রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে বিস্ফোরণ, নিহত ১৭

বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে বিস্ফোরণ। ছবি: সংগৃহীত

রাজশাহীতে বাস-মাইক্রোবাস সংঘর্ষে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনায় ১৭ জন নিহত হয়েছেন। আজ শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রাজশাহীর কাটাখালী থানার মোড়ে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

বিষয়টি দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি।

তিনি জানিয়েছেন, দুপুর দেড়টার দিকে রাজশাহী-ঢাকা মহাসড়কের কাটাখালি থানার সামনে ওই দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ১৭ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে ১১ জন জীবন্ত দগ্ধ হন। তাদের মধ্যে চার শিশু এবং চার পরিবারের পাঁচ জন নারী আছেন।

প্রত্যক্ষদর্শী তাসলিমা খাতুন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘নারী, পুরুষ এবং শিশুরা আমার চোখের সামনে জীবিত পুড়ছিল। আমি এ কথা মনে করলেই আতঙ্কিত হয়ে যাচ্ছি। কী এক ভয়ঙ্কর দৃশ্য আমাকে দেখতে হলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম রাস্তায় হয়তো বোমা বিস্ফোরণ হয়েছে। কিন্তু, এটা ছিল একটি বাস ও মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষ। আমি দেখলাম একজন পুরুষ মাইক্রোবাসের কাছে রাস্তায় পড়ে আছে। এক নারী মাইক্রোবাসের জানালা থেকে বাইরে ঝুলে আছে, জানালার সঙ্গে তার দুই পা আটকে ছিল। গাড়ির সামনের অংশের বাম পাশে আগুন লেগেছে।’

তাসলিমা মোবাইলে ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে বাড়ির ভিতরে যান এবং কিছু সময় পরে ফিরে আসেন।

তিনি বলেন, ‘আমি দেখলাম জানালা থেকে ঝুলে থাকা নারীর পা আগুনে জ্বলছে। আস্তে আস্তে ওই মহিলা জীবন্ত পুড়ে গেল। চিৎকার করতে করতে সে একসময় থেমে গেল। তারপরে মাইক্রোবাসের কাছে পড়ে থাকা পুরুষের গায়েও আগুন ধরে গিয়েছিল। একটি শিশুকে বাঁচাতে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। সেই শিশুটিও পুড়ে গেছে, কিন্তু তখনো শিশুটি বেঁচে ছিল। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়। একজন মহিলা বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য আমার দিকে ইঙ্গিত করছিলেন।’

‘আধা ঘণ্টার মধ্যে পুরো মাইক্রোবাসটি পুড়ে যায় এবং সঙ্গে পুড়ে যায় এর ভিতরে থাকা সব মানুষ। তারপরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একটি লেগুনাতেও আগুন লেগেছিল,’ যোগ করেন তিনি।

তাসলিমা বলেন, ‘ফায়ার সার্ভিস যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছে তখন বাঁচানোর মতো আর কিছুই ছিল না।’

বিভূতিভূষণ ব্যানার্জি বলেন, ‘দুটি গাড়িই বেপরোয়া গতিতে চলছিল। দুর্ঘটনার কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায় এবং সেখানে কিছুই করার মতো ছিল না। আগুন খুব দ্রুততার সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ছিল। তারা সুরক্ষার জন্য কাউকে জ্বলন্ত গাড়ির কাছে যেতে দেয়নি।’

রাজশাহী ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘দুটি গাড়ির সংঘর্ষ ঘর্ষণের ফলে আগুন ধরেছিল এবং মাইক্রোবাসের গ্যাস লিক করে আগুন ছড়িয়ে যায়। গ্যাস সিলিন্ডারটি অক্ষত অবস্থায় দেখা গেছে।’

তিনি জানান, তারা গাড়ি থেকে দুই শিশু ও চার নারীসহ কমপক্ষে ১১টি দগ্ধ মরদেহ উদ্ধার করেছেন। দগ্ধ গাড়ির কাছ থেকে আট জনকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে তিন জনকে আংশিকভাবে পোড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে। আট জনের মধ্যে ছয়জন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর মধ্যে দুই শিশু ও এক নারী আছে। দু’জন আহত চিকিৎসাধীন।

ঘটনাস্থলে ছুটে আসা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্জেন্ট নুর মোহাম্মদ জানান, নিহতদের মধ্যে তার পরিবারের পাঁচ জন আছেন। এরা হলেন- তার বোন নাজমা খাতুন (২৮), নাজমার স্বামী ফুল মিয়া (৩৫), তাদের ছেলে ফয়সাল আহমেদ (১৩), দুই মেয়ে- সামিহা (৮) এবং সুমাইয়া (৪)।

তিনি জানান, মাইক্রোবাসে মোট ১৪ জন ছিলেন।

গাড়ি চালক বাদে রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে মাইক্রোবাসে চড়েছিলেন চার পরিবারের ১৩ সদস্য। তারা রাজশাহী যাচ্ছিলেন পর্যটন স্থানগুলো জায়গাগুলো ঘুরে দেখতে।

নুর মোহাম্মদ বলেন, ‘আমি তাদের মধ্যাহ্নভোজনের জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলাম, কিন্তু তাদের কেউই বেঁচে নেই। আমি এখনো মরদেহ দেখিনি। তারা (পুলিশ) বলছে যে দেখার মতো কিছুই নেই।’

পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা সবাই মাইক্রোবাসের যাত্রী।

Comments

The Daily Star  | English

JP central office vandalised, set ablaze

A group of unidentified people set fire to the central office of Jatiyo Party in Dhaka's Kakrail area this evening

1h ago