জুলুমকে বৈধতা দিতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন: আনু মুহাম্মদ

অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কথা বলা বন্ধ রাখতে এবং জুলুমকে বৈধতা দেয়ার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ৷
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ৷ ছবি: স্টার

অন্যায়, অনিয়মের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের কথা বলা বন্ধ রাখতে এবং জুলুমকে বৈধতা দেয়ার জন্যই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. আনু মুহাম্মদ৷

শনিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে 'ছাত্র শ্রমিক জনতার সংহতি' ব্যানারে ছাত্র ইউনিয়নের উদ্যোগে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ মন্তব্য করেন৷

সমাবেশে চার দফা দাবি জানানো হয়৷ দাবিগুলো হচ্ছে- ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, গ্রেপ্তারকৃতদের মুক্তি, ছাত্রনেতাদের নামে করা মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও কারাগারে লেখক মুশতাক হত্যার বিচার৷

সমাবেশে আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বর্তমান সরকার মনে করে তারা খুবই জনপ্রিয়। তাহলে কেউ যদি তাদের সমালোচনা করে, কিংবা ভিন্ন মত প্রকাশ এবং অন্যায়ের সমালোচনা করে, আর সেটা যদি তারা ভুল মনে করে, তাহলে তাদের অসংখ্য লোক থাকার কথা, যারা তার প্রতিবাদে লিখবে, কথা বলবে এবং এভাবে সমাজের সবাই বুঝতে পারবে কোন পক্ষের কথা সত্য আর কোনটি মিথ্যা৷ কিন্তু সরকার এ পথে যেতে চায় না, কেন যেতে চায় না? কেন কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে সরকারের বল প্রয়োগকারী বাহিনী মানুষকে থামানোর চেষ্টা করে? ফেসবুকে একটি লেখা লেখার জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে জেলে যেতে হয় কেন? একটি লেখা লেখার জন্য কেন একজনকে জেলে গিয়ে নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা যেতে হয়? আমরা মুশতাক এবং কিশোরের কথা জানি৷ জেলখানা হচ্ছে বাংলাদেশেরই একটি প্রতিচ্ছবি৷ যেখানে ধরে ধরে ভিন্নমতের মানুষদের আটক করা হচ্ছে৷'

এ সরকার আইন ভঙ্গ করেছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, 'এ সরকার আইনের শাসনের কথা বলে, কিন্তু এ সরকার যেসব আইন তাদের জন্য অসুবিধাজনক, সেগুলো ভঙ্গ করে যাচ্ছে৷ আইনে আছে পুলিশি হেফাজতে কাউকে নির্যাতন করা যাবে না৷ কিন্তু আমরা অবিরাম দেখতে পাচ্ছি, অনেক মানুষকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করছে৷ আইনে আছে সাদা পোশাকে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারবে না৷ কিন্তু তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হচ্ছে৷ এভাবে সরকার একের পর এক জুলুম করে যাচ্ছে, সেটিকে বৈধতা দেয়ার জন্যই সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করেছে৷’

আনু মুহাম্মদ বলেন, 'সবাইকে মত প্রকাশের অধিকার দিতে হবে, যদি কারও মতের সঙ্গে ভিন্নতা থাকে তাহলে মত দিয়ে তাকে মোকাবিলা করতে হবে, কথার উত্তরে কথা, লেখার উত্তরে লেখা, কারও মত যদি পছন্দ না হয়, তাহলে পাল্টা মত দাও৷ কারও লেখা যদি পছন্দ না হয়, তাহলে পাল্টা লেখা লেখো। এটাই হলো যে কোনও সভ্য সমাজের বৈশিষ্ট্য।’

সমাবেশে সংহতি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান বলেন, 'একটি রাষ্ট্রের সঙ্গে সাধারণ নাগরিকের সম্পর্কের দূরত্ব কতদূর হলে, সে রাষ্ট্র এরকম একটি আইন করতে পারে৷ আমার কাছে মনে হয়, যে ঔপনিবেশিক আইনগুলো রয়েছে, সেগুলোকে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের মধ্যে সন্নিবেশিত করা হয়েছে৷ যেটাকে আমরা বলি অফিসিয়াল সিক্রেট আইন৷ যা ঔপনিবেশ আমলে করা হয়েছে৷ সে সময়ে যারা শাসক ছিলেন তারা এদেশের মানুষ ছিলেন না, তারা সাধারণ মানুষদের দমানোর জন্যই এ ধরনের আইন প্রণয়ন করেছিলেন৷ এ আইনকে আমি বলি ক্ষমতাসীন অপরাধীদের নিরাপত্তা আইন৷'

সমাবেশে আরও সংহতি জানান ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দীসহ অনেকে।

আরও পড়ুন-

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে শাহবাগে বিক্ষোভ মিছিল-সমাবেশ

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল, পুরনো আইন সংস্কারের দাবি

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে নারীদের পদযাত্রা

Comments

The Daily Star  | English

Abu sayed’s death in police firing: Cops’ FIR runs counter to known facts

Video footage shows police shooting at Begum Rokeya University student Abu Sayed, who posed no physical threat to the law enforcers, during the quota reform protest near the campus on July 16. He died soon afterwards.

8h ago