সেতারের একচ্ছত্র সম্রাট পণ্ডিত রবিশঙ্কর
সত্যজিৎ রায় একবার বলেছিলেন, ‘রবিশঙ্করের সেতার, বিসমিল্লাহ খানের সানাই আর আল্লারাখা খানের তবলা যে শুনেনি ভারতবর্ষে সঙ্গীতের সুধাই তো তার পক্ষে পাওয়া সম্ভব না।’ এই তিন শিল্পীর মধ্যে প্রথম দুজনের জন্ম আবার একই শহর- বারাণসীতে।
ভারতীয় শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ঐতিহ্য আর ভারতীয় সঙ্গীতকে যিনি পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সারা বিশ্বে। সেতারকে যিনি নিয়ে গেছেন যন্ত্র সঙ্গীতের ইতিহাসের নতুন এক দিগন্তে, যিনি পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মেলবন্ধনে সৃষ্টি করেছেন এক নতুন জাগরণের, সৃষ্টি করেছেন এক বিপ্লবের, তিনি সেতার সম্রাট রবি শঙ্কর।
রবির জন্ম বারাণসীতে ১৯২০ সালের ৭ এপ্রিল। তাদের আদি পৈত্রিক বাড়ি ছিল অবশ্য পূর্ব বাংলার যশোরের নড়াইল মহকুমার কালিয়ায়। তারপর তার বাবা একসময় নড়াইল ছেড়ে চলে গেলেন বারাণসীতে। রবিশঙ্কর তার বাবাকে প্রথম দেখে তার আট বছর বয়সে। লন্ডনে ব্যারিস্টারি পড়া উকিল বাবা রবিশঙ্করের জন্মের কয়েক মাস আগেই চলে গিয়েছিলেন বিলেতে। বস্তুত একরকম দারিদ্র্যের মধ্যেই মা হেমাঙ্গিনীই বড় করতে লাগলেন তাকে। বড় ভাই উদয় শঙ্কর তখন নাচের জন্য প্যারিসে। খানিকটা অভাবের সংসারে বাবার টাকার অপেক্ষায় থাকতে হতো মাসের পর মাস। শৈশব থেকেই ছোট্ট রবির নাচের প্রতি আলাদা ঝোঁক। এরপর বড় ভাইয়ের ডাক। ১৯৩০-এ মায়ের সাথে প্যারিসে বড় ভাইয়ের কাছে গেল রবীন্দ্র শঙ্কর চৌধুরী। সেখানেই পরবর্তীতে স্কুলে ভর্তি হল রবি শঙ্কর। ১২ বছর বয়স থেকে বড় ভাইয়ের নাচের দলে একক নৃত্যশিল্পী হয়ে রইলেন। তার নৃত্যে মুগ্ধ খোদ বড় ভাইও। নাচ দেখতে আসা অনেকে জিজ্ঞেস করতো এই অসামান্য ছেলেটি কে। তখন থেকেই পাশ্চাত্য ধারার একটি মিশ্রণ পরবর্তী জীবনে এসেছিল তার মধ্যে।
১৯৩৪ সালে প্যারিস গিয়েছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের কিংবদন্তী সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ। সেখানেই রবি শঙ্করের প্রথম দেখা ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁয়ের সঙ্গে। আলাউদ্দিন খাঁ ছিলেন পরিপূর্ণ সঙ্গীতজ্ঞ। তিনি একাধারে সরোদ, সেতার, সানাই, সাক্সোফোন, বেহালা, ট্রাম্পেট, বাঁশি সবই বাজাতে পারতেন। রবিশঙ্কর তার প্রতি প্রচণ্ড মুগ্ধ হয়ে শিষ্য হলেন তার। তখন নাচ আর সরোদের মধ্যে মুগ্ধতায় ডুবে আছেন রবি শঙ্কর।
