৪ জেলার ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাননি: জরিপ
করোনা মহামারির প্রভাবে দেশের চার জেলার ৭০ শতাংশের আয় কমেছে বলে সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) এবং একশনএইডের এক যৌথ জরিপে উঠে এসেছে।
মঙ্গলবার সকালে 'মহামারি এবং বাংলাদেশের যুব জনগোষ্ঠী: চারটি নির্বাচিত জেলার জরিপের ফলাফল' শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়।
এতে বলা হয়, ২০১৯ সালের নভেম্বরের তুলনায় ২০২০ সালের নভেম্বরে জরিপ করা চারটি জেলা বরগুনা, সাতক্ষীরা, রাজশাহী ও কুড়িগ্রামে উদ্যোক্তাদের মধ্যে লাভ কমেছে ৮২ শতাংশের এবং এই চার জেলায় করোনার সময়ে ব্যবসা বা অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সাময়িক বা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হয়েছে ৩১ শতাংশের।
জরিপের ফলাফল উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এবং সানেমের রিসার্চ ইকোনমিস্ট মাহতাব উদ্দিন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর ওপর করোনা মহামারির প্রভাব সম্পর্কে ধারণা পেতে সানেম এবং একশনএইড চার জেলার ১৫৪১ টি খানার ওপর গত ১৩ ডিসেম্বর থেকে ২৭ ডিসেম্বর একটি জরিপ পরিচালনা করে। জরিপে ১৫-৩৫ বছর বয়সীদের যুব জনগোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জরিপে তরুণ জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কর্মসংস্থান, সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনী ইত্যাদির ওপর করোনা মহামারির প্রভাব নিরুপণের চেষ্টা করা হয়েছে। একইসাথে এই জরিপে তরুণদের মধ্যে নাগরিক কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের প্রবণতা এবং জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কিত সচেতনতার মাত্রাও বুঝতে চাওয়া হয়েছে। জরিপে জেন্ডার বিষয়ক বিভিন্ন ইস্যু যেমন নারীর প্রতি সহিংসতা, নারীর কর্মসংস্থান ও ক্ষমতায়ন এবং বিভিন্ন সেবা প্রাপ্তিতে নারীর অভিজ্ঞতা সম্পর্কেও প্রশ্ন করা হয়েছে। জরিপে ইনুমেরটর হিসেবে কাজ করেছেন চারটি জেলার চারটি যুব সংগঠনের সদস্যরা।
জরিপে দেখা যায়, করোনার সময়ে এই চার জেলার ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাননি। এ সংখ্যা কুড়িগ্রামে ৬২ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ৫৬ শতাংশ, রাজশাহীতে ৩৯ শতাংশ ও বরগুনায় ৪৬ শতাংশ। এই চার জেলার ৫০ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাননি, অপরদিকে ৫৬ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থী অনলাইন ক্লাসের সুযোগ পাননি। করোনাকালে এই চার জেলার ৫৮ শতাংশ শিক্ষার্থীর কোন ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না। যাদের মধ্যে ৫২ শতাংশ ছেলে শিক্ষার্থীর কোন ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না, অপরদিকে ৬৫ শতাংশ মেয়ে শিক্ষার্থীর কোন ডিজিটাল ডিভাইস ছিল না।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু হলে নিয়মিত পড়াশুনায় ফিরবেন না অথবা এ বিষয়ে অনিশ্চয়তা আছে এমন মত দিয়েছেন এই চার জেলার তিন দশমিক ৯১ শতাংশ শিক্ষার্থী। গ্রামে এই হার চার দশমিক ৪১ শতাংশ ও শহরে এক দশমিক ৬৫ শতাংশ।
এই চার জেলার বিবাহিত নারীদের মধ্যে ৩৭ শতাংশ জানিয়েছেন তাদের স্বামীদের দ্বারা শারীরিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। কুড়িগ্রামে এই হার ৪১ শতাংশ, সাতক্ষীরাতে ২২ শতাংশ, রাজশাহীতে ২৮ শতাংশ ও বরগুনায় ৫৫ শতাংশ।
কোন ধরনের সহিংসতার শিকার হওয়ার পরে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছেন পাঁচ শতাংশ নারী।
জরিপে দেখা যায়, স্থানীয় পর্যায়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণে যুবদের অংশগ্রহণের হার সাত দশমিক ৬২ শতাংশ। কুড়িগ্রামে এ হার চার দশমিক ৬৭ শতাংশ, সাতক্ষীরায় ছয় দশমিক ৫৮ শতাংশ, রাজশাহীতে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ এবং বরগুনায় ছয় দশমিক ৩১ শতাংশ। অরাজনৈতিক সংগঠনে যুবদের অংশগ্রহণের হার ছয় দশমিক চার শতাংশ এবং রাজনৈতিক সংগঠনে তিন দশমিক ছয় শতাংশ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং সানেমের গবেষণা পরিচালক ড. সায়মা হক বিদিশার সঞ্চালণায় ওয়েবিনারে সভাপতিত্ব করেছেন একশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির।
ফারাহ কবির দক্ষতা, জীবিকা, সামাজিক নিরাপত্তা এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে নারী ও তরুণ কেন্দ্রিক কর্মসূচির অভাবের প্রতি আলোকপাত করেন। তিনি এক্ষেত্রে পরবর্তীতে আরও কাজ করার এবং স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের অধিকতর সংযুক্ত করার আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
Comments