জীবন পাওয়া ল্যাথামের সেঞ্চুরি, বাজে ফিল্ডিংয়ে আক্ষেপের হার

টম ল্যাথাম-ডেভন কনওয়ের জুটিতে ম্যাচ ফের স্বাগতিকদের হাতে চলে গেলে দারুণ থ্রোতে দলকে খেলায় ফেরান তামিম ইকবাল। কিন্তু এরপরের কয়েক ওভার চলে যেন বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া।
Tom Latham
ছবি: সংগ্রহ

কিছুটা মন্থর উইকেটে জুতসই পুঁজি পাওয়ার পর দ্রুত নিউজিল্যান্ডের ৩ উইকেট তুলে আশার ঝিলিক দেখাচ্ছিল বাংলাদেশ। টম ল্যাথাম-ডেভন কনওয়ের জুটিতে ম্যাচ ফের স্বাগতিকদের হাতে চলে গেলে দারুণ থ্রোতে দলকে খেলায় ফেরান তামিম ইকবাল। কিন্তু এরপরের কয়েক ওভার চলে যেন বাজে ফিল্ডিংয়ের মহড়া। তাসকিন আহমেদের বলে মুশফিকুর রহিম ছেড়ে দেন জিমি নিশামের লোপ্পা ক্যাচ, শেখ মেহেদী হাসান নিজের বলে হাতছাড়া করেন ল্যাথামকে ফেরানোর সুযোগ। সম্ভাবনা জাগিয়েও নিউজিল্যান্ডের মাঠে স্বাগতিকদের বিপক্ষে প্রথম জয়টা তাই আর পাওয়া হয়নি বাংলাদেশের।

মঙ্গলবার ক্রাইস্টচার্চে আগের ম্যাচের বেহাল দশা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে ২৭১ রান এসেছিল বোর্ডে। পঞ্চাশতম ফিফটি তুলে তামিম করেন ৭৮ রান। মাত্র ৫৭ বলে ৭৩ করে অপরাজিত থাকেন মোহাম্মদ মিঠুন। পরে বল হাতে জেতার পরিস্থিতি তৈরি করেও বাংলাদেশ হেরেছে ৫ উইকেটে। তামিমদের পুড়িয়ে স্বাগতিক অধিনায়ক ল্যাথামই বনেছেন নায়ক। ৫৮ রানে জীবন পেয়ে দলকে জিতিয়ে তিনি করেন অপরাজিত ১১০ রান। ৩ রানে জীবন পাওয়া নিশাম পরে আউট হন ৩৪ বলে ৩০ রান করে। তার আগে গুরুত্বপূর্ণ কিছু শটে খেলা করে দিয়ে যান স্বাগতিকদের জন্য সহজ। এই জয়ের সঙ্গে এক ম্যাচ হাতে রেখে সিরিজও নিশ্চিত করেছে কিউইরা।

উইকেটে বল একটু ধরছিল। ২৭১ রানের পুঁজি থাকায় এই কারণেই আশা ছিল বাংলাদেশের। কিউই দুই ওপেনার হেনরি নিকোলস আর মার্টিন গাপটিল আনেন সতর্ক শুরু। কিন্তু মোস্তাফিজ তাদের ভোগাচ্ছিলেন ভালোই।

গাপটিল কাবু হন ফিজের কাটারেই। দলের ২৮ রানে সোজা ক্যাচ তুলে দেন উপরে। উইকেটের মন্থরভাব দেখে নবম ওভারেই স্পিনার ডাকেন তামিম। স্লিপে ফিল্ডার রেখে বাড়ান চাপ। সেই চাপে কাবু হয় নিউজিল্যান্ড। শেখ মেহেদী হাসান এসে পর পর হেনরি নিকোলস, উইল ইয়ংকে আউট করে দেন। নিকোলস স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হন বোল্ড। পেছনের দিকে রান বের করতে গিয়ে একই দশা হয় ইয়ংয়ে। ৫৩ রানে ৩ উইকেট তুলে বাংলাদেশ ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে আসে।

এরপর অধিনায়ক ল্যাথামের সঙ্গে জমে ওঠে ডেভন কনওয়ের জুটি। জুটি ভাঙতে অবশ্য সহজ রান আউটের সুযোগ হাতছাড়া করেন তাসকিন। শেখ মেহেদীর বলে একবার ক্যাচ উঠিয়েও ফাঁকায় পড়ায় রক্ষা হয় কনওয়ের।

শতরানের জুটিতে তারা আশা ফিকে করে দিচ্ছিলেন বাংলাদেশের। এই জুটি ভাঙতে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবার বল করতে আসেন মোহাম্মদ মিঠুন। তাতেও কাজ হয়নি। শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক তামিমই ভেঙেছেন জুটি। ৩৪তম ওভারে তাসকিনের বলে মিড অফে ঠেলে এক রান নিতে চেয়েছিলেন কনওয়ে। সেখানে দাঁড়ানো তামিম বল ধরে দারুণ থ্রোতে ভেঙে দেন স্টাম্প। ৯৩ বলে ৭২ করে ফেরেন কনওয়ে।