১৯৩৮ সালে রবি শঙ্কর চলে এলেন কলকাতায়। কলকাতার এক উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অনুষ্ঠানে সেতার বাজাচ্ছিলেন পণ্ডিত অমিয়কান্তি ভট্টাচার্য। তিনি মুগ্ধ হয়ে সেতার শুনেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন সেতারই হবে তার পথচলা। শিখবেন তিনি পণ্ডিত অমিয়কান্তি ভট্টাচার্যের গুরু ওস্তাদ এনায়েত খাঁর কাছেই। এনায়েত খাঁয়ের কাছেই প্রথম সেতারে হাতেখড়ি হলো রবি শঙ্করের। বয়স তখন তার আঠারো বছর। বড় ভাই উদয় শংকরের নাচের দল ছেড়ে তিনি এনায়েত খাঁয়ের কাছে। কিন্তু বড় ভাইয়ের ডাক আবার। তবে কি লক্ষ্য স্থির? তিনি বললেন, সেতারই তার একমাত্র সঙ্গী হবে। এনায়েত খাঁয়ের কাছে কয়েক মাস শেখার পর এনায়েত খাঁ শিষ্যের আগ্রহ দেখে বললেন, তিনি যেন মাইহারে আলাউদ্দিন খাঁয়ের কাছে চলে যান। তিনিই গুরু হিসেবে ভারত বর্ষে সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তি। আলাউদ্দিন খাঁকে প্যারিসে একবার দেখেছিলেন রবি শঙ্কর। শিষ্যও হয়েছিলেন তার। কিন্তু একসময় তো তিনি ভারতে ফিরে গেলেন। এবার যেন প্রবল উদ্যম ফিরে পেলেন রবি শঙ্কর। মাইহার গেলেন। দীক্ষা নিলেন ফের আলাউদ্দিন খাঁয়ের চরণে। আলাউদ্দিন খাঁয়ের পরিবারকে বলে ভারতীয় সঙ্গীত ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিবার। কেবল ভারত নয়, পুরো বিশ্বেই এমন কিংবদন্তীপূর্ণ সঙ্গীত পরিবারের জন্ম হয়নি আর। তাদের এক পরিবারেই সঙ্গীতজ্ঞ হয়েছিলেন পরবর্তীতে চল্লিশ জনের বেশি। এখানে এসেই পণ্ডিত রবি শঙ্কর দেখতে পেলেন এই পরিবারের আত্মায়, প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে সঙ্গীত। বিশেষ করে আলাউদ্দিন খাঁয়ের পুত্র কিংবদন্তী সরোদ বাদক ওস্তাদ আলী আকবর খাঁয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়ে গেল তার। গুরুগৃহে রবি শঙ্কর ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৪৪ সাল এই সাত বছর সেতারে তালিম নিলেন। এর মধ্যে ১৯৩৯ সালে ভারতের আহমেদাবাদে আয়োজন করা হয় উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের আসরের। সেই সর্বপ্রথম রবিশঙ্কর সর্বসাধারণের সামনে উন্মুক্ত একক সেতার পরিবেশন করলেন। সেদিনের তার সেই আসর প্রমাণ করেছিল ভারতীয় সঙ্গীতের আকাশে নতুন এক নক্ষত্রের আগমন ঘটছে।
এর দুই বছরের মধ্যেই ১৯৪১ সালের ১৫ মে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁয়ের মেয়ে বিদুষীনি অন্নপূর্ণা দেবীর সঙ্গে বিয়ে হয় পণ্ডিত রবিশঙ্করের। বিয়ের সময় অন্নপূর্ণার বয়স ছিল ১৪ এবং রবিশঙ্করের বয়স ছিল ২১। ১৯৪২ সালের ৩০ মার্চ তাদের সংসারে জন্ম নেয় ছেলে শুভেন্দ্র শঙ্করের। জন্মের আট সপ্তাহের মধ্যে একটি জটিল রোগ ধরা পড়ে তার। অন্ত্রের নালিতে ভীষণ ব্যথা হতো তার। মাসখানেকের মধ্যেই অবশ্য সেরে উঠেছিল সে। কিন্তু দেখা দেয় এক নতুন উপসর্গ। সারা রাত কাঁদত সে।
