৬৬ বছর পর আবারও বিয়ের পিঁড়িতে প্রবীণ দম্পতি

প্রবীণ দম্পতি। ছবি: স্টার

তাদের প্রথম বিয়ে হয়েছিল ১৯৫৫ সালে। ৬৬ বছর পর আবারও বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন বৈদ্যনাথ দেবশর্মা ও পঞ্চবালা দেবশর্মা। বরের বয়স ৯২ ও কনের বয়স ৮০ বছর।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার দক্ষিণ মেড়াগাঁও গ্রামে গত ২২ মার্চ রাতে ব্যতিক্রমধর্মী এই বিয়ের আয়োজন করা হয়। প্রায় পাঁচ শ কার্ড ছাপিয়ে বিয়েতে নিমন্ত্রণ করা হয়েছিল আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীদের।

নিমন্ত্রণপত্রে উল্লেখ করা হয়, ‘তাদের বিবাহের পঞ্চম পিঁড়ি (পাঁচ প্রজন্ম) উত্তীর্ণ হওয়ায় ৮ই ফাল্গুন রোজ রোববার এক পুনর্বিবাহ মিলনের অনুষ্ঠান সু-সম্পন্ন হইবে।’

বিয়ের সমস্ত আয়োজনই ছিল জমজমাট। নিমন্ত্রণপত্রে বিয়ের লগ্নতিথি, বৌভাতসহ সব অনুষ্ঠানের সময়সূচি উল্লেখ করা হয়। আমন্ত্রিত অতিথিরা জানান, এমন বিয়ে আগে তারা কখনো দেখেননি।

প্রায় এক মাস ধরেই চলে বিয়ের আয়োজন। গত রোববার রাতে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী গাড়িতে চড়ে আসেন বর। তাকে বরণ করে নেওয়া হয়। শুভলগ্নে উচ্চারিত হয় সনাতনী বেদমন্ত্র ‘যদিদং হৃদয়ং মম-তদিদং হৃদয়ং তব’।

বয়সের ভারে নুয়ে পড়া বৈদ্যনাথ তার বিয়ের কার্ডে বয়স ১০৭ উল্লেখ করলেও জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী বর্তমানে তার বয়স ৯২ বছর। তিনি জানান, জাতীয় পরিচয়পত্রে তার বয়স ভুল আছে। তার পিতা স্বর্গীয় ভেলগু দেবশর্মার হাতে লিখে যাওয়া জন্মতারিখ অনুযায়ী তার বর্তমান বয়স ১০৭ বছর।

তিনি আরও জানান, তাদের বিয়ের পঞ্চম পিঁড়ি অর্থাৎ পঞ্চম প্রজন্ম পার হয়েছে। এ জন্যই ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী নিজের স্ত্রীকে আবারও বিয়ে করছেন তিনি। বংশধরদের মঙ্গলের জন্যই এই বিয়ের আয়োজন বলে জানান তিনি।

পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে প্রবীণ দম্পতি। ছবি: স্টার

বিয়ের পিড়িতে বসে ৮০ বছর বয়সী কনে পঞ্চবালা দেবশর্মা জানান, ছোটবেলায় বিয়ে হওয়ায় ওই অনুষ্ঠানের স্মৃতি তার খুব একটা মনে নেই। সেসময় বিয়ে কী সেটাও তিনি ঠিকঠাক বোঝেননি। কিন্তু, এবারের বিয়েতে বেশ আনন্দ পাচ্ছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমাদের বংশধররাও যাতে আমাদের মতো দীর্ঘজীবী হয়—এ জন্য ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি।’

ধর্মীয় রীতির পাশাপাশি জমজমাট এই বিয়েতে আয়োজনের কোনো কমতি ছিল না। বাদ্য-বাজনা, নাচগান, খাওয়া-দাওয়াসহ সব আয়োজনই ছিল জমজমাট।

বৈদ্যনাথ দেবশর্মার একমাত্র মেয়ে ঝিনকো বালা দেবশর্মা জানান, তার নাতি-নাতনি এবং তাদের সন্তান ও নাতি-নাতনিসহ মোট চার প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা বিয়েতে এসেছেন।

তিনি বলেন, ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী ভবিষ্যৎ বংশধরদের কল্যাণেই এই বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে। পরিবারের সবাই বেশ আনন্দের সঙ্গে ধুমধাম করে প্রবীণ দম্পতির বিয়ের আয়োজন করেছেন বলে জানান তিনি।

এর আগে এমন বিয়ে কখনোই দেখেননি ব্রাহ্মণ মহাদেব ভট্টাচার্য। রোববার রাতে ধর্মীয় রীতি অনুযায়ী বেদমন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে প্রবীণ দম্পতির বিয়ে পড়িয়েছেন তিনি।

তিনি জানান, এরকম একটি বিয়েতে পুরোহিতের কাজ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি।

ব্যতিক্রমী এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে পুরো এলাকাজুড়েই ছিল ব্যাপক আগ্রহ।

এলাকার হিন্দু বিবাহ রেজিস্ট্রার বিভূতি ভূষণ সরকার জানান, এর আগে ওই এলাকায় এরকম কোনো বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়নি। বাংলাদেশেই হয়তো এই ধরনের বিয়ের অনুষ্ঠান এটিই প্রথম।

স্থানীয় আট নম্বর ধর্মপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাবুল চন্দ্র সরকার জানান, এমন একটি বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে পেরে এলাকার সবাই বেশ উৎফুল্ল ও আনন্দিত।

দম্পতির এক আত্মীয় রতন চন্দ্র সরকার জানান, বিয়েতে এই দম্পতি অনেক উপহার পেয়েছেন, তার মধ্যে আছে ১৫টি গরুও।

Comments

The Daily Star  | English

Sheikh clan’s lust for duty-free cars

With an almost decimated opposition and farcical elections, a party nomination from the ruling Awami League was as good as a seat in the parliament.

7h ago