হেফাজতের তাণ্ডব শক্ত হাতে মোকাবিলার আহ্বান

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে হেফাজতের তাণ্ডব শক্ত হাতে মোকাবিলার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ১১ স্বনামধন্য শিক্ষক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব।
গতকাল সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে তারা এই আহ্বান জানিয়েছেন।
বিবৃতিতে তারা বলেছেন, ‘মুজিব শতবর্ষে ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে মুক্তিযুদ্ধ-স্বাধীনতা ও বাংলাদেশবিরোধী হেফাজতে ইসলাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামের হাটহাজারীসহ দেশের নানা স্থানে যে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়েছে তা কেবল ১৯৭১ সালের পাকিস্তানি সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদরদের ঘৃণ্য ও নৃশংস কর্মকাণ্ডের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়।’
এতে আরও বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী অনুষ্ঠানে সরাসরি উপস্থিত হয়ে অথবা ভারচুয়ালি উপস্থিত থেকে সারা বিশ্বের রাষ্ট্রনায়করা যখন বাংলাদেশের সার্বিক অগ্রগতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুসরণীয় নেতৃত্বের প্রশংসায় পঞ্চমুখ তখন স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চক্র আমাদের অর্জিত গৌরবকে ধূলিসাৎ করার নীলনকশা বাস্তবায়নে তৎপর।’
‘হেফাজত ও অন্যান্য স্বাধীনতাবিরোধী চক্র ২৬ মার্চ ২০২১ হাটহাজারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ দেশের বিভিন্নস্থানে সরকারি অফিস, স্থাপনা, যানবাহনে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাস্তাঘাট ও রেললাইনের ক্ষতিসাধন করে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এমনকি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল ও প্রতিকৃতি ধ্বংস করার ধৃষ্টতা দেখায়। মূলত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে হেফাজত এই ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটায়।’
‘আমরা পরিষ্কার বলতে চাই যে— ভারত ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের প্রধান বন্ধু ও সহায়তাকারী দেশ। ভারত সরকার ও জনগণ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সার্বিক সহযোগিতা, এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয়, খাদ্য ও চিকিৎসা দিয়ে মানবতার যে ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে আমরা স্মরণ করি।’
‘ভারতীয় সেনাবাহিনী আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ও অস্ত্র সরবরাহ করে আমাদের যুদ্ধকে সর্বোতভাবে সহযোগিতা করে। শুধু তাই নয় যুদ্ধের অন্তিম সময়ে ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশ নেয়। যা আমাদের বিজয় ও পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অস্ত্রসমর্পণ ত্বরান্বিত করে।’
‘ভারতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার সেনার রক্তদান দুই দেশের মৈত্রীর সার্থক উদাহরণ তৈরি করেছে। যা বিশ্বের সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল ঘটনা। আমরা স্বাধীনতাযুদ্ধে ভারতের এই ভূমিকার জন্য কৃতজ্ঞ। স্বাধীনতার পর দ্রুততম সময়ে ভারতীয় সেনা-প্রত্যাহার এবং সরকার ও দেশবাসী মিলে বিদায়-সংবর্ধনা ইতিহাসের অনন্য উদাহরণ।’
‘আর তাই স্বাভাবিকভাবে ভারতসহ অন্যান্য বন্ধু রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সরকার আমন্ত্রণ জানায়। বন্ধুরাষ্ট্র ভারতের সঙ্গে আমাদের অভিন্ন নদী ও সীমান্ত হত্যা ইস্যু রয়েছে। যা যথাযথ দ্বিপাক্ষিক ফোরামে আলোচনার দাবি রাখে এবং ভারতের সঙ্গে আলোচনা চলছে। আলোচনার মাধ্যমে অমীমাংসিত সমস্যার দ্রুত সমাধান আমরাও চাই।’
‘কিন্তু আমন্ত্রিত ভারতের প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশে অবস্থানকালে দুই দেশের অমীমাংসিত ইস্যুগুলোকে সামনে নিয়ে এসে সাম্প্রদায়িক এই অপশক্তি পাকিস্তানি কায়দায় ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালিয়ে অতিথি অপমানের যে রুচিহীনতার প্রকাশ ঘটিয়েছে তা বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে হেয় করেছে।’
‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে একাত্তরের বন্ধুদেশ ভারতের প্রধানমন্ত্রীর প্রতীকী সফরকে কেন্দ্র করে যেভাবে দেশের সম্পদ ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে তা মুক্তিযুদ্ধের পথ থেকে দেশকে আবার পাকিস্তানি পথে নেওয়ার গভীর ষড়যন্ত্র মেলে ধরেছে। হেফাজতি ষড়যন্ত্রকারীদের সঙ্গে আপস করে যে তাদের উগ্র ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড উস্কে দেওয়া হয়েছে সেটা আজ পরিষ্কার।’
‘আমরা এই সাম্প্রদায়িক শক্তির বিরুদ্ধে সরকারের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ দেখতে চাই। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তাদের ঘোষিত যুদ্ধের মোকাবিলায় সরকারের সর্বশক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে এদের নিয়ন্ত্রণের আহ্বান জানাই।’
‘বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান মসজিদ ও মাদ্রাসাকে কেন্দ্র করে এই সাম্প্রদায়িক হেফাজত-জামাত অপশক্তি দেশের স্বাধীনতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যে তৎপরতা চালাচ্ছে তা প্রত্যাখ্যান ও প্রতিরোধ করুন।’
‘ইসলাম শান্তির ধর্ম। তাই ইসলামের পবিত্র স্থাপনাসমূহকে ব্যবহার করে গণবিরোধী এ তৎপরতা সমাজ ও রাষ্ট্রকে অস্থিতিশীল করবে। এটা কোনভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।’
‘আসুন দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের গৌরব অক্ষুন্ন রাখতে আমরা সম্মিলিতভাবে হেফাজত-জামাতকে প্রতিহত করি।’
বিবৃতিতে সই করেছেন আবদুল গাফফার চৌধুরী, হাসান আজিজুল হক, অনুপম সেন, সারওয়ার আলী, রামেন্দু মজুমদার, আবেদ খান, আবদুস সেলিম, মফিদুল হক, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, শাহরিয়ার কবীর ও মুনতাসীর মামুন।
Comments