মুক্তিযুদ্ধ

মানবসেবার এক মহান পথিকৃৎ অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ

তার নাম বললেই প্রথমে চোখে ভাসে একটি ছবি, তা হলো সাধনা ঔষধালয়। উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী চিকিৎসার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান।
jogesh_chandra_ghosh
অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ। ছবি: সংগৃহীত

তার নাম বললেই প্রথমে চোখে ভাসে একটি ছবি, তা হলো সাধনা ঔষধালয়। উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী চিকিৎসার অন্যতম পথিকৃৎ তিনি ও তার প্রতিষ্ঠান।

নিজের জীবনের ছয় দশকে তিলতিল করে তিনি গড়ে তুলেছেন এই প্রতিষ্ঠান, যা ছিল মানবকল্যাণে এক বিশাল কর্মক্ষেত্র। টাকার মোহ তাকে আদর্শ-একাগ্রতা থেকে বিন্দুমাত্র টলাতে পারেনি। তার দরজায় গিয়ে কোনো অসহায় মানুষ দাঁড়িয়েছেন আর খালি হাতে ফিরে এসেছেন— এমন সাক্ষ্য কেউ দিতে পারবেন না।

আর্ত-দুস্থ মানুষের শেষ আশ্রয় ছিলেন তিনি। এমনও হয়েছে যে কোনো গরিব মানুষ মামলায় লড়তে পারছেন না, কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা পণের জন্য বিয়ে দিতে পারছেন না, কেউ ঋণগ্রস্ত, কেউ অভাবে পড়ে ভিটেমাটি হারিয়েছেন— তিনিই যেন তাদের শেষ আস্থার স্থান। অকাতরে ব্যবস্থা করে দিতেন তিনি। তার দুই হাত যেন ছিল কেবলই বিলিয়ে দেওয়ার।

Sadhana
ছবি: সংগৃহীত

বাংলা তো বটেই উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী ওষুধশিল্পের মহান পথিকৃৎ সাধনা ঔষধালয়ের কর্ণধার যোগেশচন্দ্র ঘোষ। তার হাত ধরেই এদেশে আয়ুর্বেদী চিকিৎসা পৌঁছেছিল নতুন উচ্চতায়।

যোগেশচন্দ্র ঘোষের জন্ম তৎকালীন ফরিদপুর জেলার মাদারীপুর মহকুমার গোঁসাইরহাটের জলছত্র গ্রামে (বর্তমানে শরীয়তপুর জেলা) ১৮৮৭ সালের কোনো এক দিনে। জলছত্র গ্রামের এক স্কুলে তার শিক্ষাজীবন শুরু হয়।

ছোটবেলা থেকেই বেশ মেধাবী ছিলেন তিনি। যে পড়া ছেলেরা দিনভর পড়েও মনে রাখতে পারত না, তিনি একবার পড়েই তা বলে দিতে পারতেন। তিনি শিক্ষকদের কাছে প্রশ্ন রাখতেন অনেক কৌতূহল নিয়ে। যা অন্য ছাত্রদের ধাতেই ছিল না।

গ্রামের প্রত্যন্ত স্কুলে নানা সীমাবদ্ধতা, নানা প্রতিকূলতা থাকায় একসময় শিক্ষকেরা তার বাবাকে পরামর্শ দেন শহরের ভালো কোনো স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেওয়ার। পড়াশোনার প্রতি ছেলের ভীষণ আগ্রহ আর উৎসাহী ও অনুসন্ধিৎসু মন দেখে বাবা তাকে পাঠিয়ে দিলেন ঢাকায়। তখন ঢাকাই ছিল পূর্ব বাংলার প্রধান শহর।

১৯০২ সালে কেএল জুবিলী স্কুল থেকে প্রথম বিভাগে এন্ট্রান্স (ম্যাট্রিক) ও জগন্নাথ কলেজ থেকে এফএ পাশ করার পর যোগেশচন্দ্র ঘোষ চলে যান কুচবিহারে।