রবিশঙ্কর তার আত্মজীবনীতে লিখেছিলেন, রোজ ১০ ঘণ্টার বেশি সেতার সাধনার পর এই কাঁদুনে শিশুকে নিয়ে সারা রাত জেগে থাকার বিড়ম্বনা থেকেই তাদের দাম্পত্য জীবনের প্রথম টানাপড়েন শুরু হয়। রবিশঙ্কর লিখেছেন, ‘এ সমস্যার কারণে রাত-জাগা অভ্যাস হয়ে গেল শুভর। এটা এক বছর বা তারও বেশি সময় ধরে চলল। খেয়াল করলাম, অন্নপূর্ণার ব্যক্তিত্ব দিন দিন বদলে যাচ্ছে। আমাদের দুজনেরই শক্তি ক্ষয় হচ্ছিল খুব। মেজাজ বিগড়ে যাচ্ছিল আমাদের দুজনেরই। ওই সময়টাতে তুচ্ছ কারণে আমার মেজাজ বিগড়ে যেত। দুজনে একসঙ্গে রেগে উঠতাম।
তাদের দাম্পত্য-সংকট চরমে পৌঁছাল যখন অন্নপূর্ণা আবিষ্কার করলেন, নৃত্যশিল্পী কমলা শাস্ত্রীর সঙ্গে রবিশঙ্করের প্রেম চলছে। মর্মাহত অন্নপূর্ণা বোম্বে থেকে ছেলে শুভকে নিয়ে মাইহারে বাবার বাড়িতে চলে যান। চিত্র পরিচালক অমিয় চক্রবর্তীর সঙ্গে কমলার বিয়ে হওয়ার পর তিনি বোম্বেতে ফিরেছিলেন। কিন্তু রবিশঙ্করের সঙ্গে তার সম্পর্ক আর কখনো স্বাভাবিক হয়নি।
যাই হোক, ১৯৪৪ সালে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁয়ের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রবি শঙ্কর চলে যান বোম্বাইতে। সেখানে তিনি ইন্ডিয়ান পিপলস থিয়েটারে কাজ শুরু করেন। ২ বছর কাজ করার পর অল ইন্ডিয়া রেডিও স্টেশনে সঙ্গীত পরিচালকের পদে কাজ করতে শুরু করেন রবিশঙ্কর। এই রেডিও স্টেশনের হয়ে কাজ করার সময়েই রবিশঙ্কর অর্কেস্ট্রার জন্য সঙ্গীত রচনা শুরু করেছিলেন। এর মধ্যে ছিল সেতার বাদনের সুরও। ১৯৫৪ সাল থেকে রবিশঙ্কর বিশ্বব্যাপী সঙ্গীত নিয়ে ঘুরে বেড়ান যুক্তরাষ্ট্র, সোভিয়েত ইউনিয়নসহ বিশ্বের নানান দেশে। একই সময়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বৈদ্য বৃন্দ চেম্বার অর্কেষ্ট্রা। ১৯৫০ সাল থেকে ১৯৫৫ সাল এই পাঁচ বছরের সময়টাকে বলা যায় রবি শঙ্করের জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। এই সময়টাতেই সত্যজিৎ রায়ের বিখ্যাত পথের পাঁচালি, অপরাজিত চলচ্চিত্রে সঙ্গীতে কাজ করলেন রবিশঙ্কর। সত্যজিতের সঙ্গে রবিশঙ্করের আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও এই দুই উপন্যাসের ঔপন্যাসিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তা সশরীরে নয়, অক্ষরের মাধ্যমে। পথের পাঁচালিতে বাংলার সুর, গ্রামের সুর দেবেন রবিশঙ্কর, এমনটাই শুরু থেকে তার মাথায় ছিল।
রবিশঙ্কর তখন এক বন্ধুর বাড়িতে গিয়ে উঠেছেন। সেখানেই চলে যান সত্যজিৎ। ততদিনে চলচ্চিত্রের কিছু কাজ করে ফেলেছেন রবিশঙ্কর। সঙ্গীতের মধ্যেই যেন থাকেন সবসময়। ঘরে ঢোকার পর সত্যজিৎকে সরাসরি বললেন, ‘তোমার সিনেমার একটি সঙ্গীত রূপ ভেবে রেখেছি।’ বলার পরই একটি সুর শোনাতে আরম্ভ করলেন। সত্যজিৎ তো অভিভূত! ঠিক এমনটাই তো চাইছিলেন ‘পথের পাঁচালী’র জন্য। পুরো চলচ্চিত্রে কোথায় কোথায় সঙ্গীত থাকবে, সেটাও একবার দেখিয়ে নিতে হবে। তারপর মহড়া, রেকর্ডিং ও শেষে এডিটিং। এর কিছুদিন পরে ইহুদি মেনোউইন নামের যুক্তরাষ্ট্রের এক বেহালা বাদকের সাথে মিলে গান লেখেন রবিশঙ্কর। তারপর তারা একাধারে বিভিন্ন কনসার্টে বাজাতে শুরু করেন। একসময় এই দুজনের গ্র্যামি জয়ী অ্যালবাম বের হয়েছিল। তখন খুব দ্রুত রবিশঙ্করের জনপ্রিয়তা বাড়ছিল পশ্চিমা বিশ্বে। এই দুটো অ্যালবামই মূলত মূল ভূমিকা পালন করেছিল। সেই সঙ্গে সেতারে নতুন এক ধারা গড়ে নেন রবিশঙ্কর। নিজেকে সাধারণ সেতার বাদক থেকে আমূল পরিবর্তন করে নেন। ষাটের দশকের শেষভাগে বিখ্যাত গিটারিস্ট জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে পরিচয় হয় রবিশঙ্করের। জর্জ হ্যারিসন তখন বিখ্যাত ব্যান্ড দ্য বিটলসের সদস্য। কিছুদিনের মধ্যে দুজনের মধ্যে দারুণ বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। একটা সময় জর্জ হ্যারিসন রবি শঙ্করের প্রযোজকও হয়েছিলেন। এর মধ্যে জর্জ হ্যারিসন সেতারে তালিম নেন রবি শঙ্করের কাছে। বিটলসের বিখ্যাত গান নরওয়েজিয়ান উডস গানে সেতার বাজিয়েছিলেন রবিশঙ্কর। রবিশঙ্করের সেতারে মুগ্ধ হয়ে বিটলসের কিছু গানে খানিকটা পরিবর্তনও এসেছিল। হ্যারিসন রবিশঙ্করকে বলেছিলেন "গডফাদার অব ওয়ার্ল্ড মিউজিক।"
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে শুরু হলো মুক্তিযুদ্ধ। রবিশঙ্কর তখন যুক্তরাষ্ট্রে। তার কানেও খবর গেল যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের। রবিশঙ্কর ভাবতে লাগলেন বাংলাদেশের অসহায় দুর্গতদের কীভাবে সাহায্য করবেন। তারপর তিনি আলোচনা করলেন জর্জ হ্যারিসনের সঙ্গে। দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলেন কনসার্ট করা যায়। হ্যারিসন এগিয়ে আসেন এবং উদ্যোগী হয়ে অন্য শিল্পীদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেন।
একাত্তরের পহেলা আগস্ট। দিনটি ছিল রবিবার।নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ার গার্ডেনে প্রায় সমাবেত হয়েছিল ৪০ হাজারের বেশি মানুষ। রবিশঙ্করের আমন্ত্রণে সেদিন বিশ্ববিখ্যাত সঙ্গীতশিল্পীদের এক বিশাল দল অংশ নিয়েছিলেন। যাদের মধ্যে বব ডিলান, এরিক ক্ল্যাপটন, জর্জ হ্যারিসন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার এবং রিঙ্গো রকস্টারের মতো কিংবদন্তি শিল্পীরা ছিলেন। এই কনসার্ট ও অন্যান্য দান থেক প্রাপ্ত অর্থ সাহায্যের পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৪৩ হাজার ডলার। যা ইউনিসেফকে তুলে দেয়া হয়েছিল বাংলাদেশি শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য। দ্য কনসার্ট ফর বাংলাদেশ’ শুরু হয়েছিল পণ্ডিত রবিশঙ্করের একটি সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দিয়ে। এ কনসার্টের জন্য তিনি তৈরি করেছিলেন ‘বাংলাদেশ ধুন’ বলে নতুন একটি সুর। আর তার সঙ্গে সরোদে যুগলবন্দী ছিলেন ওস্তাদ আলী আকবর খান। তবলায় সহযোগিতা করেছিলেন বিখ্যাত আল্লারাখা। তানপুরায় ছিলেন কমলা চক্রবর্তী। সেদিন ম্যাডিসন স্কয়ারের অনুষ্ঠানের অন্যতম আকর্ষণ ছিল প্রতিবাদী গানের রাজা বব ডিলান। তিনি গেয়েছিলেন ছয়টি গান, ‘মি. ট্যাম্বুরিনম্যান’ থেকে শুরু করে তার লেখা ও সুরারোপিত ৫০ লাইনের বিখ্যাত গান ‘আ হার্ড রেইন ইজ গোনা ফল’।
