একশো বছর পর দুই দিনে টেস্ট হারল ইংল্যান্ড

সেই ১৯২১ সালের কথা। নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে সেবার মাত্র দুই দিনে টেস্ট ম্যাচ হেরেছিল ইংল্যান্ড। এরপর কেটে গেছে ১০০ বছর। এরমধ্যে উল্টো প্রতিপক্ষকে দুই দিনে টেস্ট হারানোর নজির অনেকবারই গড়েছে তারা। কিন্তু লম্বা সময় পর আবারও দুই দিনে টেস্ট ম্যাচ হারের স্বাদ নিতে হলো ক্রিকেটের জনক দেশটিকে। আর এবার তাদের এ তিক্ত স্বাদ দিয়েছে বর্তমান পরাশক্তি ভারত। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো দলকে দুই দিনে হারালো ভারত।
ছবি: টুইটার

সেই ১৯২১ সালের কথা। নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বিধ্বস্ত হয়ে সেবার মাত্র দুই দিনে টেস্ট ম্যাচ হেরেছিল ইংল্যান্ড। এরপর কেটে গেছে ১০০ বছর। এরমধ্যে উল্টো প্রতিপক্ষকে দুই দিনে টেস্ট হারানোর নজির অনেকবারই গড়েছে তারা। কিন্তু লম্বা সময় পর আবারও দুই দিনে টেস্ট ম্যাচ হারের স্বাদ নিতে হলো ক্রিকেটের জনক দেশটিকে। আর এবার তাদের এ তিক্ত স্বাদ দিয়েছে বর্তমান পরাশক্তি ভারত। এ নিয়ে দ্বিতীয়বার কোনো দলকে দুই দিনে হারালো ভারত।

সবশেষ ২০১৮ সালে এই ভারতই দুই দিনে টেস্ট জয়ের কীর্তি গড়েছিল। সেবার অবশ্য তাদের প্রতিপক্ষ ছিল নবীন আফগানিস্তান।

আহমেদাবাদে অবশ্য এমন কিছুর ইঙ্গিত প্রথম দিনের প্রথম সেশন থেকেই পাওয়া গিয়েছিল। স্পিনারদের জন্য ছিল স্বর্গরাজ্য। শুরু থেকেই স্পিনাররা মায়াজাল বিছাতে শুরু করেন। সেখানে মাত্র একজন বিশেষজ্ঞ স্পিনার নিয়ে খেলতে নামে ইংলিশরা। সফরকারী দলটি পিছিয়ে যায় সেখানেই। তার খেসারত দিয়ে ভারতের কাছে ১০ উইকেটে হেরে চার টেস্ট সিরিজে ১-২ ব্যবধানে পিছিয়ে পড়ে ইংল্যান্ড। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালের দৌঁড় থেকেও ছিটকে গেছে জো রুটের দল।

দুই দলের মধ্যে মূল পার্থক্যটা গড়ে দেন মূলত গুজরাটের ছেলে অক্ষর প্যাটেল। দিবা রাত্রির টেস্টে গোলাপি বলের বাজিটা স্বাভাবিকভাবে থাকে পেসারদের হাতে। কিন্তু স্পিনাররাও যে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারেন তা করে দেখালেন এ স্পিনার। চেনা মাঠে দুই ইনিংসেই ফাইফার তুলে নেন তিনি। দিবা রাত্রির টেস্টে তৃতীয় বোলার হিসেবে ১০ উইকেট তুলে নেওয়ার কীর্তি গড়েন অক্ষর। এর আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে অস্ট্রেলিয়ার প্যাট কামিন্স ও পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের দেবেন্দ্র বিশু এ কীর্তি গড়েছিলেন।

প্রথম ইনিংসে মাত্র ১১২ রানে অলআউট হয়েছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে একশও পার করতে পারেনি। অলআউট হয় মাত্র ৮১ রানে। যা ভারতের বিপক্ষে নিজেদের ইতিহাসে সর্বনিম্ন। এর আগে ১৯৭১ সালে ওভালে ভারতের বিপক্ষে ১০১ রানে অলআউট হয়েছিল দলটি। এতো দিন এটাই ছিল সর্বনিম্ন। অবশ্য আহমেদাবাদে এর আগে ১৯৮৬ সালে ১২৮ রানে অলআউট হওয়ার নজির ছিল ইংলিশদের।

