লাঠিসোটা নিয়ে সমর্থকদের থানার সামনে থাকতে বললেন কাদের মির্জা
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই এবং বসুরহাটের পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জা আগামীকাল সকাল ১০টা থেকে তার সমর্থকদের লাঠিসোটা নিয়ে থানার সামনে অবস্থানের নির্দেশ দিয়েছেন।
আবদুল কাদের মির্জা আজ শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সমর্থকদের নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে অবস্থান ধর্মঘট করেন। ধর্মঘট থেকে এ নির্দেশ দেন তিনি।
ধর্মঘটে কাদের মির্জা বলেন, ‘আমার দাবি না মানা পর্যন্ত অবস্থান ধর্মঘট চলবে।’
এর আগে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত কোম্পানীগঞ্জ থানার সামনে সমর্থকদের নিয়ে অবস্থান ধর্মঘট করেছিলেন আবদুল কাদের মির্জা। পরে বৃহস্পতিবার কোম্পানীগঞ্জে অর্ধদিবস হরতাল শেষে পুনরায় একই দাবিতে তিনি শুক্রবার ও শনিবার অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণ দেন।
বিষয়টি জানতে আবদুল কাদের মির্জার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তা রিসিভ করেন তার ব্যক্তিগত সহকারী হৃদয়।
কাদের মির্জার ব্যক্তিগত সহকারী হৃদয় দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মির্জা কাদের এই মুহূর্তে কথা বলবেন না। পরে কথা বলবেন।’
জানা গেছে, নোয়াখালী জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি ও পরিদর্শককে (তদন্ত) প্রত্যাহার এবং কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আ. লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বাদলসহ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার, নোয়াখালী ও ফেনীর অপরাজনীতি বন্ধের দাবিতে কাদের মির্জা এই কর্মসূচি পালন করছেন।
কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি মীর জাহিদুল হক রনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আজ সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত কাদের মির্জা তার অনুসারীদের নিয়ে থানার ফটকের সামনে অবস্থান নেন। এসময় তার সমর্থকরা ওই সড়কে কোনো যানবাহন চলতে দেননি। গতকালও একই দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছিলেন।’
নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. আলমগীর হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘কাদের মির্জা নিজেই জানেন তিনি কেমন এমন করছেন।’
এদিকে, নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে কাদের মির্জার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আইনগত ব্যবস্থার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। আজ দুপুরে আ. লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ দলের অঙ্গ সংগঠনের ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে নোয়াখালী শহর আ. লীগের সভাপতি আবদুল ওয়াদুদ পিন্টু বলেন, ‘আবদুল কাদের মির্জা দলীয় নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অপরাজনীতির অভিযোগ করেন। অথচ তিনি নিজেই অপরাজনীতিসহ নানা অনিয়ম করে বেড়াচ্ছেন। তিনি দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে দলীয় প্রধান তথা সরকার প্রধান শেখ হাসিনা,
সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, নোয়াখালী জেলা আ. লীগ সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে নিয়মিতভাবে অপপ্রচার করে যাচ্ছেন। বিএনপি-জামায়াতের মতো রাষ্ট্রযন্ত্রের তথা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নানা মিথ্যা অভিযোগ করে যাচ্ছেন। তার এসব কর্মকাণ্ড দলীয় শৃঙ্খলা ও রাষ্ট্র বিরোধী।’
তিনি আরও বলেন, ‘বসুরহাট পৌর নির্বাচনে ভোটগ্রহণের আগে থেকেই প্রচার-প্রচারণার তিনি যেসব বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বোঝা যায় তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী নন। নির্বাচিত হয়েছেন বিএনপি-জামায়াত জোট সমর্থিত রাজনৈতিক দলের ভোটে। মনোনয়ন পাওয়ার আগে তিনি কখনো আওয়ামী লীগ বা দলের নেতাদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু, দলের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নাম ঘোষণার পর থেকে পাগলের মতো প্রধানমন্ত্রী, তার বড় ভাই সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং তার স্ত্রীসহ ফেনী ও নোয়াখালীর আওয়ামী লীগ নেতা ও সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অপপ্রচারসহ অশালীন ভাষায় বক্তব্য দিয়ে আসছেন। যা আওয়ামী লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘তিনি যেসব মিথ্যা বক্তব্য দিয়েছেন, সেগুলোর সত্যতা প্রমাণ করুক।’
কাদের মির্জার এসব অশোভনীয় এবং সংগঠন বিরোধী অসদাচরণের শাস্তি দাবি তিনি বলেন, ‘তার ক্ষমতার দাম্ভিকতায় অনেক প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে নাজেহাল হতে হয়েছে। তার এমন আচরণের জন্য দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী কাদের মির্জার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি। পাশাপাশি সাংগঠনিক পর্যায় থেকে মিথ্যা অপপ্রচারমূলক বক্তব্য, অশোভনীয় ও অসদাচরণের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- নোয়াখালী সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক একেএম সামছুদ্দিন জেহান, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আতাউর রহমান নাছের, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক ইমন ভট্ট, যুগ্ম আহ্বায়ক একরামুল হক বিপ্লব ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি আসাদুজ্জামান আরমান।
Comments