দেশে করোনার ৩৪ নতুন জিনগত মিউটেশন

করোনাভাইরাস ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার হাজার ৬০৪ বার মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি রূপ একেবারেই নতুন। অর্থাৎ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই রূপগুলো পাওয়া যায়নি।
corona_logo
ছবি: সংগৃহীত

করোনাভাইরাস ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বাংলাদেশে চার হাজার ৬০৪ বার মিউটেশন বা রূপ পরিবর্তন করেছে। এর মধ্যে ৩৪টি রূপ একেবারেই নতুন। অর্থাৎ পৃথিবীর আর কোনো দেশে এই রূপগুলো পাওয়া যায়নি। 

বাংলাদেশের গবেষকরা মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির সঙ্গে যৌথভাবে ৩৭১টি জিনোম সিকোয়েন্স বিশ্লেষণ করে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গবেষকরা করোনাভাইরাসের এই নতুন ৩৪টি রূপের নাম দিয়েছেন ‘বাংলা মিউটেশন’।

গবেষকরা জানান, এই রূপগুলোর বেশিরভাগই পাওয়া গেছে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরে। এই তিন জেলার প্রত্যেকটিতে অন্তত তিনটি করে নতুন রূপ আবিষ্কৃত হয়েছে।

দেশে পাওয়া করোনাভাইরাসের মোট চার হাজার ৬০৪টি রূপের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রূপ পাওয়া গেছে চট্টগ্রামে। এই জেলায় পাওয়া করোনার পরিবর্তিত রূপগুলো সৌদি আরব ও মধ্য প্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, ইউরোপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া গেছে। দেশের অন্যান্য স্থানে পাওয়া রূপগুলোর সঙ্গে মিল পাওয়া যায় মূলত ইউরোপের।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আদনান মান্নান, সহকারী অধ্যাপক মাহবুব হাসান এবং চট্টগ্রাম বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও বায়োটেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক রাসেল দাশ এই গবেষণার নেতৃত্ব দেন।

চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যাথলজি বিভাগের প্রধান এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এস এম মাহবুবুর রশীদ এই গবেষণার তদারকি করেছেন।

মালয়েশিয়ার মোনাস ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী হামিদ হোসেন ও নাজমুল হাসান এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আসমা সালাউদ্দিন, রাশেদুজ্জামান ও মেহেদী হাসান তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে সহায়তা করেছেন।

আজ রোববার এই গবেষণাপত্রটি নেদারল্যান্ডসের ‘এলসেভিয়ার’ ও ‘ভাইরাস রিসার্চ অব নেদারল্যান্ডস টুডে’ নামের আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

ড. আদনান মান্নান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে আবিষ্কৃত ৩৪টি নতুন রূপ নিয়ে আরও গবেষণা করা উচিৎ। যাতে বোঝা যায় এগুলো বর্তমান ধারার করোনাভাইরাসের চেয়ে বেশি সংক্রামক কিনা।’

রাসেল দাশ বলেন, ‘এই গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এখানে সার্স কোভ-২ এর কিছু আঞ্চলিক ও নতুন রূপ পাওয়া গেছে।’

তিনি আরও বলেন, এই গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে ডি১৬৪জি- এর রূপ পরিবর্তনের প্রবণতা অনেক বেশি।

‘এই গবেষণাটি আমাদের জন্য একটি নির্দেশিকার মত। যার মাধ্যমে আমরা আরও গবেষণা করে জানতে পারবো যে দেশে খুঁজে পাওয়া নতুন এই রূপগুলোর বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা কতখানি,’ যোগ করেন তিনি।

মাহবুব হাসান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘দেশে যেহেতু করোনাভাইরাসের একেবারে নতুন ৩৪টি মিউটেশন পাওয়া গেছে, সম্ভাবনা আছে অনেক বেশি সংক্রমণ ছড়াতে পারে এমন কোনো মিউটেশন হওয়ার। কাজেই এ বিষয়ে আরও বেশি গবেষণা করা খুবই জরুরি।’

এএমএএম জুনায়েদ সিদ্দিক বলেন, ‘এই গবেষণার মাধ্যমে দেশে পাওয়া সার্স কোভ-২ মিউটেশনগুলো নিয়ে আরও গবেষণার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আমরা জানতে পেরেছি। বিশেষ করে যারা বিদেশ থেকে এসেছেন এবং যারা এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়েছেন, তাদের কাছ থেকে নমুনা সংগ্রহ করে আমাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে যে তারা নতুন কোনো মিউটেশনে আক্রান্ত কি না, তাদের শরীরে ভ্যাকসিন কাজ করছে কি না।’

আরও পড়ুন:

যুক্তরাজ্যের নতুন স্ট্রেইন বাংলাদেশে শনাক্ত

দেশে দ. আফ্রিকাসহ করোনার ১২ স্ট্রেইন শনাক্ত

‘বিসিএসআইআর নতুন স্ট্রেইন আবিষ্কার করে বসে আছে! জানাবে না?’

যুক্তরাজ্যে ‘নতুন’ করোনাভাইরাস শনাক্ত

যুক্তরাজ্যে শনাক্ত করোনার নতুন স্ট্রেইন ‘আরও বেশি প্রাণঘাতী হতে পারে’

করোনার নতুন স্ট্রেইন শনাক্ত হয় না বাংলাদেশের পিসিআর পরীক্ষায়

করোনার নতুন স্ট্রেইন: করছি কী, করণীয় কী

ভারতে করোনার নতুন স্ট্রেইন, বাংলাদেশে সতর্কতা জরুরি

করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইনে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা ‘কিছুটা কমতে পারে’

Comments

The Daily Star  | English

3 quota protest leaders held for their own safety: home minister

Three quota protest organisers have been taken into custody for their own safety, said Home Minister Asaduzzaman Khan

20m ago