কুচবিহার কলেজ থেকে ১৯০৬ সালে রসায়নে বিএ পাশ করার পর সে বিষয়ে এমএ পড়তে তিনি ভর্তি হন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখানে তিনি অধ্যাপক হিসেবে পান স্যার পিসি রায় বা আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়কে। এই মনীষীর সংস্পর্শে এসে যেন তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। জীবনকে নতুন করে উপলব্ধি করতে শেখেন যোগেশচন্দ্র ঘোষ। মানবতা, পরমতসহিষ্ণুতা, স্বদেশ প্রেম, কর্মনিষ্ঠা আর মানবসেবা যে মানুষকে কেমন করে সমুদ্রের মতো বিস্তৃত করতে পারে তা দেখেন তিনি।

আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ই তাকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি তাকে উৎসাহিত করেন দেশজ সম্পদ ব্যবহারের। তিনি তাকে হাতে-কলমে শিখিয়ে দেন কী করে নিজের অর্জিত জ্ঞান দিয়ে সমৃদ্ধ করা যায় দেশের শিল্পক্ষেত্রকে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯০৮ সালে রসায়নে এমএ পাশ করার পর সেবছরই যোগেশচন্দ্রের চাকরি হয় পশ্চিমবঙ্গের ভাগলপুর কলেজে।

একটানা চার বছর সে কলেজে শিক্ষকতার পর ১৯১২ সালে ঢাকায় এসে তিনি জগন্নাথ কলেজের রসায়ন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। এর দুই বছর পর তথা ১৯১৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘সাধনা ঔষধালয়’। এটি ছিল তৎকালীন পূর্ববঙ্গে (বাংলাদেশ) আয়ুর্বেদী ওষুধ তৈরির প্রথম কারখানা।

ভাগলপুর কলেজে শিক্ষকতা চলাকালে যোগেশচন্দ্র ঘোষ লন্ডন কেমিক্যাল সোসাইটি ও আমেরিকার কেমিক্যাল সোসাইটির সদস্য হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তিনি আমৃত্যু সংগঠন দুটির ফেলো ছিলেন।

টানা ৩৫ বছর জগন্নাথ কলেজে রসায়ন বিভাগে অধ্যাপনা করেছিলেন যোগেশচন্দ্র ঘোষ। এরপর দুই বছর তিনি কলেজটির অধ্যক্ষ ছিলেন। ১৯৪৮ সালে শিক্ষকতার চাকরি থেকে অবসর নেন তিনি।

আগেই বলেছি, ১৯১৪ সালে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সাধনা ঔষধালয়। প্রথম থেকেই তার আগ্রহ ছিল আয়ুর্বেদে। এক সময় তা নেশায় পরিণত হয়।

কেবল ঢাকা নয়, পুরো ভারতবর্ষেই একসময় আয়ুর্বেদী ওষুধের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান ছিল সাধনা ঔষধালয়। কলকাতা ও এর কাছাকাছি এলাকায় এক সময় পাঁচটি কারখানা ছিল সাধনার। প্রথমে কলকাতায় তাদের যাত্রা শুরু হয়েছিল দক্ষিণদাঁড়ি কারখানার মধ্য দিয়ে। তারপর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে একে একে লেকটাউন, টালিগঞ্জ, কাশীপুর ও বেলুড়ে কারখানা হয়।

এক সময় ভারতের নানা শহরে ছিল সাধনার দোকান। বিশেষ করে পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে বিহার ও আসামে সাধনার ওষুধের অনেক চাহিদা ছিল।

মীজানুর রহমান তার আত্মস্মৃতির বই ঢাকা পুরাণ এ ‘বৃত্তাবদ্ধ যীশু: যোগেশচন্দ্র’ অনুচ্ছেদে লিখেছেন, ‘সারা ভারত ও বিশ্বজুড়ে যাঁর প্রতিষ্ঠানের শাখা-প্রশাখা, নাম-যশ-খ্যাতি, সেকালের নিরিখে যিনি কোটিপতি, ঢলকো মলিন হেঁটো ঢুঁটি ও নিমে গাঁয়ে পয়া দোলাতে দোলাতে ৪০ পাওয়ারের আলোয় বিনে চশমায় কুল্যা ১০-১২ জন প্রশাসনিক কর্মী বাহিনী নিয়ে রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন এ ভাবতেও অবাক লাগে। কতো লোকের অন্ন সংস্থানের হেতু ছিলেন তিনি।’

