‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা নয়, বাতিল করতে হবে’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর আজ জামিন পেলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। একই মামলার আরেক আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারেই মারা গেলেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই চলছে আন্দোলন-প্রতিবাদ। বলা হচ্ছে, জামিন পেলে হয়তো মুশতাক মারা যেতেন না। এখন আন্দোলন চলছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে।
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর আজ জামিন পেলেন কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। একই মামলার আরেক আসামি লেখক মুশতাক আহমেদ কারাগারেই মারা গেলেন। তার মৃত্যুর পর থেকেই চলছে আন্দোলন-প্রতিবাদ। বলা হচ্ছে, জামিন পেলে হয়তো মুশতাক মারা যেতেন না। এখন আন্দোলন চলছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিরুদ্ধে।

এই আইন করার শুরুতেই বিরোধিতা ছিল। বলা হয়েছিল, এটি গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও লেখকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করবে। তখন সরকার বলেছিল, এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা হবে না। সাংবাদিক-লেখকদের ওপর প্রয়োগ করা হবে না। কিন্তু, দেখা গেল গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধেই এটি বেশি প্রয়োগ হয়েছে। এখন আইনমন্ত্রী বলেছেন, আইনটি পর্যালোচনা করা হবে। কিন্তু, এই আইনটি বাতিল না পর্যালোচনা, কোনটা দরকার? দ্য ডেইলি স্টার কথা বলেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে।

কিশোরের জামিন পাওয়াটাই যুক্তিসঙ্গত বলে মনে করেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘তারা তো কোনো মারাত্মক অপরাধ করেননি। খুনি কিংবা ফৌজদারি মামলার আসামি না। তারা নিরীহ লোক। জামিন দিলে যে তারা পালিয়ে যাবে, তাও না। এর আগে ছয় বার তাদেরকে জামিন দেওয়া হয়নি। আজ কিশোরকে দেওয়া হলো। এই জামিনটা আগে দিলেই হয়তো মুশতাক মারা যেতেন না। এটাই খুব স্বাভাবিক চিন্তা। এ ধরনের ঘটনায় বিচারব্যবস্থার ওপর মানুষের আস্থা তো কমে যাবে। বিচারব্যবস্থায় এক ধরনের নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের আশাই তো মানুষ করে। কিশোরের জামিন পাওয়াটা যেমন ভালো খবর, তেমনি মৃত্যুর আগে মুশতাকের জামিন না পাওয়াটাও একই মাত্রার খারাপ খবর।’

‘যখন থেকে এই আইন চালু করার কথা হয়েছিল, তখন থেকেই এটি মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। এখন তো তাই দেখা যাচ্ছে। এই আইনে জামিন না দেওয়ার যে ধারাগুলো রয়েছে, তার অধিকাংশই মারাত্মক ধারা। জামিন অযোগ্য এই ধারাগুলো দেওয়া ঠিক হয়নি। আমাদের যে প্যানাল কোড আছে, ফৌজদারি আইন আছে, সেগুলোকেই আরও বিস্তৃত করে সাইবার সিকিউরিটি কাভার করা যেত। তা না করে নতুন আইন করা হলো এবং জামিনের অযোগ্য করা হলো। দ্বিতীয়ত, মামলা করলেই তাকে ধরে আনতে হবে এবং তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে, জামিন দেওয়া যাবে না, এটা তো খুবই মারাত্মক। এই আইন তো বাতিল করতে হবে। তা ছাড়া, কোনো উপায় নেই। মানুষও এটা বুঝতে পেরেছে’, বলেন তিনি।

তাহলে পর্যালোচনা নয়, এই আইন বাতিল চাচ্ছেন?, ঢাবির এই ইমেরিটাস অধ্যাপক বলেন, ‘আমি মনে করি এই আইন বাতিল করতে হবে। বাতিল করে নতুন ব্যবস্থা নিতে হবে। এটা পর্যালোচনা করে সংশোধন করলে কোনো সমাধান হবে বলে আমি মনে করি না। আমার আহ্বান থাকবে, এই আইন বাতিল করে ডিজিটাল সিকিউরিটির প্রভিশনগুলো প্যানাল কোডের মধ্যে অন্তগর্ত করা। কেউ অপরাধ করলে সেই আইনে বিচার করতে হবে।’

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এই আইন গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও লেখকদের মত প্রকাশের স্বাধীনতায় প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াবে বলে আশঙ্কা করা হয়েছিল। সম্পাদক পরিষদ এ নিয়ে তিন জন মন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলেছিল। মন্ত্রীরা বলেছিলেন, সম্পাদক পরিষদের কথা মন্ত্রিপরিষদের বৈঠকে তোলা হবে। কিন্তু, তা তোলা হয়নি এবং সম্পাদক পরিষদ যে আপত্তিগুলো তুলেছিল, সেগুলোকে কোনো গুরুত্বই দেওয়া হয়নি। সেই আপত্তিগুলো খুব জেনুইন ছিল।’

‘যেই অভিযোগগুলো আনা হলো, রাষ্ট্রের-সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন, এগুলো মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। একটা লেখার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রের-সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে, তা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য নয়। কাজেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে শুরুতেই যে আশঙ্কা করা হয়েছিল, সেটাই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। শেষমেশ দেখা গেল এই আইন মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা হয়েই দাঁড়াল’, যোগ করেন তিনি।

আরও পড়ুন:

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে বিবিসিকে যা বলেছেন আইনমন্ত্রী

অবশেষে জামিন পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

‘মুশতাকের মৃত্যু-কিশোরের জেল খাটার বিনিময়ে কালো আইনটি যাতে দেশে না থাকে’

মুশতাক আমার ভাই

মুশতাক গতকালও জামিন পাননি, আজ কারাগারে মারা গেলেন

Comments

The Daily Star  | English

Onion prices surge in Dhaka after India’s export ban extension

Retailers were selling the homegrown variety of onion at Tk 204 a kg at Karwan Bazar today, compared with Tk 130 on Thursday

1h ago