মিয়ানমারে রাতে বাড়ি-বাড়ি পুলিশি তল্লাশি, সকাল থেকে উত্তাল রাজপথ
মিয়ানমারে সেনাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ করছেন কয়েক হাজার মানুষ। আজ রোববার সকালে মান্দালে শহরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। সেখানে প্রচারিত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
মিয়ানমারে সেনাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে গণবিক্ষোভ করছেন কয়েক হাজার মানুষ। আজ রোববার সকালে মান্দালে শহরে সবচেয়ে বড় বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে। সেখানে প্রচারিত ভিডিওচিত্রে দেখা গেছে, নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নিহতদের স্মরণে দুই মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এরপর বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
এ ছাড়া, ইয়াঙ্গুন ও দাওয়েই শহরেও বিক্ষোভ হয়েছে। প্রতিদিনই মিয়ানমার বিক্ষোভ থেকে পুলিশি হামলার সংবাদ পাওয়া গেলেও আজ সকাল থেকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত কোনো হতাহতের তথ্য জানা যায়নি।
ইয়াঙ্গুনের কয়েকটি এলাকার বাসিন্দাদের বরাত দিয়ে আজ রোববার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, গত রাতে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ইয়াঙ্গুনের বেশ কটি এলাকায় সেনাবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের বাড়ি বাড়ি অভিযান চালায়। সে সময় তারা গুলিও ছোড়ে।
তারা আরও জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত কমপক্ষে তিন জন নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে, কোন অভিযোগে তাদের গ্রেপ্তার করা হলো তা জানা যায়নি। গণতন্ত্রকামী নেতাদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও খোঁজ নিতে শুরু করেছে পুলিশ ও সেনাবাহিনী।
দেশটির বিলুপ্ত ঘোষিত সংসদ সদস্য সিথু মং এক ফেসবুক পোস্টে জানিয়েছেন, সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির জন্য কাজ করেন এমন এক আইনজীবীর খোঁজে তার বাড়িতে গিয়েছিল সেনাবাহিনী। তবে সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে এ বিষয়ে মিয়ানমার পুলিশের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সামরিক সরকারের এক মুখপাত্রের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
অ্যাডবোকেসি গ্রুপ অ্যাসিসট্যান্স অ্যাসোসিয়েশন ফর পলিটিক্যাল প্রিজনারস (এএপিপি) বলেছে, সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দেশটিতে এক হাজার সাত শ’র বেশি মানুষকে আটক করা হয়েছে।
এএপিপি এক বিবৃতিতে বলেছে, আটক ব্যক্তিদের বুট দিয়ে লাথি মেরে, লাঠিপেটা করে কিংবা মারধর করে টেনে হিঁচড়ে পুলিশের গাড়িতে তোলা হয়েছে। তারা আবাসিক এলাকায় ঢুকে বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা করে। সে সময় পুলিশ ও সেনাবাহিনী গুলি চালায় ও বাড়ি-ঘরে জিনিসপত্র ভাঙচুর করে।
মিয়ানমারে গত ১ ফেব্রুয়ারি সেনা অভ্যুত্থান ও দেশটিতে নির্বাচিত নেতা অং সান সু চিকে আটক করার পর থেকেই ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হয়। প্রতিদিনের বিক্ষোভ-ধর্মঘটের কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা থেমে গেছে, দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে গেছে, প্রশাসনিক কার্যক্রমও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
জাতিসংঘ বলছে, মিয়ানমারে বিক্ষোভ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে ৫০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে। মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, বিক্ষোভ সমাবেশে নিরাপত্তারক্ষীদের হামলায় ৬০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন।
ভারতে পালিয়ে যাওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের ফেরত চায় মিয়ানমার
সামরিক সরকারের আদেশ পালন এড়াতে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যাওয়া বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ফেরত চেয়েছে মিয়ানমার।
রয়টার্স জানিয়েছে, দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশটির উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে সম্প্রতি সেখানকার প্রায় ৩০ পুলিশ কর্মকর্তা তাদের পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন।
চাম্পাইয়ের ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) মারিয়া সি. টি. জুয়ালি শনিবার রয়টার্সকে জানিয়েছেন, মিয়ানমারের ফালাম জেলার ডিসির তার কাছে একটি চিঠি পাঠিয়ে আট পুলিশকে ফেরত পাঠানোর অনুরোধ জানিয়েছেন।
তিনি আরও জানিয়েছেন, এ বিষয়ে এখন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
চিঠিতে চার পুলিশ সদস্যের বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজন নারী কর্মকর্তাও রয়েছেন, তাদের সবার বয়স ২২ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আপনাদের অনুরোধ করা হচ্ছে, দয়া করে ভারতের ভূখণ্ডে প্রবেশকারী আট পুলিশ সদস্যকে আটক করে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করুন।’
এ বিষয়ে জানতে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো উত্তর দেয়নি বলে জানিয়েছে রয়টার্স।
মিয়ানমারের পুলিশ আইন অমান্য আন্দোলনে যোগ দেওয়া ও জান্তাবিরোধী প্রতিবাদে অংশ নেওয়ার খবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লেও পুলিশের দেশ ছেড়ে পালানোর ঘটনা এটি প্রথম।
Comments