কেবল কী মানুষ! না, কেবল মানুষ নয়, যেকোনো প্রাণের প্রতি তার ছিল গভীর মায়া। ১৯১৪ সালে যোগেশচন্দ্র ঘোষ বানরের বসবাসের জন্য একটি ঘর উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। বানরদের নিয়মমাফিক খাবার দিতেন। খাবার পেয়ে একসময় বানরের রাজত্ব শুরু হয় ঐ এলাকায়!

জীবনের একটাই ব্রত ছিল যোগেশচন্দ্র ঘোষের। তা হলো— মানবসেবা, জীবসেবা।

সাধনা ঔষধালয়ের ওষুধ ব্যবহার করতেন বিখ্যাত সব মানুষেরা। সাধনা’র জ্বরের ওষুধের অন্যতম ক্রেতা ছিলেন প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ওষুধ খেয়ে ফল পেয়ে যোগেশচন্দ্র ঘোষের ছেলে নরেশচন্দ্রকে ধন্যবাদ জানিয়ে চিঠিও লিখেছিলেন তিনি। ঢাকায় সাধনার কারখানায় এসেছিলেন নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু, আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, চিকিৎসক নীলরতন সরকারের মতো বিখ্যাত মানুষেরা।

যোগেশচন্দ্র ঘোষ বিয়ে করেছিলেন কিরণবালাকে। এক ছেলে ও দুই মেয়ে ছিল  তাদের। ছেলে নরেশচন্দ্র ছিলেন এমবিবিএস ডাক্তার ও বাবার যোগ্য উত্তরসূরি।

যোগেশচন্দ্র কেবল নানা ওষুধের ফর্মুলা আবিষ্কারই করেননি, তিনি লিখেছেন নানা রোগের চিকিৎসা ও আয়ুর্বেদের ইতিহাস নিয়ে বেশ কয়েকটি বই। লিখেছেন প্রবন্ধ-নিবন্ধও।

অগ্নিমান্দ্য ও কোষ্ঠাবদ্ধতা, আরোগ্যের পথ, গৃহ-চিকিৎসা, আমরা কোন পথে, আয়ুর্বেদ ইতিহাস, Whither Bound Are We, Home Treatment, Text Book of Organic Chemistry, Simple Geography ও Simple Arithmetic— তার লেখা বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

১৯৭১ সালের ভয়াল কালরাত্রি ২৫ মার্চে ঢাকাসহ দেশের নানা জায়গায় পৈশাচিক ও নিষ্ঠুর গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। সে রাতে নিজ ঘরেই ছিলেন যোগেশচন্দ্র ঘোষ। বৃদ্ধ লোক, পুরো বাড়িতে তিনি একাই যেন নিরাপত্তারক্ষী। পরদিন থেকে শুরু করে মার্চের শেষ পর্যন্ত পুরান ঢাকার সূত্রাপুর বলা চলে ফাঁকাই হয়ে গিয়েছিল। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা সবাই প্রাণের ভয়ে বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছিলেন। কেবল যাননি যোগেশচন্দ্র ঘোষ। অনেকে তাকে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, তিনি যেন কিছুদিন আত্মগোপনে থাকেন। পরিস্থিতি ঠিক না হলে বাইরে না বের হন।

