বাড়ছে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের চাহিদা
রাজধানীর উত্তরার ১০ নম্বর সেক্টরে এক হাজার ৫২৫ বর্গফুটের একটি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট ৮৩ লাখ টাকায় কিনেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত জুনেদ আহমেদ। এই সাইজের একটি নতুন ফ্ল্যাট কিনতে গেলে তাকে খরচ করতে হতো কমপক্ষে এক কোটি ২০ লাখ টাকা। যা তার পক্ষে জোগাড় করা খুবই কঠিন।
তবে জুনেদ আহমেদ বেশ আনন্দিত।
তিনি বলেন, ‘ফ্ল্যাটটি প্রায় নতুন এবং কোনো ঝামেলা ছাড়াই হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে।’
তার মতোই একটি ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনেছেন অওরি এহসান চৌধুরী। মোহাম্মদপুরে বেশ কম দামে একটি ফ্ল্যাট কিনলেও তিনি তার দাম প্রকাশ করতে চাননি।
আবাসন ব্যবসায়ী ও হোম লোন দাতাদের মতে, জুনেদ আহমেদ ও এহসান চৌধুরীর ঘটনা রাজধানীতে ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের ক্রমবর্ধমান চাহিদার চিত্র। এসব ফ্ল্যাটের চাহিদা বেশি থাকার কারণ, এগুলোর দাম নতুনের তুলনায় অনেক কম হয় এবং ইউটিলিটি সেবা, বিশেষ করে গ্যাস সংযোগ থাকে।
ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের বাজারের আকার কতো সে বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে, এ ধরনের ফ্ল্যাটের চাহিদা ফ্ল্যাটের মোট চাহিদার প্রায় ২০ শতাংশ।
নতুন ও ব্যবহৃত ফ্ল্যাট বিক্রেতা বিল্ডিং টেকনোলজি অ্যান্ড আইডিয়াসের (বিটিআই) ব্যবস্থাপনা পরিচালক এফআর খান বলেন, ‘ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের চাহিদা বাড়ছে।’
এর পেছনে দুটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, কম দামে পাওয়া যায় এবং দ্বিতীয়ত, রুমগুলো বড় হয়।
নতুন বিধি অনুসারে, দুই হাজার বর্গফুটের ফ্ল্যাট কিনলে তার মধ্যে ৪০০ বর্গফুট ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ক্রেতা। কিন্তু, এর দাম পরিশোধ করতে হচ্ছে। তবে, ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনলে ক্রেতা পুরো জায়গাই ব্যবহার করতে পারছেন এবং এতে রুমের আকার বড় পাচ্ছেন।
এফআর খান বলেন, ‘আমরা যদি মাসে ৩০টি ফ্ল্যাট বিক্রি করি তাহলে তার মধ্যে পাঁচটিই ব্যবহৃত ফ্ল্যাট।’
তিনি জানান, কিছুক্ষেত্রে ক্রেতাদের সংস্কার করতে হলেও অনেকে দারুণ পরিপাটি অবস্থাতেও ফ্ল্যাট পান।
বিপ্রপার্টির সাম্প্রতিক মূল্যায়ন অনুসারে, ‘ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের উচ্চ চাহিদা সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে।’
গত ১৪ মাসের চাহিদা বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ঢাকায় যারা ফ্ল্যাট কিনতে চাইছেন তাদের মধ্যে ৭৬ শতাংশ ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের খোঁজ নিচ্ছেন।
ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের ক্ষেত্রে উল্লেখ যোগ্য অংশের ক্রেতারা এই প্রতিষ্ঠানের কাছে খোঁজ করেছে মিরপুর, উত্তরা, ধানমন্ডি ও বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বাড়ি।
বিপ্রপার্টির বিপণন প্রধান মাহ্জাবিন চৌধুরী বলেন, ব্যবহৃত সম্পত্তির চাহিদা অনেক বেশি।
মোহাম্মদপুর, বাড্ডা, বনশ্রীতে সম্পত্তি কিনতে অনেক বেশি মানুষ আগ্রহ প্রকাশ করছেন।
চাহিদার তুলনায় ব্যবহৃত সম্পত্তি পর্যাপ্ত না থাকলেও মিরপুর, উত্তরা ও মোহাম্মদপুর এলাকায় প্রচুর পরিমাণে তৈরি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানিয়েছে বিপ্রপার্টি।
মাহ্জাবিন চৌধুরী বলেন, মিরপুর, বাড্ডা বা দক্ষিণ খানে ফ্ল্যাট খোঁজার অন্যতম কারণ তাদের ক্রয় ক্ষমতা।
তিনি আরও বলেন, ‘এমনকি উত্তরার কিছু অংশেও সাশ্রয়ী মূল্যে ফ্ল্যাট পাওয়া যেতে পারে।’
তিনি জানান, গত ছয় মাসে মিরপুরে তৈরি ফ্ল্যাটের দাম বর্গফুট প্রতি চার হাজার ৯২১ টাকা ছিল। তবে, পীরেরবাগ ও ১১ নম্বর সেক্টরে প্রতি বর্গফুট দাম ছিল তিন হাজার ১০০ টাকা।
উত্তরায় গত ছয় মাসে তৈরি ফ্ল্যাটের গড় দাম ছিল প্রতি বর্গফুট ছয় হাজার তিন টাকা।
ধানমন্ডিতে তৈরি ফ্ল্যাটের দাম অনেক বেশি। সম্প্রতি যুক্ত হওয়া ফ্ল্যাটগুলোর গড় মূল্য প্রতি বর্গফুট প্রায় ১০ হাজার টাকা। পশ্চিম ধানমন্ডি ও শংকর এলাকায় এই মূল্য সাড়ে ছয় হাজার টাকা।
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের মর্গেজ বিভাগের প্রধান সিরাজুস সালেকিন বলেন, নতুন ফ্ল্যাটগুলোর তুলনায় ব্যবহৃত ফ্ল্যাটগুলো কম দামে পাওয়া যায়।
ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কিনতে ঋণের চাহিদা বাড়ছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘গ্যাস সংযোগসহ ব্যবহৃত ফ্ল্যাট কেনার চেষ্টা করছে মানুষ। কারণ নতুন ফ্ল্যাটে গ্যাস সংযোগ পাবে কিনা তার কোনো নিশ্চয়তা নেই।’
আইপিডিসি ফাইন্যান্সের ঋণের চাহিদার মূল্যায়ন অনুসারে, এলাকা ভেদে এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৫০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাটের দাম ৬০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত।
রিয়েল স্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট কামাল মাহমুদ বলেন, ব্যবহৃত ফ্ল্যাটের চাহিদা ভালো থাকলেও এগুলো পাওয়া যায় কম।
আবাসন খাতে সহায়তা করতে ব্যবহৃত ফ্লাট রেজিস্ট্রেশন খরচ কমাতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে রিহ্যাব আবেদন করেছে বলে যোগ করেন তিনি।
Comments