ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শিকার ৭ কারাবন্দির বিবৃতি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সারাদেশে এই আইনে গ্রেপ্তার সবার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন একই আইনে আগে গ্রেপ্তার হওয়া সাত নাগরিক।
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল ও সারাদেশে এই আইনে গ্রেপ্তার সবার মুক্তির দাবি জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন একই আইনে আগে গ্রেপ্তার হওয়া সাত নাগরিক।

বিবৃতিতে তারা বলেন, বিগত কয়েক বছরে নিবর্তনমূলক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮ এর নিপীড়নমূলক মামলার শিকার হয়ে আমরা যারা কারাবন্দি ছিলাম সম্প্রতি কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছি এবং এই আইনে কারাবন্দি সবার জন্য শঙ্কিত বোধ করছি।

এতে বলা হয়, ঠিক একই সময়ে আমরা প্রচারমাধ্যমে জানতে পেরেছি পুরস্কারপ্রাপ্ত কার্টুনিস্ট কিশোর অভিযোগ করেছেন ২০২০ সালের ২ মে রাতে আটকের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে তাকে নির্যাতন করা হয়েছে। এমনকি লেখক মুশতাক আহমেদকেও বৈদ্যুতিক শক দেওয়া হয়েছে। নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইন ২০১৩ অনুযায়ী এটি অবশ্যই গুরুতর অপরাধ ও উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বরখেলাপ। প্রত্যেক বন্দির মানবাধিকার সুরক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের কিন্তু রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হেফাজতে নাগরিকরা মারা যাচ্ছেন এবং নির্মম শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন।

বিবৃতিদাতারা বলেন, একটি রাষ্ট্রের আইন তৈরি করা হয় নাগরিকদেরকে মানবাধিকার সমুন্নত ও সুরক্ষা প্রদান করার জন্য, কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সুরক্ষা দেওয়ার পরিবর্তে জনগণের জন্য একটি মরণফাঁদ কিংবা নির্যাতনকারীদের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ হত্যাকারী-জনগণের অর্থ লোপাটকারীরা আইনগত প্রক্রিয়ায় জামিন পেলেও, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় আইনগত প্রক্রিয়ায় জামিন না পাওয়ার সংস্কৃতি শুরু হয়েছে। যখন এমন হয় সেটি আর ন্যায্য আইন বলে পরিগণিত হয় না, হয়ে উঠে গণমানুষের বিরোধী আইন। বর্তমান বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সে রকমই একটি নিবর্তনমূলক আইন যা গণমানুষের জন্মগত স্বাধীনতা ও অধিকারসমূহকে রহিত করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক থেকে শুরু করে শিল্পী-আলোকচিত্রী, সাংবাদিক এমনকি ১৪ বছরের স্কুল পড়ুয়া শিশুও এই আইনের শিকার হয়েছেন এবং হচ্ছেন।

তাদের দাবি:

অবিলম্বে মানবাধিকার কেন্দ্রিক নীতি-নৈতিকতা সমুন্নত রেখে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন-২০০৬ সংস্কার করতে হবে এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে।

জেলা শহরসহ সারাদেশে এই আইনে গ্রেপ্তার সবাইকে অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।

বিচার প্রক্রিয়ায় কার্টুনিস্ট কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের তদন্ত ও বিচার করতে হবে।

লেখক মুশতাক আহমেদকে কারা হেফাজতে নির্যাতন ও মৃত্যুর কারণ যথাযথ, প্রয়োজনীয়, গ্রহণযোগ্য ও স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত করতে হবে এবং সেই তদন্ত প্রতিবেদন আনুষ্ঠানিকভাবে জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে।

বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংগঠক ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারুফ হোসেন, নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সংগঠক ও চট্টগ্রাম মহানগর ছাত্র ফেডারেশনের রাজনৈতিক শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক আজিউর রহমান আশাফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক মাইদুল ইসলাম, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, রাষ্ট্রচিন্তার সদস্য দিদারুল ভুঁইয়া, আর্কিটেক্ট গোলাম মাহফুজ জোয়ারদার এবং সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল।

Comments

The Daily Star  | English

DMCH doctors threaten strike after assault on colleague

A doctor at Dhaka Medical College Hospital (DMCH) was allegedly assaulted yesterday after the death of a private university student there, with some of his peers accusing the physicians of neglecting their duty in his treatment

5h ago