মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাওয়াই যার ব্রত
ভাষা আন্দোলনের সৈনিক জহির উদ্দিন আহমেদ। লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের নিভৃত পল্লী নওদাবাঁশ গ্রামের বাসিন্দা। বয়সের ভারে শরীর নুয়ে এলেও এখনও উদ্যম হারাননি। নিজ গ্রামসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে তার পরিচিতি 'মানুষের বন্ধু' হিসেবে।
১৯৩৫ সালের ২৩ মার্চ জন্মগ্রহণকারী জহির উদ্দিন আহমেদ এখনো একাই পথ চলেন। পাথে হেঁটে যান হাট-বাজারে। ঘুরে বেড়ান গ্রামে। লালমনিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিলেন ভাষা আন্দোলনের সময়। ১৯৫৬ সালে কারমাইকেল কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
স্বেচ্ছাশ্রমে ছাত্র পড়িয়ে প্রতিষ্ঠা করেছেন বুড়িরকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়, বড়বাড়ি উচ্চ বিদ্যালয় ও খেদাবাগ দাখিল মাদ্রাসা। নিজের পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করছেন কৃষিকাজ করে।
স্কুলে ছাত্র থাকা অবস্থায় তার সখ্যতা গড়ে ওঠে ঔষধি গাছের সাথে। প্রায় ১৫৫টি প্রজাতির ঔষধি গাছের সাথে রয়েছে জানাশোনা। বাড়ির আশেপাশে লাগিয়েছেন এসব গাছ।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে রয়েছে তার দখল। ১৯৯৩ সালে বাংলাদেশ আয়ুর্বেদ বোর্ড থেকে পেয়েছেন 'আয়ুর্বেদ তীর্থ' উপাধি। ঔষধি গাছ দিয়ে মানুষের সেবা করছেন এখনও। বিনামুল্যে গ্রামের মানুষকে দিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসা সেবা।
নওদাবাঁশ গ্রামের কৃষক মহির উদ্দিন (৬৬) দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, সাধারণ রোগ-ব্যাধি হলে তারা জহির উদ্দিনের দ্বারস্থ হয়ে আসছেন। শুধু নিজ গ্রামের মানুষেই নন, আশপাশের কয়েকটি গ্রাম থেকেও মানুষজন তার কাছে আসেন।
জহির উদ্দিন আহমেদের স্ত্রী জমিলা খাতুন (৭৫) বলেন, প্রতিদিনই কেউ না কেউ আসেন চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। এখনো তার স্বামী কৃষি কাজের সাথে যুক্ত এবং সংসারের খরচ চালান।
সরকারের কাছে গ্রামে একটি আয়ুর্বেদ চিকিৎসার হাসপাতাল নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন জহির উদ্দিন আহমেদ। তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘আমি যতদিন বেঁচে থাকব ততদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করে যাব। মানুষের সেবার মাধ্যমে জীবনকে উপলব্ধি করছি এবং এটা আমার কাছে পরম ভালোবাসার।’
Comments