প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর সমাবেশ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, পুরনো আইন সংস্কারের দাবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং নিপীড়নমূলক উল্লেখ করে শিগগির এটিকে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, গবেষক ও লেখকরা।
Shahbag.jpg
শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মুশতাক হত্যার বিচার, ছাত্র-শ্রমিক, রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সমাবেশ হয়। ছবি: স্টার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং নিপীড়নমূলক উল্লেখ করে শিগগির এটিকে বাতিলের দাবি জানিয়েছেন শিক্ষক, গবেষক ও লেখকরা।

আজ শুক্রবার বিকাল ৪টায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘রাষ্ট্রীয় হেফাজতে মুশতাক হত্যার বিচার, ছাত্র-শ্রমিক, রাজবন্দীদের নিঃশর্ত মুক্তি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে’ সমাবেশ হয়। প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনগুলোর উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তারা এ দাবি জানান।

বক্তারা দেশের কিছু পুরনো আইনের কথা উল্লেখ করে বলেন, ২০০৬ সালের তথ্য এবং যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন, ২০০১ সালে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ আইন, ২০১৫ সালের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের নীতিমালা- এ আইনগুলোকে কিছুটা সংস্কার করলেই সাইবার স্পেসে নারী ও শিশু সুরক্ষা করা সম্ভব এবং যেকোনো ধরনের আর্থিক দুর্নীতিকে রোধ করা সম্ভব। এজন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজন নেই। অতিদ্রুত মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী এবং স্বাধীন মতকে নিপীড়নকারী এ কালো আইন বাতিল করতে হবে।

এসময় কারাগারে লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে গত ২৬ ফেব্রুয়ারি শাহবাগে মশাল মিছিল থেকে গ্রেপ্তার সাত শিক্ষার্থীর মুক্তি ও তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়।

সমাবেশে লেখক ও গবেষক মাহা মির্জা বলেন, ‘এ আইন সংস্কারের কথা অনেকে বলছেন। কিন্তু কেন আমরা এ কালো আইনটি বাতিল চাই। এ আইনে মানবাধিকার লঙ্ঘন হয় এমন কিছু ধারা এবং উপধারা আছে। এটিকে সংস্কার করেও কোনোভাবে রাখা সম্ভব না। কারণ এটি আদ্যোপান্ত একটি নিপীড়নমূলক এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী আইন।’

তিনি আরও বলেন, ‘নারী ও শিশুর সুরক্ষার জন্য কিছু কিছু ধারা এখানে রাখা যৌক্তিক বলে অনেক বলছেন। আবার কেউ কেউ এও বলছেন যে, সাইবার স্পেসে যে সব আর্থিক কেলেঙ্কারি হয়, সেগুলোকে ঠেকানোর জন্য এ আইন নাকি জরুরি। তবে আমরা মনে করি, নারী ও শিশুর সুরক্ষার কথা বলে এটিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। আমাদের পূর্বের যে বিদ্যমান আইনগুলো আছে, সেগুলো সংস্কারের মাধ্যমে সাইবার স্পেসের নারী ও শিশুর সুরক্ষা করা সম্ভব। কিন্তু সেটি না করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো ভয়ঙ্কর আইন তৈরি করে রাখা হয়েছে। আমরা এ আইন মানি না, অতিদ্রুত এটিকে বাতিল করতে হবে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘লেখক মুশতাক হত্যার প্রতিবাদ করতে গিয়ে যে সাত জন শিক্ষার্থীকে গ্রেপ্তার করা হলো, এ সাত সংখ্যা এ দেশের জন্য সৌভাগ্যের। এ দেশের যতগুলো পরিবর্তন এসেছে, সেখানে সাতের প্রভাব ছিল। ১৯৭১ সালের দিকে তাকালে দেখি, সেখানেও সাত আছে। সাত বীরশ্রেষ্ঠের দিকে তাকাই, সেখানেও সাত আছে। ৭ মার্চের সঙ্গে সাত আছে। আমরা যে যন্ত্রণা এবং অনাচারের মধ্যে আছি, সে অনাচারের বিরুদ্ধে আমাদের সৌভাগ্য হলো এ সাত।’

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সরকার মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চায় মন্তব্য করে এ শিক্ষক বলেন, ‘এ আইনে সবার মুখে ভাষা কেড়ে নিতে নয়, কেবল যাদের মুখের ভাষা তির্যক, যারা এ রাষ্ট্রকে পথ দেখাতে চায়, যারা সৃষ্টিশীল মানুষ, তাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে এ আইন তৈরি করা হয়েছে। এ আইনের প্রথম শহীদ হলেন সৃষ্টিশীল লেখক মুশতাক।’

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ডক্টরস ফর পিপলস হেলথের সংগঠক ডাক্তার হারুন অর রশীদ, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিনু কিবরিয়া ইসলাম, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক দীপক শীল, ছাত্র ফেডারেশনের সভাপতি গোলাম মোস্তফা এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন প্রিন্স প্রমুখ।

একই দাবিতে শাহবাগে বাংলাদেশ শ্রমিক অধিকার পরিষদও আলাদা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। সেখানে ডাকসুর সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুর বক্তব্য দেন।  

Comments

The Daily Star  | English

Abu Sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

12h ago