কোথায় যাবেন তিনি! তিলতিল করে নিজের রক্ত আর ঘাম দিয়ে গড়ে তুলেছেন এই মহতী প্রতিষ্ঠান। কারাখানার অনেক কর্মীও ঢাকা ছেড়ে পালিয়েছেন। যারা ছিলেন তাদের দিয়েই কাজ করতেন এই কর্মপ্রাণ ঋষি মানুষটি। বেলা শেষে সব কর্মী যখন কারখানার কাজ শেষে আপন গন্তব্যে ফিরে যেতেন তখন কেবল থাকতেন সুরুজ ও রামপাল নামের দুই কর্মী। দীর্ঘ ১৭ বছর এরাই তার সঙ্গী ছিলেন। সবাই প্রাণের ভয়ে শহর ছেড়ে পালিয়েছেন, কিন্তু তারা আগলে রেখেছিলেন তাকে, না কি তিনিই আগলে রেখেছিলেন তাকে! তারাও একবার বলেছিলেন, ‘বাবু আপনি কিছুদিনের জন্য ঘুরে আসুন। দেশের এই অবস্থায় ভীষণ ভয় হয়!’

কিন্তু, তার একটাই কথা— এই দেশ, এই মাটি ছেড়ে কোথাও যাবেন না, কোথাও যেতে পারেন না। এই মাটি তার জন্মভূমি, এই দেশ তাকে এতকিছু দিয়েছে, অথচ তিনি কি না প্রাণের ভয়ে চলে যাবেন! তিনি জানিয়েছিলেন, এই দেশ ছেড়ে যাওয়া তার জন্য অসম্ভব।

মুক্তিযুদ্ধ শুরুর নয় দিন পেরিয়ে গেছে। সন্ধ্যা নামলে গোটা শহর যেন নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। এদিক-ওদিকে কেবল কুকুরের ডাক ছাড়া কোনো মানুষের অস্তিত্ব পাওয়া যায় না। চারদিকে কারফিউ আর দেশজুড়ে চলছে বাঙালি নিধনের ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞ।

৩ এপ্রিল রাতে কারখানার মূল গেইটে পাহারা দিচ্ছিল সুরুজ, ভূমি সিং, ইউসুফ মিস্ত্রি ও রামপাল। হঠাৎই মিলিটারির গাড়ি এসে থামল। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর পাঁচ-ছয়জন সদস্য নামল জিপ থেকে। সবার সঙ্গে ভারী অস্ত্র। একে একে ওরা ভাঙতে লাগলো কারখানার গেইটের তালা। তারপর ফাঁকা গুলি ছুঁড়ল কয়েক দফা। দোতলায় তখন যোগেশচন্দ্র ঘোষ কাজ করছেন। তিনি দ্রুত ওপর থেকে হাঁক দিয়ে বললেন, ‘কী হলো, কী হলোরে সুরুজ? ও ইউসুফ কী হলো?’ ততোক্ষণে সুরুজের বন্দুক গর্জে ওঠে, গর্জে ওঠে বাকি দুজনেরও। গুলি বিনিময়ের এক পর্যায়ে কায়দা করতে না পেরে জিপ নিয়ে চলে যায় সেনারা।

এর মধ্যে দ্বাররক্ষীরা যোগেশচন্দ্র ঘোষকে সরিয়ে নিতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়েন। তারা বলেন, আপনাকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাব। এখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ। ওরা আবার আসবে। কিন্তু, তিনি রাজি হলেন না। তিনি বললেন, এই মাটি ছেড়ে যাওয়া তার পক্ষে সম্ভব না। তিনি এখানেই থাকবেন।

৪ এপ্রিল সকাল সাতটা। আগের রাতের ভয়াবহ চিত্র সবার চোখে জ্বলজ্বল করছে। সেই মুহূর্তেই তারা আগের রাতের ঘটনাস্থলে যোগেশচন্দ্র ঘোষকে নিয়ে এসে দেখালেন কী হয়েছে।

কিন্তু, পরদিন সকালে হানাদারদের তিনটি গাড়ি এসে থামে কারখানার সামনে। গাড়ি ভর্তি সেনাদের দেখে অজানা আশঙ্কায় মন দুরু দুরু করে ওঠে সুরুজের। সঙ্গী-নিরাপত্তারক্ষী ও কর্মচারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। সেনারা সবাইকে লাইনে দাঁড় করিয়ে যোগেশচন্দ্র ঘোষকে নিয়ে যায় দোতালায়। এরপর তার সঙ্গে হানাদারদের কী কথা হয়েছে তা জানা যায়নি।

