হেফাজতকে নিয়ে পোস্ট: পুলিশ উপস্থিতিতে ছাত্রলীগ নেতাকে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করে হেনস্থা

ঢাবি ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক আফজাল খান। ছবি: সংগৃহীত

হেফাজতে ইসলামের সমালোচনা করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি পোস্ট দেওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) এক ছাত্রলীগ নেতাকে হেনস্থার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

হেনস্থার শিকার সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলার মহেশপুর গ্রামের বাসিন্দা আফজাল খান (২৪) ঢাবির সমাজকল্যাণ বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী এবং ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপ-সম্পাদক।

গতকাল বিকেলে ধর্মপাশা উপজেলার জয়শ্রী বাজারে স্থানীয় জয়শ্রী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলমের ছেলে আল মুজাহিদের নেতৃত্বে তাকে হেনস্থা করা হয় এবং দুই ঘণ্টা স্থানীয় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আটকে রাখা হয় বলে আফজাল খানের অভিযোগ।

ছাত্রলীগ নেতা আফজাল খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘গত ২৯ মার্চ আমি ফেসবুকে “হেফাজতের আন্দোলন ধর্ম নিয়ে ব্যবসা” লিখে একটি পোস্ট দেই। এই পোস্টটাকে কেন্দ্র করে আল মুজাহিদ স্থানীয়ভাবে বিষয়টিকে নিয়ে একটা ধর্মীয় অনুভূতি তৈরি করে। মঙ্গলবার বিকেলে আমি জয়শ্রী বাজারে আসার পর মুজাহিদ অনেক মানুষ সঙ্গে নিয়ে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে আমি কেনো ওই পোস্ট দিয়েছি। বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে তারা আমাকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ অফিসে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে হেনস্থা করে।’

তিনি বলেন, ‘আটক অবস্থায় ঢাবি ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তারা সুনামগঞ্জ পুলিশকে জানায়। এরপরই থানা থেকে ফোর্স নিয়ে আসেন ওসি। তখন পুলিশের উপস্থিতিতেও আমাকে হেনস্থা করা হয়।’

‘এ সময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ও যুবলীগ নেতা এনায়েত (ধর্মপাশা যুবলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক) পুলিশকে চাপ দিলে আমাকে হাতকড়া পরানো হয়। তাদের উপস্থিতিতেই প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয় আমাকে,’ বলেন আফজাল।

ছাত্রলীগের এই নেতা বলেন, ‘পুলিশ কোনোকিছুই শুনতে চায়নি। সেখান থেকে হাতকড়া পরা অবস্থায় আমাকে নিয়ে বের হওয়ার পর মাঝরাস্তায় আমার হাতকড়া খুলে দেয়। পরে থানায় এসে সব শুনে লিখিত একটা বিবৃতি রেখে ছেড়ে দেয়।’

‘এ ঘটনায় আমি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি,’ বলেন তিনি।

আফজাল খান জানান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম আলম ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামীর ইউনিয়ন সহসভাপতি ছিলেন। আওয়ামী লীগের স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের আত্মীয় হিসেবে পরে ক্ষমতায় আসার পর তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক হন।

এ বিষয়ে আল মুজাহিদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘সে (আফজাল) ফেসবুকে ‘ধর্ম নামে ব্যবসা’ লিখে স্ট্যাটাস দেওয়ার পর এলাকার মুসলিম জনতা ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ সবাই ক্ষিপ্ত হয় এবং প্রতিশোধ নেওয়ার কথা ভাবে। তখন আমি সবাইকে বোঝাই যে সে যেহেতু আমাদেরই সঙ্গের লোক, ভুল করেছে, তাকে আমি বুঝিয়ে বলব। পরে আমি তাকে বাজারে আসতে বললে সে আসে।’

মুজাহিদ বলেন, ‘তাকে আমি বলি যে মুসলমান হয়ে এই কাজটা করা ঠিক হয়নি। তখন সে ধর্ম নিয়ে আরও কটুক্তি করে। তখন উপস্থিত সবাই ক্ষিপ্ত হলে তাকে বাঁচাতেই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে নিয়ে রাখি। পুলিশ আসার পর তারা সবাইকে আশ্বস্ত করে তাকে (আফজাল) দিয়ে ক্ষমা চাইয়ে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যায়।’

এ দিকে এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন ঢাবি ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন।

আজ বুধবার এক যৌথ বিবৃতিতে তারা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সবার বিচারের দাবি জানান।

যোগাযোগ করা হলে ধর্মপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দেলোয়ার হোসেন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘মামলা হলে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের চাপে আফজালকে হাতকড়া পরানোর বিষয়ে জানতে চাওয়ার আগেই তিনি কল কেটে দেন এবং পরবর্তীতে তার মোবাইল নাম্বারে কয়েকবার চেষ্টা করেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।

এ বিষয়ে সুনামগঞ্জের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘রাতে তাকে আটকে রাখা অবস্থায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ সভাপতি আমার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আমরা দ্রুত ফোর্স পাঠিয়ে তাকে উদ্ধার করি। সার্বিক বিষয় আমরা তদন্ত করে দেখছি।’

এ ঘটনায় ধর্মপাশা থানার এসআই জহিরুল ইসলাম ও এএসআই আনোয়ার হোসেনকে সুনামগঞ্জ পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানা গেলেও বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান।

‘বিভাগীয় সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আপনাকে কেনো বলব?’ বলে ফোন রেখে দেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
rooppur-nuclear-power-plant

Rooppur payment: Govt to seek US sanction waiver

As much as $900 million has been on hold since 2022 in the central bank's escrow account

16h ago