ঢামেকের কোভিড আইসিইউতে আগুন: কোনো ‘জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা’ ছিল না
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) কোনো ‘জরুরি বহির্গমন ব্যবস্থা’ ছিল না।
দুর্ঘটনার সময় গুরুতর অসুস্থ রোগীদের আইসিইউ থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দলের উপস্থিতি থাকার কথা ছিল। কিন্তু গত বুধবার হাসপাতালের কোভিড-১৯ ইউনিটের আইসিইউতে আগুন লাগলে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।
আইসিইউ জরুরি বহির্গমন পরিকল্পনার অভাবে রোগীদের অন্য জায়গায় সরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে অব্যবস্থাপনা দেখা দেয় বলে দাবি করেছেন বিশেষজ্ঞ এবং রোগীদের আত্মীয়স্বজনরা।
ওই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চার জনের মৃত্যু হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহমেদ খান জানান, আগুন কিংবা ভূমিকম্পের মতো জরুরি অবস্থায় আইসিইউ থেকে রোগীদের স্থানান্তরের জন্য একটি প্রটোকল এবং পরিকল্পনা মেনে চলা প্রতিটি হাসপাতালের জন্য বাধ্যতামূলক।
পরিকল্পনায় রোগীদের স্থানান্তরের পর রাখার জন্য একটি আলাদা জায়গা, চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ড বয়, পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের সমন্বয়ে একটি ইন-হাউজ রেসপন্স টিম থাকা উচিত, যারা বেডসহ রোগীদের স্থানান্তর ও তাদের ব্যবস্থাপনা করতে পারবেন বলে গত বৃহস্পতিবারে দ্য ডেইলি স্টারকে জানান তিনি।
‘কিন্তু আমরা ঢামেকে এ ধরনের কোনো পরিকল্পনা দেখিনি এবং আগুন লাগার পর রোগীদের আত্মীয়স্বজন ছাড়া কাউকে দেখা যায়নি তাদের স্থানান্তরের চেষ্টা করতে। এ কারণে স্থানান্তরের পর রোগীদের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হয়’, বলেন আলী আহমেদ।
তিনি জানান, ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের পক্ষ থেকে সব হাসপাতালকে এ সংক্রান্ত পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও নিয়মিত জরুরি অগ্নিনির্বাপণ মহড়ার আয়োজন করতে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
ঢামেকে আগুন লাগার ঘটনাটিকে বিশ্লেষণ করে ফায়ার সার্ভিসের সাবেক এই মহাপরিচালক জানান, এ ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের কর্মীদের এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে কোনো প্রশিক্ষণই দেয়নি।
‘আমরা জানতে পেরেছি যে, “হাই-ফ্লো নাসাল ক্যানুলা’’ থেকে আগুনের সূত্রপাত এবং শুরুতেই আগুন নেভানো যেত। কিন্তু অবস্থা দেখে মনে হয়েছে যে, কেউ আগুন নেভানোর জন্য কোনো ব্যবস্থাই নেননি’, বলেন তিনি।
আলী আহমেদের আশঙ্কা, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যদি সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন না করে এবং কর্মীদেরকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ না দেয়, তাহলে এ ধরনের ঘটনা ভবিষ্যতে আরও ঘটতে পারে।
গত বুধবার সকাল ৮টা ১০ মিনিটের দিকে ঢামেকের নতুন ভবনের কোভিড-১৯ ইউনিটের আইসিইউ’র ১২ নম্বর বেডের কাছে একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্র বিস্ফোরিত হয় এবং সেখান থেকে ধোয়া ছড়াতে শুরু করে।
গত বছর মহামারি শুরুর পর করোনা রোগীদের জন্য ১৪ বেডের আইসিইউ ইউনিট স্থাপন করে ঢামেক কর্তৃপক্ষ।
আগুন লাগার কিছুক্ষণের মধ্যেই আইসিইউ ইউনিটে রোগীদের রেখে চিকিৎসক ও নার্সরা দ্রুতগতিতে বের হয়ে আসেন। সেসময় রোগীরা তাদের কাছে সাহায্য চেয়ে আকুতি জানালেও কেউ এগিয়ে যাননি বলে দাবি করেছেন রোগীদের আত্মীয়রা।
বৃহস্পতিবার রোগীদের একাধিক আত্মীয় দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা অক্সিজেন সাপোর্ট ছাড়াই রোগীদের আইসিইউ থেকে স্থানান্তর করেন, যে কারণে রোগীদের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
আত্মীয়রা আরও অভিযোগ করেন যে, স্থানান্তরের পরও হাসপাতালের কর্মীরা রোগীদের কোনো ধরনের সহায়তা করেননি।
গত দুদিন হাসপাতালটি পরিদর্শনে গিয়ে দেখা যায় যে, ভবনে রাখা অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রগুলোর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেছে।
এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য তিনটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের চার সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান নূর হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য রেকর্ড করেছেন।
তদন্ত চলমান আছে। তবে আগুন কীভাবে লেগেছিল সে বিষয়ে তারা এখনো নিশ্চিত না বলে জানান তিনি।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র এবং অন্যান্য যন্ত্রপাতির ব্যবহার সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে ফায়ার সার্ভিসের এই কর্মকর্তা জানান, তারা পরবর্তী পরিদর্শনে বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।
রোগীদের সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা এবং রেসপন্স টিমের বিষয়ে ঢামেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক জানান, তাদের এ সংক্রান্ত একটি প্রটোকল আছে এবং একটি রেসপন্স টিমকেও প্রশিক্ষণ দেওয়া আছে, কিন্তু সেদিনের দুর্ঘটনার সময় বিষয়টি সঠিকভাবে কাজ করেনি।
অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের ব্যাপারে তিনি জানান, তদন্ত কমিটি এ বিষয়টি যাচাই করে দেখবে।
Comments