কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার সম্পন্ন

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়।
kishore
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর। ছবি: স্টার

কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর একটি হাসপাতালে তার অস্ত্রোপচার করা হয়।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরের বড় ভাই, লেখক আহসান কবির।

তিনি বলেন, ‘আজ কিশোরের ডান কানে অস্ত্রোপচার (টিমপ্যানিক মেমব্রেন রিপেয়ার মাইরিংগোপ্লাসটি) করা হয়েছে। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে। এটা বসানোর পর তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অবস্থা ভালোর দিকে গেলে সেটা অটোমেটিকেলি বের হয়ে আসবে। অন্যথায় চিকিৎসকরা অবস্থা পর্যালোচনা করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন।’

কিশোরের ডায়াবেটিসের বিষয়ে আহসান কবির বলেন, ‘কিশোরের ডায়াবেটিস এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকায় আজ অস্ত্রোপচারটা করা হলো। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে তাকে অপারেশনে থিয়েটারে নেওয়া হয়। দুপুর পৌনে ২টা নাগাদ অস্ত্রোপচার শেষে তাকে কেবিনে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে কিশোর কিছুটা ভালো বোধ করছে। কিশোরের চোখেরও অপারেশন করতে হবে। চিকিৎসকরা তার শারীরিক অবস্থা বুঝে পরবর্তী উদ্যোগ নেবেন।’

কার্টুন আঁকার অপরাধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার হয়ে ৩০০ দিন কারাবন্দি থাকার পর গত ৩ মার্চ কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোরের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। পরদিন ৪ মার্চ তিনি কাশিমপুর কারাগার থেকে মুক্তি পান।

কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর দ্য ডেইলি স্টারকে এবং গত ১০ মার্চ আদালতে হাজির হয়ে হেফাজতে থাকাকালে নির্যাতনের শিকার হওয়ার বর্ণনা দেন কিশোর। কিশোর জানান, গত ৫ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হলেও ২ মে আনুমানিক পৌনে ৬টার সময় ১৬ থেকে ১৭ জন সাদা পোশাকধারী লোক তাকে কাকরাইলের বাসা থেকে জোর করে হাতকড়াসহ মুখোশ পরিয়ে অচেনা নির্জন জায়গায় নিয়ে যায়। করোনা নিয়ে তার আঁকা কিছু কার্টুন দেখিয়ে কেন এঁকেছে এবং কার্টুনের চরিত্রগুলো কারা প্রশ্ন করা হয়।

‘এক পর্যায়ে প্রচণ্ড জোরে আমার কানে থাপ্পর মারে। কিছুক্ষণের জন্যে আমি বোধশক্তিহীন হয়ে পড়ি। বুঝতে পারছিলাম আমার কান দিয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। তারপর স্টিলের পাত বসানো লাঠি দিয়ে পায়ে পেটাতে থাকে। যন্ত্রণা ও ব্যথায় সজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলাম। বর্তমানে আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ, কান ‍দিয়ে পুঁজ পড়ে, হাঁটতে পারি না, হঠাৎ করে পড়ে যাই। এবং শরীরে আরও নানাবিধ রোগের উপসর্গ দেখা যাচ্ছে’, যোগ করেন তিনি।

গত বছরের মে’তে কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদকে রাজধানীর কাকরাইল ও লালমাটিয়া থেকে আটক করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। কিশোর ও মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রমনা থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

চলতি বছরের ৪ ফেব্রুয়ারি পুলিশ কিশোর, মুশতাক ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয়। পুলিশ জানায়, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সাবেক পরিচালক মিনহাজ মান্নানের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি। বাকি সাত আসামি— সাংবাদিক তাসনীম খলিল, সাংবাদিক সাহেদ আলম, ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন, জুলকারনাইন সায়ের খান, আশিক ইমরান, স্বপন ওয়াহিদ ও ফিলিপ শুমাখার বিদেশে থাকায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ খতিয়ে দেখা সম্ভব হয়নি।

সাইবার ট্রাইব্যুনাল গত ১০ ফেব্রুয়ারি এই মামলার পুনঃতদন্তের আদেশ দেন।

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) উপপরিদর্শক ও মামলাটির নতুন তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আফছর আহমেদ গত ২৩ ফেব্রুয়ারি কিশোর ও লেখক মুশতাক আহমেদের তিন দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেছিলেন। এর এক দিন পরে ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাবন্দি অবস্থায় মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর হয়। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি কিশোরের রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করেন আদালত।

আরও পড়ুন:

আদালতেও নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন কিশোর

কিশোরকে নির্যাতনের অভিযোগ: সেশন কোর্টে আবেদন করার নির্দেশ

কিশোর-মুশতাকের সামনে অসহায় এক সাংবাদিক

সজোরে আঘাত...ইলেকট্রিক শক...

নির্যাতন করা হয়েছে, এখন হাসপাতালে যাচ্ছি: কিশোর

‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন পর্যালোচনা নয়, বাতিল করতে হবে’

১০ মাস পর মুক্তি পেলেন কার্টুনিস্ট কিশোর

কিশোরের ক্ষোভ, চিন্তা ও বিবেকের স্বাধীনতা

মুশতাক আমার ভাই

‘কিশোরের সঙ্গে আজ মুশতাকেরও মুক্ত হওয়ার কথা ছিল’

যা ঘটেছিল মুশতাককে ধরে নিয়ে যাওয়া সেই রাতে

কিশোর ভালো আছেন, এখনো কানের বিশেষ উন্নতি হয়নি

কার্টুনিস্ট কিশোরের রিমান্ড নামঞ্জুর

কারাবন্দি কার্টুনিস্ট কিশোর পেলেন রবার্ট রাসেল কারেজ অ্যাওয়ার্ড

কার্টুনিস্ট কিশোর, লেখক মুশতাক গ্রেপ্তার

Comments

The Daily Star  | English
Normalcy returning to garment sector

Govt to update US on labour rights

Bangladesh will write to the US government about the improvement in working conditions and the steps it has taken to enhance labour rights, said a top government official today.

14m ago