গাছকাটার প্রতিবাদে পাহারা-শোকসভা
মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার আগার পানজুমে বন্যপ্রাণীর ফলাদি গাছসহ মোট ২৫টি চাম গাছ কেটে ফেলতে চিহ্নিত করেছে ছোটলেখা চা বাগান কর্তৃপক্ষ, দুটি গাছ কেটেও ফেলেছে।
গত ১৯ মার্চ এই গাছগুলো কাটার পর থেকে এলাকায় জীবনরক্ষাকারী বাকী গাছ রক্ষায় পাহারা বসিয়েছেন এলাকাবাসী।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা যায়, পানজুমের সড়কের পাশে চাম গাছের কয়েকটি খণ্ড ফেলে রাখা হয়েছে। লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে ২৫টি গাছ। বাগানে চাপালিশসহ জাম, কাঁঠাল, আওয়াল, গুঁতগুঁতি, হরতকি, বহেড়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় অনেক গাছ রয়েছে।
পুঞ্জি প্রধান সুখমন আমসে দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘জুমে যদি বড় গাছ না থাকে তাহলে আমাদের একমাত্র ফসল পান গাছের লত উঠবে না। তাই গাছকে বাঁচিয়ে রাখা ও যত্ন করা আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এর সঙ্গে আমাদের জীবন ও জীবিকা জড়িত।’
তিনি আরও বলেন, ‘অথচ এই গাছ কর্তৃপক্ষ কেটে নিতে চায়। গাছ কেটে নিলে পান চাষ হবে না। আমাদের পরিবার হুমকির মধ্যে পড়বে। এখন প্রতিদিন পাহারা দিয়ে রাখতে হচ্ছে।’
উপজেলা প্রশাসনের কাছে তারা অভিযোগ দিয়েছেন বলেও জানান সুখমন আমসে।
এই গাছ কাটার প্রতিবাদে সিলেটের খাদিমনগরে আজ বুধবার সকাল সাড়ে ৯টায় শোকসভা করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), কাপেং ফাউন্ডেশন ও কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠন।
শোকসভা থেকে চা বাগান কর্তৃপক্ষের জমিদারি মনোভাব সংশোধন করে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মানবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানানো হয়।
সভার সভাপতি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল করিম কিম বলেন, ‘“আমি চাই গাছকাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়”-এমনটা চেয়েছিলেন জনপ্রিয় জীবনমুখী শিল্পী কবির সুমন। কিন্তু এ ধরনের কোনো শোকসভা পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভায় কখনো হয়নি। বাংলাদেশের আইনসভা, অর্থাৎ জাতীয় সংসদেও এমনটি কখনো হবে এমন প্রত্যাশা কারও নেই। গাছ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব, তাই আমরা এই শোকসভা করেছি।’
কুবরাজ আন্তপুঞ্জি উন্নয়ন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ফ্লোরা বাবলি তালাং বলেন, ‘আগার পান পুঞ্জিতে ৪৮টি পরিবারের বাস। তাদের জীবিকার একমাত্র উৎস পান চাষ ও বিক্রি। অথচ যেখানে পান ফলে সেই গাছ বিনা নোটিশে আইনের তোয়াক্কা না করে ছোটলেখা চা বাগান কর্তৃপক্ষ কেটে ফেলছে। তাদের এমন অন্যায় কর্মকাণ্ডের নাগরিক প্রতিবাদ প্রয়োজন।’
বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির ভূমি ও আইন বিষয়ক সম্পাদক উজ্জ্বল আজিম বলেন, ‘বাংলাদেশের বন ও পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রীর বাড়ি বড়লেখাতে। সেই এলাকাতে গাছ হত্যার ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক। যদিও সিলেট বিভাগের অনেক চা বাগানে দেদারসে গাছকাটা হচ্ছে। পাশাপাশি সাবাড় করা হচ্ছে বনজ সম্পদ। বনে বা চা বাগানে গাছ কাটার খবর অধিকাংশ ক্ষেত্রে গোপন থাকে।’
ছোটলেখা চা বাগানের ব্যবস্থাপক শাকিল আলম বলেন, ‘পুঞ্জির জমি বহু আগে পুঞ্জির কাছে বর্গা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কিছু কাঠের প্রয়োজন ছিল। তাই গাছ কাটানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল।’
বড়লেখার ইউএনও মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘আমরা অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।’
পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মন, বৃহত্তর খাসি সোসাইটি কাউন্সিলের মহাসচিব
শোকসভায় পাত্র সম্প্রদায় কল্যাণ পরিষদের সভাপতি গৌরাঙ্গ পাত্র, বৃহত্তর সিলেট ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি জনক দেববর্মন, বৃহত্তর খাসি সোসাইটি কাউন্সিলের মহাসচিব ফিলা পতমী, খাসি সোশ্যাল কাউন্সিলের সহসভাপতি জনক দেববর্মা, আদিবাসী উন্নয়ন সংস্থা হবিগঞ্জের সভাপতি স্বপন কুমার সাঁওতাল, খাসি পেনরয় সমাজ কল্যাণ সমিতি গোয়াইনঘাটের সভাপতি ওয়েলকাম লম্বা, বৃহত্তর সিলেট আদিবাসী ফোরামের সদস্য সাজু মারচিয়াং, বৃহত্তর ত্রিপুরা উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সুমন দেববর্মা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর তরুণ প্রতিনিধিদের মধ্যে খাসিয়া থেকে লিসডামন খংজং, গারো থেকে পুর্নিকা স্নাল, হাজং থেকে শিবানন্দ হাজং, বানাই থেকে ধুবুরাজ বানাই, পাত্র জনগোষ্ঠীর সুমেলা পাত্র, চা জনগোষ্ঠী থেকে সোহাগ ছত্রী, মঞ্জু কুর্মী, দীপা গড়াইত ও আকাশী খাড়িয়া বক্তব্য রাখেন।
Comments