স্পিনস্বর্গে প্রথম ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়তে সক্ষম হয়েছিলেন জ্যাক ক্রলি। ৫৩ রানের ইনিংসে ইংলিশদের সংগ্রহটা একশ পাড় করিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে টিকতে পারেননি এক বলের বেশি। প্রথম বলেই অক্ষর প্যাটেলের শিকার হন তিনি। খুলতে পারেননি রানের খাতা। দুই বল পর জনি বেয়ারস্টোও ফিরেন খালি হাতে। সফরকারীরা কোণঠাসা তখন থেকেই।

উইকেট পতনের মিছিলে অবশ্য চতুর্থ উইকেটে অধিনায়ক জো রুটকে নিয়ে কিছুটা চেষ্টা করেছিলেন বেন স্টোকস। ৩১ রানের জুটি গড়েছিলেন এ দুই ব্যাটসম্যান। নিজের ইনিংসে এ জুটিই ছিল সর্বোচ্চ। আর স্টোকসের করা ২৫ রানও তাদের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ সংগ্রহ। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৯ রান আসে রুটের ব্যাট থেকে। ফলে মাত্র ৪৮ রানের লিড নিতে সক্ষম হয় দলটি।

ভারতের তিন স্পিনার ভাগাভাগি করে ইংলিশদের সব উইকেট। মূলত এ তিন জনই এদিন বল করেন। ৩২ রানের খরচায় ৫টি উইকেট নেন অক্ষর। রবিচন্দ্রন অশ্বিন নেন ৪টি উইকেট। এ উইকেট নেওয়ার পথে জোফরা আর্চারকে এলবিডাব্লিউর ফাঁদে ফেলে ক্যারিয়ারে ৪০০তম উইকেট তুলে নেন এ স্পিনার। মাত্র ৭৭ টেস্ট খেলেই এ কীর্তি গড়েন তিনি। ওয়াশিংটন সুন্দর পান অপর উইকেটটি।  

৪৯ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ভারতকে জয় তুলে নিতে কোনো ধরণের বেগ পেতে হয়নি। উল্টো মিস ফিল্ডিং করে বাড়তি রান দিয়ে কাজটা সহজ করে দেন ভারতের। কোনো উইকেট না হারিয়েই জয়ের বন্দরে পৌছায় দলটি। রোহিত ২৫ ও শুভমান গিল ১৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে প্রথম দিনের করা ৩ উইকেটে ৯৯ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামে ভারত। দ্বিতীয় দিনে ব্যাট করতে নেমে ইংলিশ অধিনায়ক রুটের তোপে পড়ে দলটি। পার্ট-টাইম বোলার হিসেবে কৃপণতার নজির গড়ে ফেলেন রুট। মাত্র ৮ রানে তুলে নেন ৫ উইকেট। এর আগে টিম মে ও মাইকেল ক্লার্ক ৯ রানে ৫ উইকেট নেওয়া কীর্তি গড়েছিলেন।

অবশ্য দিনের শুরুতে আঘাত হানেন লিচ। দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান আজিঙ্কা রাহানে ও রোহিত শর্মাকে ফেরান তিনি। এরপর লেজ ছাঁটাই করেন অশ্বিন। ফলে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৪৫ রানের বেশি করতে পারেনি ভারত। আগের দিনের ৫৭ রান নিয়ে ব্যাট করতে নামা রোহিত সর্বোচ্চ ৬৬ রানের ইনিংস খেলেন। এছাড়া অশ্বিনের ব্যাট থেকে ১৭ রান।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১১২

ভারত ১ম ইনিংস: ৫৩.২ ওভারে ১৪৫ (আগের দিন ৯৯/৩) (রোহিত ৬৬, রাহানে ৭, পান্ত ১, অশ্বিন ১৭, সুন্দর ০, আকসার ০, ইশান্ত ১০*, বুমরাহ ১; অ্যান্ডারসন ০/২০, ব্রড ০/১৬, আর্চার ১/২৪, লিচ ৪/৫৪, স্টোকস ০/১৯, রুট ৫/৮)।

ইংল্যান্ড ২য় ইনিংস: ৩০.৪ ওভারে ৮১ (ক্রলি ০, সিবলি ৭, বেয়ারস্টো ০, রুট ১৯, স্টোকস ২৫, পোপ ১২, ফোকস ৮, আর্চার ০, লিচ ৯, ব্রড ১*, অ্যান্ডারসন ০; আকসার ৫/৩২, অশ্বিন ৪/৪৮, সুন্দর ১/১)।

ভারত ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৪৯) ৭.৪ ওভারে ৪৯/০ (রোহিত ২৫*, গিল ১৫*; লিচ ০/১৫, রুট ০/২৫)।

ফলাফল: ভারত ১০ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: অক্ষর প্যাটেল (ভারত)

সিরিজ: ৪ ম্যাচের সিরিজে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে ভারত

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

4h ago