এরপরই বাংলাদেশের বাজে ফিল্ডিংয়ের সেই হতাশার গল্প। পুরো ম্যাচে অনেকগুলো বল হাত ফসকে বেরিয়ে রান বেরিয়েছে। মাহমুদউল্লাহ সহজ চার ধরতে পারেননি। আরেকবার তার হাতে বল রেখে ব্যাটসম্যানরা নিয়েছে ২ রান। হাত ফসকে ৪ দিয়েছেন শেখ মেহেদীও।

মোস্তাফিজ শেষের স্পেলে নিশামকে বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ বানিয়েছিলেন। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। ল্যাথাম পরে ১০১ বলে বাউন্ডারি মেরে পুরো করেন ক্যারিয়ারের ১৭তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। তাই আর কোনো শঙ্কা থাকেনি কিউইদের।

Tamim Iqbal

টস হেরে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের ইনিংস এর আগে রাঙিয়েছিলেন তামিম আর মিঠুন। লিটন দাস দ্রুত ফিরে যাওয়ার পর সৌম্য সরকারকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৮১ রানের জুটি আনেন তামিম। শুরুতে ধুঁকেও পরে থিতু হওয়া সৌম্য ইতিবাচক কিছুর আভাস দিচ্ছিলেন। কিন্তু তার আউটেই ভাঙে জুটি।

ফিফটির ফিফটি করে তামিম হয়েছেন আরও দুর্বার। নিশামের ফুটবল স্কিলে দুর্ভাগ্যজনক রানআউটে কাটা পড়ে হাতছাড়া করেন সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বাকি ইনিংসে নায়ক ছিলেন একজনই, মিঠুন। ঝড়ো ফিফটিতে দলকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে যাওয়ার পুরো কৃতিত্ব তার। 

মুশফিক যখন নামেন, তখন ছিল কেবল রান বাড়ানোর তাড়া। এমন অবস্থায় বলে-রানে ভারসাম্য রাখতে তিনি কিছুটা ভুগছিলেন। কিছুটা বাড়তি ডট বলের চাপ বাউন্ডারিতে কমান। কিন্তু পুরোটা পুষিয়ে দেওয়ার আগে ফিরতে হয়েছে তাকে। ৪১তম ওভারে মিচেল স্যান্টনারের বল পেটাতে গিয়ে ক্যাচ যায় মিড অনে। ৫৯ বল খেলে ৩৪ করেন মুশফিক। মিঠুন শুরু থেকেই ছিলেন সাবলীল। বল নষ্ট না করে রান আনতে থাকেন তিনি। ৪৩ বলে ছক্কা মেরে পুরো করেন ফিফটি।

শেষের ঝড়ের প্রত্যাশা ছিল আরেকজনের ব্যাটে। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ ঠিক সেভাবে জ্বলে উঠতে পারেননি। ৪৮তম ওভারে কাইল জেমিসনের বলে ক্যাচ উঠিয়ে ফেরার সময় তার রান ছিল ১৭ বলে ১৬।

মিঠুন আর হাল ছাড়েননি। একদম শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন। ইনিংসের শেষ বলেও মেরেছেন বাউন্ডারি। তার ৫৭ বলে ৬ চার, ২ ছক্কার তার ৭৩ রানের ইনিংসটাই বাংলাদেশকে দিয়েছিল অক্সিজেন। কিন্তু তা আর কাজে লাগানো গেল কই!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৭১/৬  (তামিম ৭৮, লিটন ০, সৌম্য ৩২, মুশফিক ৩৪, মিঠুন ৭৩*, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শেখ মেহেদী ৭, সাইফুদ্দিন ৭*; বোল্ট ১/৪৯, হেনরি ১/৪৮, জেমিসন ২/৩৬, নিশাম ০/৭৩, স্যান্টনার ২/৫১, মিচেল ০/৮) 

নিউজিল্যান্ড: ৪৮.২ ওভারে ২৭৫/৫ (গাপটিল ২০, নিকোলস ১৩, কনওয়ে ৭২, ইয়ং ১, ল্যাথাম ১১০*, নিশাম ৩০, মিচেল ১২*; মোস্তাফিজ ২/৬২, তাসকিন ০/৬৭, শেখ মেহেদী ২/৪২, সাইফুদ্দিন ০/৪৩, মিরাজ ০/৩৮, মিঠুন ০/১২, সৌম্য ০/৭)।

ফল: নিউজিল্যান্ড ৫ উইকেটে জয়ী।

ম্যাচ সেরা: টম ল্যাথাম।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজে নিউজিল্যান্ড ২-০ ব্যবধানে জয়ী।

Comments

The Daily Star  | English

Food inflation above 10% for half a year, why?

Experts say raising policy rate would have little impact on lowering food prices

29m ago