এ দিকে নিচে লাইনে দাঁড়ানো কর্মচারী ও দ্বাররক্ষীরা ভাবলো এইতো সুযোগ। প্রাণভয়ে ওরা সবাই পালাল। সেদিন নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচেছিল ওরা। কেবল একজন পালাননি, চেষ্টাও করেননি পালানোর। সাহসের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘আমিই যোগেশচন্দ্র ঘোষ।’

অনেকক্ষণ পর কারখানার কর্মচারীরা ফিরে আসেন। সেনারা যাওয়ার পর আশপাশের লোকেরা সংবাদ শুনে দেখতে এসেছিলেন। তারা দেখেন রান্নাঘরের মেঝেতে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষ। কয়েকটি বুলেট তার পিঠের বাম দিকে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়েছে। পাঁজরে বেয়নেটের আঘাতের কালশিটে দাগ। ঘরের গোটা মেঝেতে রক্তের ধারা অনেকটাই শুকিয়ে গেছে। তাকে হত্যার পর সমস্ত টাকা-পয়সা লুট করে নিয়ে গেছে হানাদারেরা। গেন্ডারিয়ার রাজাকার আর পাকিস্তানি হানাদারেরা সে জায়গা দখলে নিয়েছিল।

উপমহাদেশে আয়ুর্বেদী চিকিৎসার এই মহাপ্রাণ পথিকৃৎকে হত্যা করে তার নাম মুছে ফেলতে চেয়েছিল পাষণ্ড হানাদার, তাদের দোসর জামায়াতে ইসলামী ও এ দেশীয় রাজাকারেরা। কিন্তু পারেনি। মানুষের প্রতি যোগেশচন্দ্র ঘোষের যে অকৃত্রিম মমতা-ভালোবাসা ছিল, সেই চিরন্তর শক্তিই তাকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরও অমলিন করে রেখেছে। তিনি থাকবেন চিরকাল, থাকবেন সূর্যের মতো অম্লান হয়ে বাংলার বুকে চির প্রশান্তিতে ঘুমিয়ে। তিনি থাকবেন তার সৃষ্টিতে, তার দেশপ্রেম, মানুষের প্রতি ভালোবাসা আর মানবপ্রেমে।

১৯৭১ সালের আজকের দিন তথা ৪ এপ্রিলে আমরা হারিয়েছিলাম বাংলার সূর্য সন্তান কিংবদন্তি আয়ুর্বেদ বিশারদ ও শিক্ষাবিদ শহীদ বুদ্ধিজীবী অধ্যক্ষ যোগেশচন্দ্র ঘোষকে। তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।

তথ্যসূত্র: স্মৃতি ৭১/ রশিদ হায়দার সম্পাদিত, ঢাকা পুরাণ/ মীজানুর রহমান, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্র/ অষ্টম খণ্ড, সাধনা ঔষধালয়

আহমাদ ইশতিয়াক

[email protected]

আরও পড়ুন:

মেঘ ছাপিয়ে যাওয়া এক স্বপ্নবান স্থপতি ফজলুর রহমান খান

২ এপ্রিল ১৯৭১: জিঞ্জিরা গণহত্যা

স্রোতের বিপরীতে লড়াই করা এক আজন্ম সংগ্রামী পথিক

সাহিত্যে আবুল মনসুর আহমেদ আজও প্রাসঙ্গিক

এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবেটি কাঁকন হেনইঞ্চিতা

‘যদি চলেও যাই, কোনো আক্ষেপ নিয়ে যাব না’

২ মার্চ জাতীয় পতাকা দিবস

স্বাধীনতাই একমাত্র গন্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের: মওলানা ভাসানী

যার ওভারকোটের পকেট থেকে বেরিয়েছিল আধুনিক রুশ সাহিত্য আর সাহিত্যিকেরা

Comments

The Daily Star  | English

Floods cause Tk 14,421 crore damage in eastern Bangladesh: CPD study

The study highlighted that the damage represents 1.81 percent of the national budget for fiscal year (FY) 2024-25

2h ago