বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে আবারও নেমেছে বাংলাদেশ: ইআইইউ
বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ক্রমাগত দ্বিতীয়বারের মতো নেমেছে।
সূচকে খাদ্য নিরাপত্তা ও অংশগ্রহণ বিষয়ে সরকারি নীতি প্রতিশ্রুতি, খাদ্যের পুস্টিমাণ ভালো থাকা, খাদ্যশস্য নস্ট কম হওয়া ও কৃষি উৎপাদনে অস্থিরতা কম থাকা অন্যতম অর্জন হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
তবে সূচক কমে যাওয়ার পিছনে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে প্রধানত খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্য নিশ্চিতকরণ, প্রাকৃতিক সম্পদের— যেমন কৃষি জমি ও জলের উত্তম ব্যবহার এবং জলবায়ু-সহিষ্ণু কৃষি বাস্তবায়নে দুর্বল কার্যকারিতা।
নবম বার্ষিক বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা সূচক (জিএফএসআই) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
কর্টেভা এগ্রিসায়েন্সের পৃষ্ঠপোষকতায় দ্য ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জিএফএসআই ২০২০ প্রকাশ করেছে। এতে, বিশ্বের ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৮৪তম এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে নিচে।
দ্য ইআইইউ ২০১২ সাল থেকে তিনটি ক্যাটাগরি বিবেচনা করে জিএফএসআই প্রকাশ করছে। ক্যাটাগরিগুলো হলো: খাদ্য সামর্থ্য (অ্যাফর্ডিবিলিটি), প্রাপ্যতা (অ্যাভেইলিবিলিটি) এবং গুণমান ও সুরক্ষা (কোয়ালিটি ও সেফটি)। এ বছর নুতন করে চতুর্থ ক্যাটাগরি হিসেবে ‘প্রাকৃতিক সম্পদ ও জলবায়ু অভিযোজন (ন্যাচারাল রিসোর্সেস ও রিসিলিয়েন্স)’ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
জিএফএসআই’র উদ্দেশ্য হলো খাদ্য নিরাপত্তা ইস্যুতে দেশগুলোকে সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করা এবং এটি দেখানো যে সাম্প্রতিক সময়ের কোভিড-১৯ মহামারি কীভাবে খাদ্য পদ্ধতিতে প্রভাব ফেলবে।
কর্টেভা এগ্রিসায়েন্সের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই সূচকে বিশ্বব্যাপী খাদ্য নিরাপত্তা পরিস্থিতিও হ্রাস পেয়েছে।
সূচকে বাংলাদেশ সামগ্রিকভাবে ১০০ এর মধ্যে ৫০ পয়েন্ট অর্জন করেছে। ২০১৮ সালে এই স্কোর ছিল ৫১ দশমিক ৬ যা আগের বছরের স্কোরের তুলনায় ০ দশমিক ৩ কম। এ বছর এটি আরও ১ দশমিক ৬ পয়েন্ট কমেছে।
নুতন সংযোজিত ‘ন্যাচারাল রিসোর্সেস ও রিসিলিয়েন্স’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ সর্বনিম্ন পয়েন্ট অর্জন করেছে। এতে ১১৩টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ ১০৭তম অবস্থানে রয়েছে। কারণ বলা হয়েছে, জলবায়ু অভিযোজন সম্পর্কে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতির অভাব, ৬৫ শতাংশ জমিতে দুষণ, সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে থাকা কৃষিজল ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব।
সূচকের ‘ফুড কোয়ালিটি ও সেফটি’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৪তম। বিশ্বের গড়পড়তা ৫২ দশমিক ৪ শতাংশের বিপরীতে বাংলাদেশিদের খাদ্যতালিকায় বৈচিত্র্যের (নন-স্টার্চি জাতীয় খাবার যেমন সিরিয়াল শিকড় ও কন্দ জাতীয় ছাড়া সমস্ত খাবার) হার ২১ শতাংশ।
খাদ্যে মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট, ভিটামিন এ, আয়রন, জিংক ও মানসম্পন্ন প্রোটিনের প্রাপ্যতা এবং নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়েছে।
দেশে নিরাপদ পানি পায় এমন জনগোষ্ঠীর হার ৫৫ দশমিক ৪ শতাংশ মানুষ। তবে সূচকে দেখনো হয়েছে ৮৫ দশমিক ২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার করছেন যাতে করে খাদ্য নিরাপদে সংরক্ষণ করতে পারেন।
‘খাদ্য প্রাপ্যতা’ ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বোচ্চ। ১১৩টি দেশের মধ্যে ৩৬তম। ভালো সেচ ব্যবস্থাপনা ও কৃষি অবকাঠামো, খাদ্যশস্য সংরক্ষণ ব্যবস্থার কারণে পয়েন্ট অর্জন হলেও সূচকে খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা যেমন রাস্তা, বন্দর, রেল অবকাঠামো উন্নয়ন, দুর্নীতি হ্রাস ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করা হয়েছে।
অ্যাফর্ডিবিলিটি ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশের অবস্থান দেখানো হয়েছে ৮৪তম। দেশে বৈশ্বিক দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসরত জনসংখ্যার হার ৫২ দশমিক ৯ শতাংশ চিহ্নিত করা হয়েছে।
ফুড সেফটি নেট কর্মসূচি থাকায় যেমন পয়েন্ট অর্জিত হয়েছে তেমনি কর্মসূচির দুর্বল বাস্তবায়ন ব্যবস্থার কারণে অবস্থান পিছিয়ে পড়েছে। সূচকে বাজারে ও কৃষিক্ষেত্রে আর্থিক পরিষেবা এবং কৃষকদের বিভিন্ন আর্থিক পণ্যে যেমন ঋণ প্রাপ্তি নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখানো হয়েছে।
সূচকে বলা হয়েছে, পরিবর্তিত জলবায়ু ও ক্রমহ্রাসমান প্রাকৃতিক সম্পদ ভবিষ্যতের সমৃদ্ধির জন্য মারাত্মক চ্যালেঞ্জ। এতে কৃষকদের তথ্য ও বাজারের সঙ্গে সংযুক্ত করার গুরুত্ব উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ভবিষ্যৎ ততটুকুই নিরাপদ যতটা নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা।
Comments