পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার দ্বিতীয় দফা নির্বাচন

শীর্ষ নেতাদের লড়াই এবং বিতর্কিত প্রার্থী

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামীকাল ১ এপ্রিল। দ্বিতীয় ধাপে যে ৩০টি আসনে নির্বাচন হবে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় থাকবে নন্দীগ্রাম। কারণ, নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে তার বিরুদ্ধে আছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু এখন বিজেপির উদীয়মান নেতা।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং শুভেন্দু অধিকারী। ছবি: সংগৃহীত

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট গ্রহণ করা হবে আগামীকাল ১ এপ্রিল। দ্বিতীয় ধাপে যে ৩০টি আসনে নির্বাচন হবে তার মধ্যে সবচেয়ে আলোচনায় থাকবে নন্দীগ্রাম। কারণ, নন্দীগ্রাম থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে তার বিরুদ্ধে আছেন তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারী। শুভেন্দু এখন বিজেপির উদীয়মান নেতা।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল দ্বিতীয় দফায় ৩০টি আসনের মধ্যে ২১টিতে জয়লাভ করেছিল। তবে, এবার তৃণমূলকে আগের চেয়ে শক্তিশালী বিজেপির বিরুদ্ধে লড়তে হবে। তাই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এসব আসন ধরে রাখা তৃণমূলের জন্য কঠিন হতে পারে। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিজেপি ৩০টি আসনের মধ্যে একটি আসন পেয়েছিল এবং ভোট পেয়েছিল মোট ভোটের মাত্র সাত শতাংশ। তবে, ২০১১ সালের নির্বাচনের তুলনায় ২০১৬-তে প্রায় দ্বিগুণ ভোট পেয়েছিল বিজেপি। অর্থাৎ বিজেপির ভোট কমেনি বরং বেড়েছিল। অন্যদিকে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বামেরা পাঁচটি এবং কংগ্রেস তিনটি আসন পেয়েছিল।

নন্দীগ্রাম

দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে সবার নজর থাকবে নন্দীগ্রামের দিকে। এই আসনটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলার তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অংশ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই আসনে থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে নন্দীগ্রাম বিধানসভা নির্বাচনে সবচেয়ে হাই-প্রোফাইল আসনে পরিণত হয়েছে। কারণ, তৃণমূল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীর এই অঞ্চলে যথেষ্ট প্রভাব আছে। এছাড়াও, এই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সিপিআইএম-এর মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়।

২০১৬ সালে শুভেন্দু ৬৭ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে এই আসনে জয়লাভ করেছিলেন। ওই নির্বাচনে বামেরা প্রায় ২৭ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, অন্যদিকে বিজেপি ছিল তৃতীয় স্থানে এবং তারা পাঁচ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়েছিল। তবে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পরিস্থিতি নাটকীয়ভাবে পরিবর্তিত হয়। তখন বিজেপি তমলুকে ৩৭ শতাংশ ভোট পেয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে চলে আসে। ওই নির্বাচনে শুভেন্দুর ভাই দিব্যেন্দু ৫০ শতাংশের সামান্য বেশি ভোট পেয়ে তৃণমূলের হয়ে লোকসভা আসনে জয়ী হন। লোকসভা নির্বাচনে বামেরা পেয়েছিল মাত্র নয় শতাংশ ভোট।

শুভেন্দু ও দিব্যেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারী একই জেলার কাঁথি থেকে নির্বাচিত বর্তমান সংসদ সদস্য। তিনি বিজেপির সঙ্গে আছেন।

হলদিয়া

হলদিয়া বিধানসভা আসনটি পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় অবস্থিত এবং তমলুক লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। সিপিআইএম-এর তাপসী মণ্ডল ২০১৬ সালে ৫০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়ে এই আসনে জয়লাভ করেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের মধুরিমা মণ্ডলকে ২১ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। এখানে বিজেপির প্রদীপ কুমার বিজালি মাত্র ১৩ হাজার ভোট পেয়েছিলেন এবং তৃতীয় অবস্থানে ছিলেন। তবে, গত বছরের শেষের দিকে তাপসী মণ্ডল বিজেপিতে যোগ দেন এবং এবার তিনি পদ্ম প্রতীকে হলদিয়া থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এখানে এবার তৃণমূল স্বপন নস্কর এবং সিপিআইএম মণিকা কর পাইককে প্রার্থী করেছে।

তমলুক

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে এখানে প্রাক্তন ক্রিকেটার অশোক দিন্দা কমিউনিস্ট পার্টি ইন্ডিয়ার (সিপিআই) টিকিটে জয়ী হন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বেদ রায়কে পরাজিত করেছিলেন। এবার সিপিআই গৌতম পাণ্ডেকে তৃণমূল কংগ্রেসের সৌমেন কুমার মহাপাত্রের বিরুদ্ধে প্রার্থী করেছে। এছাড়া, বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন হরে কৃষ্ণ বেরা। অশোক দিন্দা এবার একই জেলার ময়না থেকে বিজেপির টিকিটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাঁকুড়া