পণ্ডিত রবিশঙ্করের অমর কীর্তি পাশ্চাত্য ও প্রতীচ্যের সঙ্গীতের মিলন। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের বিখ্যাত বেহালা বাদক ইহুদি মেনুহিনের সঙ্গে সেতার আর বেহালার যৌথ বাদন ছিল এক অমর সৃষ্টি। বিখ্যাত বাঁশিবাদক জ্যঁ পিয়েরে রামপাল, বিখ্যাত জাপানি বংশীবাদক হোসান ইয়ামামাটো এবং ঐতিহ্যবাহী জাপানি যন্ত্র সঙ্গীত কোটো' বাদক প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ মুসুমি মিয়াশিতার সঙ্গে তার সেতার ও বাঁশি, কোটোর যৌথ বাদন। বিভিন্ন দেশের নানান যন্ত্র সঙ্গীতের সংমিশ্রণের ফলে সঙ্গীতের ধারায় যে সৃষ্টির নান্দনিকতা ও নতুন ধারার জন্ম দিয়েছেন তা লেখা থাকবে চির ভাস্বর হয়ে। ১৯৯০ সালে বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ফিলিপ গ্রাসের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনা প্যাসেজেস এক অসামান্য সৃষ্টি। কিংবা ২০০৪ সালে ফিলিপ গ্রাসের ওরিয়নের সেতার অংশের জন্য তার সেতার বাদন পরিচয় করিয়ে দেবে ৮৪ বছর বয়সেও তিনি কতোটা সঙ্গীতের প্রতি ত্যাগী ছিলেন। তাইতো ফিলিপ গ্রাস বলেছিলেন, ‘রবিশঙ্করের কাছে আমার অনেক ঋণ। তিনি ছিলেন আমার শিক্ষকদের একজন। যার কাছ থেকে আমি প্রতিনিয়ত শিখেছি।’
তাইতো রবি শঙ্কর লিখেছিলেন, ‘যে সঙ্গীত আমি শিখেছি এবং নিজে করছি, এটা প্রভুকে উপাসনা করার মতো। আমার কাছে একটা বাদ্যযন্ত্র দেবতার মতো সম্মান পায়। আমি আমার রচনা করা সঙ্গীতকে আধ্যাত্মিক গুণ দেয়ার চেষ্টা করি, যাতে করে আপনি বুঝে উঠার আগেই সঙ্গীত আপনার আত্মার সাথে গভীর আত্মিক সম্পর্ক স্থাপন করে। এটাই সঙ্গীতের মূল দায়িত্ব।’
আজ কিংবদন্তী সেতার বাদক সঙ্গীতজ্ঞ রবিশঙ্করের ১০১ তম জন্মদিন। তার প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
তথ্যসূত্র -
মাই মিউজিক মাই লাইফ- পণ্ডিত রবিশঙ্কর।
ইন্ডিয়ান সানঃ দ্যা লাইফ এন্ড মিউজিক অব রবিশঙ্কর/ অলিভার ক্রাস্কি
Satyajit Rays Ravi Shankar : An Unfilmed Visual Script
আহমাদ ইশতিয়াক [email protected]
আরও পড়ুন-
সাহিত্যে আবুল মনসুর আহমেদ আজও প্রাসঙ্গিক
মেঘ ছাপিয়ে যাওয়া এক স্বপ্নবান স্থপতি ফজলুর রহমান খান
এক দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিবেটি কাঁকন হেনইঞ্চিতা
‘যদি চলেও যাই, কোনো আক্ষেপ নিয়ে যাব না’
স্বাধীনতাই একমাত্র গন্তব্য পূর্ব পাকিস্তানের: মওলানা ভাসানী
যার ওভারকোটের পকেট থেকে বেরিয়েছিল আধুনিক রুশ সাহিত্য আর সাহিত্যিকেরা
Comments