পোর্তোর সঙ্গে রোমাঞ্চকর লড়াইয়ে জিতেও জুভেন্টাসের বিদায়
নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকল জুভেন্টাস। যদিও শুরুতে পিছিয়ে পড়েছিল তারা। দুই লেগ মিলিয়ে ব্যবধান ৩-৩ থাকায় ম্যাচ গড়াল অতিরিক্ত সময়ে। সেখানে এফসি পোর্তো ফের খুঁজে নিল জালের ঠিকানা। পরে ইতালিয়ান সিরি আর শিরোপাধারীরা জয় নিশ্চিত করলেও শেষরক্ষা হয়নি। আন্দ্রেয়া পিরলোর শিষ্যদের বিদায় নিতে হলো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ থেকে। রোমাঞ্চকর লড়াই উপহার দিয়ে শেষ আটের টিকিট পেল পোর্তো।
মঙ্গলবার রাতে প্রতিযোগিতার শেষ ষোলোর দ্বিতীয় লেগে ঘরের মাঠ আলিয়াঞ্জ স্টেডিয়ামে ৩-২ গোলে জিতেছে জুভেন্টাস। প্রথম লেগে পোর্তো নিজেদের মাঠে জিতেছিল ২-১ গোলে। ফলে দুই লেগ মিলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৪-৪। অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে পরের পর্বে নাম লিখিয়েছে পর্তুগিজ ক্লাবটি।
বাঁধভাঙা উল্লাসে মাতা পোর্তোর হয়ে জোড়া গোল করেন সার্জিও অলিভেইরা। ম্যাচের লম্বা সময় একজন কম নিয়ে খেলতে হয় তাদের। জুভেন্টাসের হয়ে সমান সংখ্যক গোল করেন ফেদেরিকো চিয়েসা। অন্য গোলটি করেন আদ্রিয়ান র্যাবিও। ম্যাচ জুড়ে দলটির সেরা তারকা ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ছিলেন নিজের ছায়া হয়ে।
টানা দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলো থেকে ছিটকে গেল জুভেন্টাস। গতবার তাদের হতাশায় পুড়িয়েছিল অলিম্পিক লিওঁ। একই কায়দায় বিদায় নিয়েছিল তারা। প্রথম লেগে প্রতিপক্ষের মাঠে হারের পর দ্বিতীয় লেগে নিজেদের মাঠে জিতেও অ্যাওয়ে গোলের হিসাবনিকাশে সর্বনাশ হয়েছিল তাদের।
ম্যাচের প্রথম ভালো সুযোগটি পায় জুভেন্টাস। আলভারো মোরাতা তা কাজে লাগাতে পারলে তারা এগিয়ে যেত তৃতীয় মিনিটেই। হুয়ান কুয়াদ্রাদোর ক্রসে ফাঁকায় থাকা এই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার করেন জোরালো হেড। অসামান্য দক্ষতায় সেটা রুখে দেন পোর্তোর গোলরক্ষক আগুস্তিন মার্চেসিন।
ষষ্ঠ মিনিটে উল্টো বিপদ ঘটতে পারত জুভদের। মেহদি তারেমির শট ডি-বক্সের ভেতরে লিওনার্দো বোনুচ্চি ব্লক করেন। ফিরতি বলে হেড করেন ইরানের এই স্ট্রাইকার। কিন্তু বল ক্রসবারে লেগে মাঠের বাইরে চলে যায়।
১৯তম মিনিটে লিড নেয় পোর্তো। পেনাল্টি থেকে লক্ষ্যভেদ করেন অলিভেইরা। ডি-বক্সের ভেতরে তারেমিকে ফাউল করেছিলেন জুভেন্টাসের ডিফেন্ডার মেরিহ ডেমিরাল। তৎক্ষণাৎ স্পট-কিকের বাঁশি বাজান রেফারি।
