাসপোর্টে সিল পড়ে, তা জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।

ওসমানী বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট এজাজ আহমেদ তদন্ত সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়ে ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি সম্প্রতি দায়িত্ব নিয়েছি।’

সিআইডি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা দুই মাস আগে জাইনকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদ করতে যুক্তরাজ্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়ে বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি) কাছে চিঠি লিখেছে।

উত্তরে গত সোমবার যুক্তরাজ্য পুলিশ জানতে চেয়েছে জাইন কীভাবে এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত।

সূত্র জানিয়েছে, সিআইডি গত মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ ও সিসিটিভির ফুটেজ যুক্তরাজ্য পুলিশকে দিয়েছে। সেই ফুটেজে জাইনকে সেই নারীর সঙ্গে দেখা গেছে। এ ছাড়া, ফুটেজে তাদেরকে একসঙ্গে বাংলাদেশ ছাড়তেও দেখা যায়।

সিআইডির অতিরিক্ত স্পেশাল সুপারিনটেনডেন্ট ডেইলি স্টারকে জানান, তারা জাইনের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা কিছু সাক্ষ্য-প্রমাণ পেয়েছি। সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে। আমরা জাইনের জবানবন্দি পেলে বলতে পারব আসলে কী ঘটেছিল।’

জামিনে থাকা মামলার তৃতীয় আসামি মো. আশরাফ মিয়া ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সিলেটের খরাদিপাড়া এলাকায় জাইনের ভাইয়ের বাসায় আমি ভাড়া থাকি। জাইন যখন বাংলাদেশে আসেন, তখন আমার মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন।’

‘এই মামলায় আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যেহেতু জাইন আমার ফোন ব্যবহার করতেন, তাই আমার নাম এসেছে’, যোগ করেন তিনি।

‘আমি মামলার বাদীকে কখনো দেখিনি’, উল্লেখ করে আশরাফ আরও বলেন, ‘২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সেই নারীকে নিয়ে দেশ ছাড়ার পর জাইন আমার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

9h ago