বাঁকুড়ায় এবার বিজেপির নীলাদ্রি শেখর দানা এবং কংগ্রেসের রাধারানি বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সায়ন্তিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের দরিপা শম্পা ৪২.৪৫ শতাংশ ভোট পেয়ে এখানে বিজয়ী হয়েছিলেন। তবে, ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে এই আসনে বিজেপি জিতেছিল বলে এখানে কঠিন লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে হচ্ছে তৃণমূলকে।

খড়গপুর সদর

এই আসনটি মেদিনীপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এবং বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এখানের প্রতিনিধিত্ব করেন। এখানের বর্তমান বিধায়ক তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদীপ সরকার। ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর বিজেপির দিলীপ ঘোষ আসনটি শূন্য ঘোষণা করলে একই বছরের নভেম্বরের উপনির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রদীপ সরকার বিজয়ী হন। এবার খড়গপুর সদরে বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন চিত্রনায়ক হিরণ।

জটিল আসন

তমলুক, বড়জোড়া, বিষ্ণুপুর, বাঁকুড়া, পাঁশকুড়া পশ্চিম এবং পাঁশকুড়া পূর্ব এই দফার নির্বাচনে সবচেয়ে জটিল আসন হতে পারে। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে এখানে জয়ের ব্যবধান খুবই কম ছিল।

২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচেন তমলুক ও বড়জোড়ায় জয়ের ব্যবধান ছিল একহাজার বা তারও কম। সিপিআই-এর অশোক দিন্দা তৃণমূল কংগ্রেসের নির্বেদ রায়কে মাত্র ৫২০ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেছিলেন। বড়জোড়ায় সিপিআইএম-এর সুজিত চক্রবর্তী ৬১৬ ভোটে পরাজিত করেছিলেন তৃণমূলের তারকা প্রার্থী সোহম চক্রবর্তীকে।

বিতর্কিত ও কোটিপতি প্রার্থী

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডের তথ্য অনুযায়ী, এই ধাপের নির্বাচনে প্রতি চার জন প্রার্থীর মধ্যে একজনের অপরাধের রেকর্ড আছে। অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মসের (এডিআর) তথ্য অনুসারে, প্রার্থীদের হলফনামা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রায় ২৫ শতাংশ প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে।

৩০টি বিধানসভা আসনের- প্রতি ছয়জনের মধ্যে তিন এবং ততোধিক প্রার্থীর বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা আছে। পাঁশকুড়া পশ্চিম আসনে চার জন বিতর্কিত প্রার্থী আছেন। এরপর গোসাবা, নন্দীগ্রাম ও নারায়ণগড়ে তিন জন বিতর্কিত প্রার্থী আছেন।

দ্বিতীয় দফায় ১৭১ জন প্রার্থীর এডিআর বিশ্লেষণ অনুযায়ী- ৪৩ জনের ফৌজদারি মামলা বিচারাধীন। এদের মধ্যে ১৭ জন বিজেপির, তৃণমূল কংগ্রেসের আট জন, সিপিআইএম-এর সাতজন, এসইউসিআইসি থেকে তিনজন, কংগ্রেস ও বিএসপি থেকে দুজন এবং একজন সিপিআই থেকে। প্রায় ৩৬ জন প্রার্থীর (২১ শতাংশ) বিরুদ্ধে গুরুতর ফৌজদারি মামলা আছে।

ইন্ডিয়া টুডে জানায়, গুরুতর ফৌজদারি মামলা জামিন অযোগ্য অপরাধ এবং এজন্য পাঁচ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।

এডিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মোট ২৬ জন (১৫ শতাংশ) প্রার্থী কোটিপতি। অন্যদিকে চার প্রার্থী শূন্য সম্পত্তির কথা উল্লেখ করেছেন। তৃণমূল কংগ্রেসের আছে ১১ কোটিপতি প্রার্থী (৩৭ শতাংশ) এবং বিজেপির কোটিপতি প্রার্থী ১০ জন (৩৩ শতাংশ)।

২৯৪ আসনের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা নির্বাচন হবে আট দফায়। গত ২৭ মার্চ প্রথম দফার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামীকাল ১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফার নির্বাচন। শেষ দফার নির্বাচন হবে আগামী ২৯ এপ্রিল। নির্বাচন শেষে ভোট গণনা হবে আগামী ২ মে।

Comments

The Daily Star  | English

Sea-level rise in Bangladesh: Faster than global average

Bangladesh is experiencing a faster sea-level rise than the global average of 3.42mm a year, which will impact food production and livelihoods even more than previously thought, government studies have found.

8h ago