জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা

দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার অভিযোগে তৎকালীন ইউএনও’র বিরুদ্ধে তদন্ত

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পাটগ্রামের তৎকালীন ইউএনও কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।
বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে তদন্ত কার্যক্রম চলছে। ছবি: দিলীপ রায়

লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে পবিত্র কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে মো. শহিদুন্নবী জুয়েল (৫০) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পাটগ্রামের তৎকালীন ইউএনও কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।

কামরুন নাহারের বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগ ওঠায় জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে এই তদন্ত করছে জেলা প্রশাসন।

আজ বৃহস্পতিবার দুপুর ১১টা থেকে বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে এ তদন্ত কার্যক্রম শুরু হয় এবং এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা চলছিল।

এর আগে, গত ২১ মার্চ জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সংশ্লিষ্ট ১৩ জনকে তদন্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে সহযোগিতার অনুরোধ জানানো হয়।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফরের নেতৃত্বে চলমান তদন্তে আরও উপস্থিত আছেন- পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাম কৃষ্ণ বর্মণ ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) সোহেল রানা।

তদন্ত শেষে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।

তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের প্রশাসনিক তদন্ত। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ১৩ জনের সাক্ষ্য রেকর্ড করে আমরা তদন্ত প্রতিবেদন প্রস্তুত করব। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।’

পাটগ্রাম উপজেলার তৎকালীন ইউএনও কামরুন নাহার ২০২০ সালের ১৬ আগস্ট পাটগ্রামে যোগদান করেন এবং চলতি বছর ১৬ মার্চ তিনি বদলি হয়ে সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের সচিব হিসেবে যোগ দিয়েছেন।

গত বছরের ২৯ অক্টোবর সন্ধ্যায় লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজারে কোরআন অবমাননার গুজব ছড়িয়ে আবু ইউসুফ মো. শহিদুন্নবী জুয়েলকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আবু ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুরে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বুড়িমারী এলাকার ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, সেদিন ঘটনাস্থলে তৎকালীন পাটগ্রাম ইউএনও কামরুন নাহার উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু, তাৎক্ষণিক কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অবহেলার অভিযোগ ওঠে। সেদিন তিনি তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিলে এবং সাহসী ভূমিকা রাখলে হত্যাকাণ্ডটি নাও ঘটতে পারত।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লালমনিরহাট ডিবি পুলিশের অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) ওমর ফারুক জানান, জুয়েলকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় পাটগ্রাম থানায় হত্যাসহ পৃথক ৩টি মামলা হয়। এখন পর্যন্ত এসব মামলায় মোট ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং তারা জেল-হাজতে আছেন।

ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে খুব শিগগির এসব মামলার চার্জশিট আদালতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন:

লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা: গ্রেপ্তার আরও ৬

জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা, গ্রেপ্তার আরও ৫

জুয়েল হত্যা: গ্রেপ্তার ৫ আসামির রিমান্ড আবেদন শুনানি আজ

জুয়েলের মরদেহের অপেক্ষায় শোকার্ত পরিবার

কোরআন অবমাননার প্রমাণ পায়নি মানবাধিকার কমিশনের তদন্ত কমিটি

জুয়েলকে হত্যার ঘটনা তদন্তে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন

জুয়েলকে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় ৩ মামলা, গ্রেপ্তার ৫

লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনা তদন্তে কমিটি

Comments

The Daily Star  | English

Traffic police move against battery-run rickshaws on major roads

The move has brought some relief to commuters, as the high-speed rickshaws have been causing accidents.

29m ago