গোল পেয়ে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে সফরকারীরা। টানা বেশকিছু আক্রমণ শানায় তারা। তবে জুভেন্টাস গোলরক্ষক ভোইচেখ স্ট্যান্সনি সতর্ক থাকায় বিপদ বাড়েনি। ২৪তম মিনিটে হেসুস কোরোনার শট রুখে দেওয়ার পরের মিনিটে ওতাভিওকেও হতাশ করেন তিনি।
২৭তম মিনিটে ফের কুয়াদ্রাদোর বিপজ্জনক ক্রস। কিন্তু মোরাতা ফের ব্যর্থ। তার কোণাকুণি শট ঠেকিয়ে দিয়ে পোর্তোর ত্রাতা মার্চেসিন। ফলে পিছিয়ে থেকে বিরতিতে যায় স্বাগতিকরা।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে ফেরে জুভরা। ৪৯তম মিনিটে ক্রিস্তিয়ানো রোনালদোর কাছ থেকে বল পেয়ে দর্শনীয় শটে জালে পাঠান চিয়েসা। পোর্তোর মাঠে প্রথম লেগেও গোল করেছিলেন এই ইতালিয়ান ফরোয়ার্ড।
পাঁচ মিনিট পরই বিশাল ধাক্কা খায় পোর্তো। তিন মিনিটের মধ্যে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন তারেমি। ফলে ১০ জনের দলে পরিণত হয় তারা। সামলে ওঠার আগেই গোল হজম করতে বসেছিল তারা। তবে র্যাবিওর উঁচু করে বাড়ানো বলে চিয়েসার প্রচেষ্টা বাধা পায় পোস্টে।
অতিথিদের চেপে ধরে ৬৩তম মিনিটে গোল আদায় করে নেয় জুভেন্টাস। কলম্বিয়ান উইঙ্গার কুয়াদ্রাদোর ক্রসে মাথা ছুঁইয়ে মার্চেসিনকে পরাস্ত করেন চিয়েসা। ৭৮তম মিনিটে পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড রোনালদোর হেড লক্ষ্যে না থাকায় কাঙ্ক্ষিত গোল পাওয়া হয়নি তুরিনের বুড়িদের।
যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে বল জালে পাঠিয়েছিলেন মোরাতা। কিন্তু অফসাইডের কারণে তা বাতিল হয়। শেষ বাজার কিছুক্ষণ আগে জয় প্রায় পেয়েই গিয়েছিল জুভরা। কুয়াদ্রাদোর বাঁ পায়ের বাঁকানো শট বাধা পায় ক্রসবারে। ফলে বিজয়ী খুঁজে নিতে অতিরিক্ত সময়ের দ্বারস্থ হতে হয়।
৯৯তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন মৌসা মারেগা। কোরোনার ক্রসে গোলরক্ষক বরাবর হেড করেন তিনি। ১১৩তম মিনিটে মোরাতা শট নেন ডি-বক্সের বাইরে থেকে। তা সহজেই লুফে নেন আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক মার্চেসিন।
১১৫তম মিনিটে ম্যাচে সমতা টানেন অলিভেইরা। অনেক দূর থেকে মাটি কামড়ানো ফ্রি-কিক নেন তিনি। এমন কিছুর জন্য প্রস্তুত ছিল না জুভেন্টাসের রক্ষণভাগ। গোলরক্ষক স্ট্যান্সনি বল হাত ছোঁয়ালেও পোস্টের বাইরে রাখতে পারেননি। এই গোলই ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দেয়।
দুই মিনিট পর আবার এগিয়ে যায় পিরলোর দল। ফেদেরিকো বার্নারদেস্কির কর্নারে হেড করে জাল কাঁপান র্যাবিও। অন্তিম সময়ে পেনাল্টির আবেদন তুলেছিলেন তারা। কিন্তু রেফারি তা নাকচ করে দেন। বাকি সময়ে আর কোনো গোল না হওয়ায় তাই জিতেও খালি হাতে মাঠ ছাড়তে হয় জুভদের।
Comments